মানুষ, সময় এবং সমাজ সাহিত্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কোনো কবি বা সাহিত্যিকই এই তিনটি বিষয়কে উপেক্ষা করতে পারে না। কবি বা সাহিত্যিক বারবার ফিরে আসেন প্রকৃতির মাতৃক্রোড়ে। প্রকৃতির সৌন্দর্য্য স্বর্গীয় পীযূষজ্ঞানে আঁজলা ভরে তারা পান করেন এবং প্রকৃতির মোহনীয় মানস তাদের সৃষ্টিতে তুলে আনেন। তাদের জাদু স্পর্শে সৃষ্টি হয় অনন্য পঙ্ক্তিমালা।
সবাই কবি হয় না। কেউ কেউ হয় । সবাই কিছু লেখার চেষ্টা করলে তা বাক্য হয় কিন্তু কারো কারো লেখাই শুধুমাত্র সাহিত্য হয়ে উঠে। দার্শনিক সক্রেটিস এবং প্লেটো এই ক্ষমতাকে ঐশ্বরিক প্রেরণা বলেছেন। কিন্তু কেন মানুষ সাহিত্য লেখে? বারবার কেন সাহিত্যের আশ্রয় নেয়? কারণ, মানুষ নিজ মনের ব্যকুলতা প্রকাশের জন্য সাহিত্য বেছে নেয়। বাস্তব অস্তিত্বকে সে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে অন্যরকম ভাবে প্রকাশ করতে চায়। এটাই তার উদ্দেশ্য। রবীন্দ্রনাথের কথা এক্ষেত্রে স্মরণযোগ্য-
“অন্তরের জিনিষকে বাহিরের, ভাবের জিনিষকে ভাষায়, নিজের জিনিষকে বিশ্বমানবের ও ক্ষণকালের জিনিষকে চিরকালের করিয়া তোলা সাহিত্যের কাজ”।
সাহিত্যের অন্যতম একটি অংশ কবিতা। যেকোনো সাহিত্যেই সবার আগে যে সাহিত্য প্রকরণ দেখা গিয়েছে তার নাম কবিতা। বাংলা সাহিত্যও তার ব্যাতিক্রম নয়। এখনো পর্যন্ত কবিতার স্পষ্ট ও সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা পাওয়া যায়নি। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য উভয় আলঙ্কারিকদের মধ্যে এ নিয়ে মতভেদ আছে। আদি গ্রিক মহাকবি হোমার কবিতা লেখার জন্য ‘মিউজ’ এর আশীর্বাদ প্রার্থনা করেছেন। প্লেটো একে স্বর্গীয় উম্মাদনা বলেছেন। আমাদের আদি কবি বাল্মীকি সংস্কৃত সাহিত্যের প্রথম শ্লোকে বলেছেন, “মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শ্বাশ্বতী সমাঃ”এর পরেই বিস্ময়ে বলে উঠেছেন, “কিমিদং ব্যাহৃতং ময়া”। অর্থাৎ, আমার মুখ থেকে যে অপূর্ব বস্তু প্রকাশিত হলো –সেটি কী! কবিতার এই সৃষ্টি রহস্য নিয়ে মনীষীদের মতান্তর থাকলেও কবিতা ও অকবিতা নিয়ে তাদের যেমন সংশয় ছিল না তেমনি আমাদেরও সেই বোধ এখনো প্রায় সবার মাঝেই আছে।
এখন আর কেউ সহজে কবিতা পড়তে চায় না। কবিতা নানা কারণে পড়া বা পাঠ করা হয় না। প্রথমত, সবাই কবিতা বুঝে না। দ্বিতীয়ত, কবিতা বুঝার চেষ্টাও কেউ করে না। কারণ প্রমথ চৌধুরীর কথায় স্পষ্ট –
“কাব্যামৃতে যে আমাদের অরুচি ধরেছে সে অবশ্য আমাদের দোষ নয়,আমাদের শিক্ষার দোষ”।
শিক্ষার বাণিজ্যিক চিন্তা ভাবনাই আমাদের কাব্যপ্রীতিকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। সবারই এক কথা, কবিতা পড়ে কী হবে? এর চেয়ে গণিতের সূত্র, আইনের ধারা উপধারা, গ্রামার, কম্পিউটারের কজ শেখা বেশি-বেশি প্রয়োজন। ওতে টাকা আসে।
