বান্দরবানে দিন দিন আবর্জনা সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে: ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল

বান্দরবান পৌর শহরের উন্নয়নে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত আলোচনা সভা।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও পর্যাপ্ত আবর্জনা ব্যবস্থাপনা না থাকায় দিনে দিনে অপরূপ নগরী বান্দরবান আবর্জনার নগরীতে পরিণত হচ্ছে। এতে জনসাধারণের দুর্ভোগও বাড়ছে। এছাড়া শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না হওয়া ও ময়লা-আবর্জনা ড্রেনে ফেলার কারণে পানি চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়ে শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। যার কারণে মশার উপদ্রব ব্যাপক হরে বৃদ্ধি পেয়েছে।

‘বান্দরবান পৌরসভাকে আধুনিক ও পরিচ্ছন্ন পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় আলোচকরা এসব সমস্যা তুলে ধরেন। ২০ মে সোমবার বান্দরবান পৌরসভা মিলনায়তনে এই আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন বান্দরবান পৌরসভার মেয়র ইসলাম বেবী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বান্দরবান জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট আবুল কালাম, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমদাদ উল্লাহ, প্যানেল মেয়র দিলীপ বড়–য়া, কাউন্সিলর সালেহা বেগম, হাবিবুর রহমান খোকন, পৌর সচিব তৌহিদুল ইসলাম, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চট্টগ্রাম রিজিওনাল ম্যানেজার মোঃ সদরুল আমিন, রাজনৈতিক ফেলো শহীদুল ইসলামসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা।

মত বিনিময় সভার শুরুতে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল বান্দরবানের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজনৈতিক ফেলো শহীদুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন- বান্দরবান পৌরসভা বান্দরবান পার্বত্য জেলার প্রাণকেন্দ্র ও দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী। ১৯৮৪ সালে ২৫.৮৮ বর্গ কিলোমিটার নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এই পৌরসভা ২০০১ সালে ‘ক’ শ্রেনীর পৌরসভায় উন্নীত হয়। অনন্য সুন্দর পাহাড়ি নদী সাংগুর অপার সৌন্দর্য্য ও সবুজ পাহাড়ে ঘেরা বান্দরবান পৌরসভা।

পৌর বাজারের অলিগলি, কেয়াং এর মোড়, নিউ গুলশান এলাকা, কালাঘাটা বাজার, বালাঘাটা বাজার, বাসষ্টেশন, বান্দরবান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের উত্তর পাশে রাস্তার মোড়ে, নতুন ব্রীজর পাশে, সাঙ্গু ব্রীজের পাশে, ক্যাচিং ঘাটা, জেলা মাতৃমঙ্গল অফিসের পাশে, মার্মা বাজার মেইন মোড়ে, রুমা বাস ষ্টেশন, মাইক্রোবাস-জীপ স্ট্যান্ড, রোয়াংছড়ি বাসষ্টেশন, বাজার মসজিদের সামনে, জজকোর্ট এর সামনে ও শহরের অভ্যন্তরে স্কুল গুলোর সামনে পর্যাপ্ত পরিমানের ডাষ্টবিন না থাকার কারণে প্রায় সময় ময়লা-আবর্জনা রাস্তার মধ্যে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

নগরে পর্যাপ্ত ডাস্টবিনের অভাব, সময়মত আবর্জনা পরিষ্কার না করা, যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলা ও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে দিন দিন আবর্জনা সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। ময়লা-আবর্জনার কারণে স্থানীয় জনসাধারণ প্রতিনিয়ত নানা স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, যার অধিকাংশ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে আসা পর্যটকরাও নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, যা এই পর্যটন নগরীর মর্যাদা ক্ষুন্ন করছে।

এই সমস্যা থেকে উত্তরণে নগরীর বাসষ্টেশন, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার সামনে, কালাঘাটা বাজার, বালাঘাটা বাজার, কেয়াং এর মোড়, মার্মা বাজার, ক্যাচিং ঘাটা, হাফেজ ঘোনা ও নিউগুলশান এলাকায় স্থায়ীভাবে পাকা ডাষ্টবিন স্থাপনে পৌর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়েছে। সেই সাথে নগরীর প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হোটেল-মোটেলসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহে নিজস্ব ডাস্টবিন স্থাপন করা ও নিয়মিত আবর্জনা পরিষ্কার করার দাবি জানানো হয়েছে।

প্রধান অতিথি পৌর মেয়র তার বক্তব্যে বলেন, আসলে আমরা স্বইচ্ছা নিয়ে নিজেদের শহর পরিস্কার রাখা সম্ভব। আমরা কেউ আর এই শহর ময়লা করব না, সকলেই উচ্ছিষ্ট ময়লা গুলো ডাষ্টবিনে ফেলব। তাহলেই আমরা বান্দরবান শহরকে পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।

বিশেষ অতিথি জেলা বারের সভাপতি বলেন, বাজার ফান্ড নামক একটি সংস্থাও পৌরসভায় ময়লা আবর্জনা পরিস্কারের কাজ করে থাকে। পৌরসভার সাথে সমন্বয় করে কাজ করা হলে আরো উন্নতি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। পৌর সচিব তৌহিদুল ইসলাম বলেন, যুগের পরিবর্তন হয়েছে, বর্তমান সরকারের আমলে দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কর্মজীবীদের উন্নয়ন হয়েছে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর লোকজন শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে। এখন সুইপারের ছেলে মেয়েরা শহর পরিস্কারের কাজ করতে চায় না। তাই এই কাজে লোকবলেরও অভাব হয়েছে।

মত বিনিময় সভা শুরুর আগে থেকেই পৌর এলাকার ভূক্তভোগী জনগণের মতামত সংগ্রহে শহরে গণস্বাক্ষর অভিযান করে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল। আবর্জনা সমস্যা সমধানের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সংগৃহীত স্বাক্ষর সম্বলিত একটি আবেদনপত্র পৌর মেয়র বরাবরে প্রদান করা হয়েছিল এবং আবেদনের অনুলিপি বান্দরবান জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবরে প্রদান করা হয়েছিল।

শেয়ার করুন