রফিকুল আলম মামুন|| বান্দরবান জেলা ফুটবল লীগকে ঘিরে শনির দশা কাটছেই না। ডিএফএ কর্তাদের গাফেলতি ও উদাসীনতায় র্দীঘ চার মাসের চেষ্টায়ও মাঠে গড়াচ্ছেনা কাংখিত ফুটবল লীগ। বার বার তারিখ ঘোষনা করেও পেছাতে হয়েছে কয়েক দফা। মাঠে গড়াচ্ছেনা ফুটবল। এ নিয়ে চরম হতাশায় ভুগছে ফুটবলার, সংগঠক ও ক্লাব কর্মকর্তারা।
জেলার ফুটবল সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, মূলতঃ চলতি বছরের জুন মাস থেকেই ফুটবল লীগ চালুর উদ্যোগ নেয় ডিএফএ। শিকেয় তুলে রাখা ফুটবলকে মাঠে নামাতে একরকম গলদর্ঘম হতে হয় জেলার দুএকজন সংগঠককে ! বিশেষ করে জেলা ফুটবল খেলোয়াড় সমিতির সভাপতি নাছির উদ্দীন নাকি একাই ডিএফএ কর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ঘুরে ফুটবল লীগ চালু করতে রাজি করিয়েছেন। যদিও তা নাকি অনেকটা ধরে বেঁধে রাজি করানোর মতো, বলেছেন সিনিয়র ফুটবলাররা। পরে অবশ্যই পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে কিছুটা গতি ফিরে ডিএফএতে।
এদিকে গত দুমাস আগে থেকেই ফুটবল লীগ চালু করতে অনেকটা অপরিককিল্পতভাবেই এগুতে থাকে ডিএফএ। শুরু করা হয় মাঠ সংস্কার থেকে দল অন্তর্ভূক্তির কাজ। ধরে বেঁধে কিছু ক্লাবকেও রাজি করানো হয়।
তবে আশার কথা এবারের লীগে অংশ নিতে রাজি হয়েছে ব্র্যান্ড দল আবাহনী ক্রীড়া চক্র ও ঈগল স্পোটির্ং ক্লাবের মতো দলও। সাথে রয়েছে কিছু নতুন দল। যাদের বেশিরভাগেরই লীগ খেলার কোন অভিজ্ঞতা নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিএফএ কর্তাদের মধ্যে দুরত্ব ও সমন্বয়হীনতার কারণেই মূলতঃ ফুটবলের শনির দশা কাটছে না।
জেলা ফুটবল সংস্থার সভাপতি ক্য শৈহ্লা, তিনি একাধারে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি। সাধারণ সম্পাদক মংহ্নৈচিং । মাঠে ফুটবল গড়াতে হলে সহযোগিতা দরকার হয় জেলা ক্রীড়া সংস্থারও। আবার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ইসলাম বেবী। তিনি পৌর মেয়র এবং জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। নানা কাজে তাকেও ব্যস্ত থাকতে হয়।
অপরদিকে ঘরোয়া বৈঠকে বসে দু চারজন মিলে লীগ পরিচালনা কমিটির আহবায়ক করে দেন আওয়ামীলীগ নেতা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কাজল কান্তি দাশকে। তিনিও ফুটবলের জন্য অপেশাদার ব্যক্তিত্ব। ফুটবল নিয়ে চিন্তা করাটা মোটামুটি “সময় নষ্ট” করার মতোই বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে সবার জন্য। এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় ফুটবলমোদিরা। নয়তো চারমাসেও কেন ফুটবল লীগ শুরু করা যাবে না।
এদিকে চলতি মাসের শুরুতে ফুটবল মাঠে গড়াবে এমন আশ্বাসে বেশিরভাগ ক্লাব খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকের অগ্রিম শোধ করে দিয়েছে। ঈগল, আবাহনী, ফুটবল একাডেমী, মধ্যমপাড়ার মতো দল কিছুদিন দলীয় অনুশীলন শুরু করলেও নির্দিষ্ট সময়ে লীগ শুরু না হওয়ায় তারা অনুশীলন বন্ধ করে দিয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন ঈগল, আবাহনী, মধ্যমপাড়া ফুটবল একাদশ, ফুটবল একাডেমীর কর্মকর্তারা।
ফুটবল একাডেমীর কমর্ককর্তা বাবলু বড়–য়া জানান, আমরা লীগ শুরুর প্রতিশ্রæতি পেয়ে খেলোয়াড়দের বড় অংকের পারিশ্রমিক অগ্রিম শোধ করে দিয়েছি। এখনো লীগ শুরুর কোন লক্ষনই দেখছি না। ঈগল স্পোটিং এর কর্মকর্তা ক্যচিং অং জানান, আমরা যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। তবে সময়মতো লীগ শুরু না হওয়ায় সবাই র্ধেয্য হারাচ্ছে।
এদিকে লীগ কবে নাগাদ শুরু হবে এমন প্রশ্ন কিছুটা এড়িয়ে গিয়ে ডিএফএ সভাপতি ক্যশৈহ্লা বলেন, আহবায়ক কাজল কান্তি দাশকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনিই সবকিছু জানেন। তবে এ নিয়ে বক্তব্য জানতে কাজল কান্তির ফোনে চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সাধারণ সম্পাদক মংহ্নৈচিং বলেন, লীগ শুরু করতে সব কিছু চূড়ান্ত। ফিকচারও হয়ে গেছে। এখন উদ্বোধনী দিনের অতিথি নির্বাচনে কিছুটা দেরি হচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুরকে প্রধান অতিথি করতে চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি সময় দিতে না পারলে অন্য কোন অতিথি দিয়ে হলেও নভেমম্বরের প্রথম সপ্তাহেই ফুটবল মাঠে গড়াবে।
জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের কর্মকর্তা ও খেলোয়াড় সমিতির সভাপতি মো. নাছির উদ্দীন বলেন, সকল সমস্যা কাটিয়ে ফুটবল মাঠে গড়াতে সর্বাতœক চেষ্টা করা হচ্ছে। কিছুটা সমন্বয়ের অভাবেই লীগ মাঠে গড়াতে বিলম্ব হচ্ছে। আশা করছি তা কাটিয়ে উঠা যাবে।
এবারের লীগে মোট সাতটি ক্লাব অংশ নেবার কথা রয়েছে।
তবে আগামি নভেম্বরে জাতীয় রাজনীতি ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো জটিল পরিস্থিতিতে ফুটবল লীগ কতটা সফল হবে তা প্রশ্নই থেকে যায়।
তবুও সকল জটিলতা কাটিয়ে শিকেয় তুলে রাখা ফুটবল শীঘ্রই মাঠের দেখা পাবে এমন প্রত্যাশা ফুটবল প্রেমীদের।