আসলে কবিতা সকলের জন্যও নয় বটে। সমঝদাররাই শুধু কবিতার মর্ম বুঝে। তবে তাদের সংখ্যাও হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র । বইমেলার এ যুগে কয়েক খানা বই নিজ বা প্রকাশকের ইচ্ছায় প্রসব করা এখন অতি সাধারন ব্যাপার। এখন পকেটে টাকা থাকলেই হোলো, সমঝদার প্রকাশকের কাছে না গেলেও চলে। বই কেউ কিনলো নাকি কিনলো না, পড়লো নাকি পড়লো না, মান ঠিক আছে কিনা তা দেখার চাইতে বই প্রকাশের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়াই এই হাইব্রিড কবি বা লেখকগণের মূল উদ্দেশ্যে পরিণত হয়েছে। কবিতা যদি কবিতা হয়ে না ওঠে তবে তা মানুষ পড়বে কেন? অবশ্য কবিদেরও কিছু দায়বদ্ধতা থেকে যায়। কবিদের দূর্বোধ্য ও অপরিচিত শব্দের ব্যবহার, উদ্দেশ্যহীন মেসেজে লেখা, নিজের বাপ দাদার নাম পালটে অন্য নামের ব্যবহার করা প্রতিনিয়তই কবিতাকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। চুল-দাড়ি রেখে আর পাঞ্জাবি পরলেই কবি হওয়া যায় না তা বুঝতে হবে।
কবিতার সাথে সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন আছে। আমরা সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতি দু’টি যে ভিন্ন তা অনেক সময়ই গুলিয়ে ফেলি। বাংলা একাডেমির ব্যবহারিক বাংলা অভিধান অনুযায়ী সংস্কৃতি বিশেষণ পদ যার অর্থ কৃষ্টি বা ইংরেজিতে যাকে বলে কালচার। আর সাংস্কৃতি কী তা জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এর বর্ণনায় পাই এভাবে-
“ সংস্কৃতি বলতে আমরা সাধারণত সাহিত্য শিল্প নৃত্যগীতবাদ্য বুঝে থাকি। এগুলো সংস্কৃতির অপরিহার্য অঙ্গ,তবে এগুলোই সংস্কৃতির সবটা নয়। সংস্কৃতি বলতে মূখ্যত দু’টো ব্যাপার বোঝায়ঃ- বস্তুগত সংস্কৃতি আর মানস সংস্কৃতি। ঘরবাড়ি, যন্ত্রপাতি আহারবিহার, জীবন যাপন প্রণালি – এসব বস্তুগত সংস্কৃতির অন্তর্গত। আর সাহিত্যে -দর্শণে -শিল্পে -সংগীতে মানসিক প্রবৃত্তির যে বহিঃপ্রকাশ ঘটে , তাকে বলা যায় মানস-সংস্কৃতি। বস্তুগত আর মানস –সংস্কৃতি মিলিয়েই কোনো দেশের বা জাতির সাংস্কৃতিক পরিচয় ফুটে ওঠে”।
কোনো জনপদে সংস্কৃতি চর্চার শুরু হয় গান ও কবিতার দ্বারা। ইতিহাস সাক্ষী, যে জনপদে যত উন্নত বা উঁচু দরের কবিতা সৃষ্টি হয় সেই জনপদ তত বেশি সমৃদ্ধ সংস্কৃতির বাহক ও ধারক। ইওরোপ, আমেরিকা, আরব, জাপান, চীন এবং আমাদের এশিয়ান সাব কন্টিনেন্ট যেখানেই দেখি না কেন কবিতা সেই শুরু থেকে এখনো আছে। এবং থাকবে। কারণ কবিদের যেমন মৃত্যু নেই তেমনি কবিরা কখনো পরাজিত হয় না।
বাংলা সাহিত্যের যুগবিভাজন আমাদের স্পষ্ট বুঝিয়ে দেয় আমাদের কবিতা দিনে দিনে উন্নত হয়েছে। সেই চর্যাপদ থেকে শুরু করে বৈষ্ণব পদাবলী হয়ে মাইকেল মধুসূদন দত্ত যখন বাংলা ভাষার প্রথম এবং একমাত্র সার্থক মহাকাব্য ‘মেঘনাদবধ’ লিখলেন সেইদিনই প্রমাণ হয়েছে বাংলা ভাষার শক্তি এবং বাংলা কবিতার শক্তি। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ত্রিশোত্তর কবিদের কবিতা আমাদের কাব্য শক্তিকে আরো সমৃদ্ধ করেছে। আর আমাদের বর্তমান কবিরাও সেই সমৃদ্ধ যাত্রাকে আরো এগিয়ে নিচ্ছেন।
