বান্দরবানে চুরির অভিযোগে দুই যুবককে শারিরীক নির্যাতনের পর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ওই নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে জেলায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
নির্যাতনের শিকাররা হলেন—তাজউদ্দীন (২৪) ও উহ্লামং মারমা। তাঁরা বান্দরবান সদর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের গোয়ালিয়াখোলা এলাকার বাসিন্দা।
অভিযুক্ত ব্যক্তি হলেন সদর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ অক্টোবর রাতে গোয়ালিয়া খোলা এলাকায় এক চুরির ঘটনায় তাজউদ্দীন ও উহ্লামংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। পরদিন (২৭ অক্টোবর) শালিসি বৈঠকের কথা বলে তাঁদের ডেকে নেওয়া হয় বান্দরবান সদর ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের রোয়াজা পাড়া এলাকার চিংনু মং মারমার চায়ের দোকানে।
সেখানে পৌঁছেই তাঁদের হাত পিছমোড়া বেঁধে নির্মমভাবে মারধর করা হয়। ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে—চুলের মুঠি ধরে পেটানো হচ্ছে, আর্তচিৎকারে ভারী হয়ে উঠছে আশপাশের পরিবেশ। একপর্যায়ে মেম্বার শহীদুল ইসলামকে হাতে প্লাস নিয়ে তাজউদ্দীনের নখ তোলার চেষ্টা করতেও দেখা যায়।
নির্যাতনের সময় অন্তত দুইবার জ্ঞান হারান তাজউদ্দীন। পরে আবারও তাঁকে মারধর করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়।
নির্যাতনের শিকার তাজউদ্দীনের পিতা আহমদ হোসেন বলেন, “আমার ছেলে সহজ-সরল প্রকৃতির। পূর্বশত্রুতার জেরে মিথ্যা চুরির অভিযোগ তুলে মেম্বার শহীদুল ইসলামসহ কয়েকজন আওয়ামী দোসর তাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছে। আমরা সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।”
বান্দরবান চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আইনজীবী আনোয়ার হোসেন বলেন, “কোনো ইউপি সদস্যের আইনগত অধিকার নেই কাউকে এভাবে ডেকে এনে শারীরিক নির্যাতন করার। এটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড। বিষয়টি সন্ত্রাসী কার্যকলাপ হিসেবেই দেখা উচিত।”
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, “তাজউদ্দীনের নখ তোলা হয়নি। আমি শুধু ভয় দেখানোর জন্য প্লাস হাতে নিয়েছিলাম। পরে বুঝেছি এটা আমার ভুল ছিল—নখ তোলার অভিনয় করাটা অনুচিত হয়েছে।”
বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল করিম বলেন,“আগের চুরির মামলায় গোয়ালিয়া খোলা এলাকা থেকে দুইজনকে ফরওয়ার্ড করা হয়েছে। নির্যাতনের ঘটনায় তাজউদ্দীনের পিতা বাদী হয়ে আলাদা একটি মামলা দায়ের করেছেন বলে আমরা জেনেছি।”


















