‘শত বছরে’ শিরোনামে এই প্রদর্শণীতে আছে ১৯০৯ সালের ছবিও
বান্দরবানে শত বছরের পুরনো ছবি নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শণী

বান্দরবান রাজার মাঠে দৃক আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শণী। ছবি: উসিথোয়াই মারমা

বান্দরবানের রাজার মাঠে শুরু হয়েছে চার দিনব্যাপী ‘শত বছরে’ শিরোনামের একটি বিশেষ আলোকচিত্র প্রদর্শনী। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টায় এই আয়োজনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী ও দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা ড. শহিদুল আলম।

নিজ চোখে নিজ ভূমিতে—প্রতিপাদ্য নিয়ে আয়োজিত এই প্রদর্শণীর উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, “আলোকচিত্রীরা কেবল ছবি তোলেন না, তারা ইতিহাস রচনা ও সংরক্ষণের দায়িত্বও পালন করেন। শুধু দৃশ্য নয়, সময়, স্মৃতি ও সংস্কৃতি ধরে রাখাই তাদের কাজ। উন্নত বিশ্বে ছবি গবেষণা ও সংরক্ষণের কাজটি জাদুঘর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে হয়। আমাদেরও এখন সেই পথে অগ্রসর হওয়া জরুরি।”

প্রদর্শনীটি আয়োজন করেছে দৃক গ্যালারি। এখানে স্থান পেয়েছে ১৯০৯ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বান্দরবানের ইতিহাসকে ধারণ করা ১০৩টি ছবি। এসব ছবি তুলেছেন ৮ জন স্থানীয় আদিবাসী আলোকচিত্রী—মংঙোয়ে প্রু, বুদ্ধজ্যোতি চাকমা, চ থুই প্রু মারমা, নু শৈ প্রু, চিন্ময় মুরং, চিংশোয়েপ্রু (বাচিং), মং শৈ ম্রাই এবং মংবোওয়াচিং মারমা।

প্রদর্শনী ঘুরে দেখে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও শখের আলোকচিত্রী আমির হোসেন মাসুম বলেন, “বান্দরবানকে এতদিন শুধু পর্যটনের চোখে দেখেছি। আজকের এই প্রদর্শনী দেখিয়ে দিল—এখানকার সংস্কৃতির ঐতিহ্য কত গভীর। ১৯০৯ সালের মতো সময়েও এখানকার মানুষের ছবি সংরক্ষিত ছিল—এটা বিস্ময়কর।”

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক নুক্রাচিং মারমা বলেন, “ব্রিটিশ শাসনামলের রাজপরিবারের ছবি দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছি। জন্মের বহু আগের সময়ের চিত্র দেখতে পাওয়া এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এই ছবিগুলো পাহাড়িদের শান্তিপূর্ণ অতীত জীবনের সাক্ষ্য বহন করে।”

রাজপুত্র ও আলোকচিত্রী নু শৈ প্রু স্মৃতিচারণ করে বলেন, “১৯৮০-এর দশকে শখ করে ছবি তুলতাম। সেল্ফ-টাইমারে তোলা সেসব ছবি আজ ঐতিহাসিক দলিল। ছবির গুরুত্ব তখন বুঝিনি বলে অনেক সময় ও স্থান সংরক্ষণ করা হয়নি। আমার তোলা ১৯০৯ সালের রাজপরিবারের একটি ছবি এখন এই প্রদর্শনীর সবচেয়ে পুরোনো দলিল।”

১৪তম রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্য মংঙোয়েপ্রু বলেন, “অনেক মূল্যবান ছবি সময়মতো সংরক্ষণ না করায় হারিয়ে গেছে। ছবির প্রেক্ষাপট ভুলে গেছি। তখন এগুলোর গুরুত্ব বুঝিনি। সংরক্ষণ করা গেলে আরও ঐতিহাসিক তথ্য যুক্ত হতো।”

প্রদর্শনী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নৃবিজ্ঞানী অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী আমিনুর রমমান এবং শিক্ষক ও গবেষক ক্য শৈ প্রু খোকা।

এই প্রদর্শনী ১৬ মে পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

শেয়ার করুন