আমাদের দেশে কবিতার চর্চা এখন সম্পূর্ণরূপে শহর ও অনুষ্ঠান কেন্দ্রিক। কবিতা চর্চার ক্লাস এখন মূলতঃ শুদ্ধ উচ্চারনের ক্লাসে পর্যবসিত হয়েছে। নিজেকে স্মার্টলি উপস্থাপনে শুদ্ধ উচ্চারণের বিকল্প নেই। কি চাকরি কি ব্যবসা সর্বত্রই শুদ্ধ বাংলা বলতে হয়। তাই হয়ত এ অবস্থা। আমাদের গ্রামের ছেলে মেয়েদের কাছে এই কবিতা চর্চা এখন হয় বিলাসিতা নতুবা মূল্যহীন কাজ। আমাদের বান্দরবানের অবস্থাও একই।
অসাম্প্রদায়িক বান্দরবান নিয়ে আমার যেমন গর্ব হয় তেমনি এখানকার শিক্ষা ক্ষেত্রে দূরাবস্থার জন্য লজ্জাও লাগে। শিক্ষাই যেখানে বিস্তার লাভ করেনি ঠিকমত সেখানে কবিতা চর্চা কীভাবে বিকাশ লাভ করবে? হ্যাঁ, এটা সত্যি যে এমন দূর্গম অঞ্চলে শিক্ষা বিস্তার খুবই শ্রম, সময় ও খরচ সাপেক্ষ। তবুও চেষ্টা তো চালাতে হবে।
একটা সময় বান্দরবানে বেশ মঞ্চনাটক চর্চা করা হতো। মঞ্চনাটকের সেইসব কুশীলবদের যখন চর্ম চক্ষে দেখতাম তখন এক আলাদা শিহরন অনুভব হতো। দারুন ইচ্ছা করতো তাদের মতই অভিনেতা হতে। কিন্তু এখন সেই চর্চা আর দেখি না। কেন দেখিনা? কারণ সবার জানা।
ছোটবেলায় অনেককেই দেখেছি কবিতা, গান, নাটক নিয়ে নিয়মিত চর্চা করতেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইঙ্গিত নাট্যগোষ্ঠী, বনানী নাট্যগোষ্ঠী, চমক কালচারাল গ্রুপ ইত্যাদি। এই নাট্যগোষ্ঠী সমূহের অন্যতম কর্ণধার ছিলেন যথাক্রমে কাজী নাসিরুল আলম, দিলীপ চক্রবর্ত্তী, এম এ মোমেন চোধুরী ও নাম না জানা অনেকে যাদের কথা কালের গহ্বরে হারিয়ে গিয়েছে। স্বরলিপি শিল্পীগোষ্ঠীর খুব নামডাক ছিল যার সংগঠক ছিলেন প্রয়াত অরুন সারকী। বর্তমানে তেমন কোনো একক শিল্পগোষ্ঠী চোখে পড়ে না। মারমা শিল্পগোষ্ঠী অবশ্য ব্যাতিক্রম। জনাব চ থুই প্রু এর নেতৃত্বে আছেন।
রাজার মাঠের পাশে স্বরলিপি শিল্পগোষ্ঠীকে নিয়মিতই সাংস্কৃতিক চর্চার রিহার্সাল করতে দেখতাম। এখন সেখানে দেখি দোকানপাট। কিন্তু এই দূরাবস্থার কারন কী? কারণ আমরা সবাই জানি কিন্তু বুঝি না। বুঝতেও চাই না। সবাই দোষ দেয় পৃষ্ঠপোষকের অভাব। কিন্তু বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ প্রতি বছর যেভাবে বই মেলার আয়োজন করে ও নতুন লেখকদের প্রণোদনা দেয় তাতে পৃষ্ঠপোষকগণের কোনো দোষ আমার দৃষ্টিতে ধরা পড়ে না। সম্প্রতি অরুণ সারকি টাউন হলে অনুষ্ঠিত ‘শিল্পের গৌরবে সৌরভে’ অনুষ্ঠান সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যারা অবদান রেখেছেন তাদের সম্মানিত করে। এই অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব বীর বাহাদুর উশৈসিং এম.পি। পৃষ্ঠপোষকের এই সুনজর তার আরেকটি বড় প্রমাণ। বান্দরবানের শিল্পগোষ্ঠীগুলোর হারিয়ে যাওয়ার কারণ আমি মনে করি মূলত দুইটি। প্রথমত স্বপ্রণোদিত সাংস্কৃতিক কর্মীর অভাব ও দ্বিতীয়ত নেতৃত্ব সংকট। স্বপ্রণোদিত সাংস্কৃতিক কর্মী সংগ্রহে স্কুল কলেজে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল গড়ে তুলতে হবে এবং নতুনদের যেমন সুযোগ দিতে হবে তেমনি পুরনোদেরকেও জায়গা ছেড়ে দিতে হবে।
সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক চর্চা ছাড়া সুস্থ সংস্কৃতি কখনই গড়ে উঠবে না। বান্দরবানে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে কর্মসম্পৃক্ততার দরুন দেখেছি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক চর্চা কতটা করুণ। যারাও একটু এগিয়ে আসে তাদের নানারূপ প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। তবে এও ঠিক, শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশ নিতে দারুন আগ্রহী। ঘরে বাইরে তাদের নানান বাধা। ধর্মীয় ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ শুধু চোখ রাঙায় না শাসায়ও। এক্ষেত্রে, তাদের একটু উৎসাহ ও সঠিক দিকনির্দেশনা বড় বেশি প্রয়োজন। মেঘলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় একটু সদিচ্ছা অনেক বড় ফল এনে দিতে পারে। গত বছর এই স্কুল জাতীয় পর্যায়ে জাতীয় সংগীত প্রতিযোগীতায় তৃতীয় স্থান অধিকার করে। ভাবতে পারেন, একটা স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষার্থী যেখানে মাতৃভাষা বাংলা নয় তারাই কি অসাধ্য সাধন করেছে? প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাই চাই এমন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের জোরালো উপস্থিতি। শুধু শিশু একাডেমি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনিস্টিটিউটের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। সরকারি বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই এগিয়ে আসা চাই।
যেখানে গুণীর কদর নেই সেখানে গুণী জন্ম নেয় না। বান্দরবানেও অনেক জ্ঞানী গুণী আছেন। কবি আছেন, সাহিত্যিক আছেন। তেমনি একজন অসাধারণ ব্যাক্তিত্ব দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে প্রকাশিত হয়ে আসা লিটল ম্যাগ ‘সমুজ্জ্বল সুবাতাস’ এর সম্পাদক চৌধুরী বাবুল বড়ুয়া। আছেন ক্য শৈ প্রু (খোকা স্যার), সিং ইয়ং ম্রো, আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক জনাব আমিনুর রহমান প্রামাণিক, সাংবাদিক ও তরুণ কবি ফরিদুল আলম সুমন, মং ক্য শৈ নু নেভী, আরফান হাবিব, এয়াকুব আলী চৌধুরী, নিলিমা আক্তার নিলা এবং আরো অনেকেই যাদের সবার নাম আমার অজানা । কোনোরূপ উৎসাহ উদ্দীপনা না পেয়েও তারা সাহিত্যের বিকাশে পর্দার অন্তরালে থেকে বান্দরবানের সাহিত্য চর্চাকে জিইয়ে রেখেছেন। কিন্ত তাঁরা কি তাঁদের প্রাপ্য সম্মানটুকু সর্বত্র পাচ্ছেন?
