বান্দরবানের রাজপুন্যায় মেলা হচ্ছে না

বান্দরবানে রাজপুন্যাহ উৎসব উপলক্ষে মেলার অনুমতি না পাওয়ায় পণ্যসামগ্রী নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বান্দরবান বোমাং সার্কেলের ঐতিহ্যবাহী খাজনা আদায় উৎসব রাজপুন্যাহ উপলক্ষে এ বছর কোনো মেলা হচ্ছেনা। স্থানীয় রাজার মাঠে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই নির্মিত মেলার অস্থায়ী দোকানপাটসহ অন্যান্য স্থাপনা সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। তবে রাজবাড়ি মাঠে রাজার খাজনা আদায়ের আনুষ্ঠানিকতা যথারীতি হবে।

বৃহষ্পতিবার বিকেলে মাঠে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ সদস্যরা দোকানপাট বন্ধ করে দিচ্ছেন। সেখানে কর্তব্যরত কর্মকর্তারা জানান, মেলার অনুমতি না থাকায় যারা এর মধ্যেই দোকানপাট সাজিয়েছে তাদেরকে সেগুলো গুটিয়ে নিতে বলা হচ্ছে। আর যারা দোকান খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাদেরকে নিষেধ করা হচ্ছে।

চট্টগ্রামের পশ্চিম মাদারবাড়ি এলাকা থেকে কাপড়ের দোকান নিয়ে এসেছেন আনোয়ার মোল্লা। পুলিশ এসে দোকান বন্ধ করতে বলার পর তিনি জানান, আমরা ১৪ হাজার টাকা দিয়ে মোঃ আলীর কাছ থেকে দোকান ভাড়া নিয়েছি। এখন পুলিশ বলছে মেলার অনুমতি নেই। আমাদের আসাযাওয়া এবং অন্যান্য খরচ মিলিয়ে অনেক টাকা লোকসান হয়ে যাবে।

চট্টগ্রামের মুরাদপুর থেকে আসা কাপড় ব্যবসায়ী আনোয়ার মোল্লা জানান, তিনি দোকানের জন্যে ৭ হাজার টাকা দিয়েছেন, বাকি ৭ হাজার টাকা দিলে দোকানের স্লিপ (অনুমতিপত্র) পাওয়া যাবে। ৪ দিন মেলা চলবে বলে তারা খবর পেয়েছেন। এ অবস্থায় পুলিশ তাদেরকে দোকান না খুলতে বলেছে।

পুলিশ সুপার মোঃ জাকির হোসেন মজুমদার জানান, সামনে উপজেলা নির্বাচন। এটা একটা স্পর্শকাতর সময়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থেই কোনোরকম মেলার আয়োজন করতে দেয়া যাচ্ছেনা। মেলা আয়োজনের জন্যে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পুলিশের কাছে নিরাপত্তার ব্যাপারে পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় রেখে মেলা আয়োজন না করার জন্যে সুপারিশ করেছি। তবে রাজবাড়ি মাঠে খাজনা আদায় উৎসবের ব্যাপারে কোনো সমস্যা নেই।

জেলা প্রশাসক মোঃ দাউদুল ইসলাম জানান, নিরাপত্তার বিষয়টা দেখা পুলিশের দায়িত্ব। পুলিশ যদি মনে করে, এ সময় মেলার আয়োজন হলে এলাকার জননিরাপত্তা বিঘিœত হতে পারে, তাহলে আমি অনুমতি দেবোনা।

বোমাং রাজার কার্যালয় থেকে মাঠ লীজ নিয়ে মেলায় আসা ব্যবসায়ীদের ভাড়া দিয়েছে বান্দরবান বাজার চাউল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের একটি সংগঠন। সংগঠনটির সভাপতি মোঃ আলী জানান, নির্বাচনের কারণে মাঠে মেলা আয়োজন করার অনুমতি পাওয়া যায়নি। আমরা যাদের কাছ থেকে দোকানের জন্যে টাকা নিয়েছিলাম, সেগুলো ফেরত দিচ্ছি। আর মাঠ লীজ নেয়ার জন্যে রাজার কার্যালয়ে যে টাকা দেয়া হয়েছে, সেটা ফেরত নেবার চেষ্টা করবো।

উল্লেখ্য, ৮ মার্চ বান্দরবান বোমাং সার্কেলের খাজনা আদায়ী উৎসব রাজপুন্যাহ অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় রাজার প্রতিনিধি হেডম্যান ও কারবারীরা সার্কেলের জুম চাষীদের কাছ থেকে আদায়কৃত খাজনা রাজার কাছে পরিশোধ করবেন। সাধারণতঃ ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির প্রথম দিকে বেশ ঘটা করে রাজপুন্যাহ উৎসব হলেও, এ বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে তা পিছিয়ে মার্চ মাসে আয়োজন করে বোমাং সার্কেল কর্তৃপক্ষ।

শেয়ার করুন