একথা অনেকেই ভাবতে পারেন যে ফেসবুক, ইউটিউবের এই যুগে কবিতা পাঠের আসর, মঞ্চনাটক, নৃত্য ও সঙ্গীতানুষ্ঠান আয়োজন এসবের এখন আর মূল্য নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে আমার ভিন্নমত আছে। এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়েই অনেক কিছু করা যায়। যদি না যেত তবে ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, ফেসবুক বন্ধ হয়ে যেত। বরঞ্চ আমি মনে করি এই প্রযুক্তি আমাদের অনেকেরই সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলছে।
একটি জনগোষ্ঠীর হাজার হাজার বছরের যে অভিজ্ঞতা তার জীবনযাপনের নানাবিধ উপাদানের দ্বারা পায় তাই-ই তার সংস্কৃতি। অর্থাৎ,আমরা যা, তা-ই আমাদের সংস্কৃতি। এসব উপাদান যার মাত্রা ব্যাপক তা কোনো জনগোষ্ঠীর জীবনে সর্বদা একইরূপ থাকে না। ইতিবাচক ও নেতিবাচক চিন্তা ভাবনার সংমিশ্রণে তা জটিলতার স্রোতে প্রবাহিত হয়। ফলে একটি সংস্কৃতি যেমন হতে পারে পরিশীলিত, রুচিশীল তেমন হতে পারে দুর্বল, অসুস্থ। একটি জনগোষ্ঠী কীভাবে নিজেদের গড়ে তার মৌল সত্যের উপরেই এটি নির্ভর করে। জীবনাচরণের মৌলিক গুণাবলীর পার্থক্য যদি মানুষ নির্ণয় করতে না পারে তাহলে সেই খণ্ডিত বোধ সংস্কৃতিকে তীব্রভাবে আঘাত করে। সাহস ও সন্ত্রাস, ত্যাগ ও সহিষ্ণুতা ক্ষমতা ও শক্তি, বিনয় ও দম্ভ এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য যদি নির্ণয় করা না যায় তবে মূল্যবোধের ভিত নড়ে যেতে পারে।সংস্কৃতির অন্যতম এক উপাদান এই মূল্যবোধ। দুর্বল সাংস্কৃতিক চেতনার কারণ এই মূল্যবোধের অবক্ষয়। এই দুর্বল সাংস্কৃতিক চেতনাই পীড়িত করে একটি জনগোষ্ঠীর সুকুমার মানবিক বোধকে।
তবুও বলতে হয় এখনো মানুষই মানুষকে জাগিয়ে তোলে। এখনো সংগীত-নাটক-সাহিত্য-শিল্প মানুষকে উজ্জীবিত করে। এখনো বাংলা নববর্ষ, বৈসাবি, নবান্ন উৎসব, বসন্ত উৎসব আছে মানুষকে ঐক্যের ডাক দেয়ার জন্য। অমর একুশের চেতনা এখনো আমাদের পথ নির্ধারণ করে দেয়। এখনো সংগ্রামের পথে ডাক দেয় শহীদ মিনার। আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শেখায় ১৯৭১। ব্যাক্তি স্বার্থ বাদ দিয়ে বৃহৎ স্বার্থ বড় করে দেখার জন্য ঐক্য আজ বড় প্রয়োজন। দেশ ও মানুষের স্বার্থে এই ঐক্য হবে দেশপ্রেমের ঐক্য।
লেখক: মেহেদী হাসান, বান্দরবান সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক।