প্রচ্ছদ পার্বত্য চট্টগ্রাম বান্দরবানের পাহাড়ে মিষ্টি তেঁতুলের চাষ

বান্দরবানের পাহাড়ে মিষ্টি তেঁতুলের চাষ

বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকার পাহাড়ের ফল বাগানে অন্যান্য ফলের সাথে চাষ হচ্ছে থাইল্যান্ডের মিষ্টি তেঁতুল। ছবি- আলাউদ্দিন শাহরিয়ার।

আলাউদ্দিন শাহরিয়ার, বান্দরবান ।। বান্দরবানের পাহাড়ে বাড়ছে মিষ্টি তেঁতুলের চাষ। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে গড়ে ওঠা মিশ্র ফলের বাগানগুলোতে এখন আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস আর পেঁপের সঙ্গী হচ্ছে এই মিষ্টি তেঁতুল। সাধারণ তেঁতুলের চেয়ে স্বাদে-গন্ধে ভিন্ন হওয়ায় চাষীরাও আগ্রহী হছেন সুস্বাদু মিষ্টি তেঁতুলের বাগান গড়ে তুলতে।

বর্তমানে বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকার বাগানে দুই ধরনের তেঁতুলের চাষ ও উৎপাদন হচ্ছে। স্থানীয় জাতের সাধারণ টক তেঁতুল এবং মিষ্টি স্বাদের তেঁতুল। তবে মিষ্টি তেঁতুল উৎপাদনের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে এখনো খুব কম।

বান্দরবানের হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম ভূইয়া জানান, তেঁতুল টক স্বাদের ফল হিসেবে সকলের কাছেই পরিচিত। কিন্তু মিষ্টি তেঁতুলের সঙ্গে দেশের মানুষের পরিচিতি নেই বললেই চলে। উৎপাদন বাড়ানো গেলে মিষ্টি স্বাদের কারণে ও খাদ্যমান বিবেচনায় মিষ্টি তেঁতুল এদেশেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।

তিনি জানান, হর্টিকালচার সেন্টারে প্রতিবছরই ১ হাজারের অধিক মিষ্টি তেঁতুলের চারা ও কলম উৎপাদন করা হয়। প্রতিবছর অধিকাংশ তেঁতুল চারা এবং কলম বিক্রি হয়। প্রতিটি মিষ্টি তেঁতুলের চারা ১৫ টাকায় এবং কলম ৩০ টাকায় বিক্রি করা হয়। এই জাতটি থাইল্যান্ড থেকে আনা জার্মপণ্টাজম থেকে বাছাই করা হয়।
এদিকে চিম্বুক ও থানচি সড়কের আশে পাশে গড়ে ওঠা মিশ্র ফলজ বাগানের মালিকরা জানান, তাদের বাগানে এখন অন্যান্য ফলের সাথেই মিষ্টি তেঁতুল চারা লাগানো হয়েছে।

তেঁতুল গাছের তেমন বেশি পরিচর্যা প্রয়োজন হয়না। চার পাঁচ বছর পর থেকেই এসব গাছে ফলন আসবে বলেও আশাবাদ তাদের। তবে এরই মধ্যে চিম্বুক সড়কের গ্যাসমনি পাড়ার কয়েকটি বাগানে মিষ্টি তেঁতুলের পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে।

‘বারি তেঁতুল-১’ এর পূর্ণ বয়স্ক গাছ থেকে প্রতি বছর প্রায় ৭০ থেকে ৮০ কেজি তেঁতুল পাওয়া যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেন জানান, মিশ্র ফল চাষের আওতায় তেঁতুল চাষ হচ্ছে আরো আগে থেকেই। তবে সেটি এখনো সবার কাছে তেমন পরিচিতি পায়নি। মিষ্টি তেঁতুল চাষ সম্প্রসারণে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। বিভিন্ন সময় বিনামূল্যে আগ্রহীদের চারা ও কলম দেয়া হচ্ছে।
এই সুস্বাদু তেঁতুলটির পরিচিতি বাড়ানো গেলে একসময় এখানকার পাহাড়ে উৎপাদিত তেঁতুল বাজারের বড় একটি চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে, জানান তিনি।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানান গেছে, বান্দরবান জেলায় প্রায় ৩শ দুই হেক্টর জমিতে তেঁতুল চাষ হচ্ছে। হেক্টর প্রতি ফলন হচ্ছে প্রায় ১৯ মেট্টিক টন। চলতি বছর তেঁতুল উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬শ মেট্টিক টন। স্থানীয় বাজারে এসব তেঁতুল চাহিদা মিটিয়ে পার্শবর্তী জেলা শহরেও বিক্রি হয়।

বারি তেঁতুল-১ নামে মিষ্টি স্বাদের তেঁতুল একটি উচ্চ ফলনশীল জাত। গাছের উচ্চতা প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিটার এবং বিস্তৃতি প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিটার। ফলের আকার বড় এবং কার্ভ আকৃতির। ৮ থেকে ২০ সেন্টি মিটার লম্বা, বাদামি, অনিয়মিত ও কার্ভ আকৃতির ফলগুলো যখন পরিপক্ক হয় তখন পূর্ণ রসালো এবং পাল্প বাদামি থেকে লালচে বাদামি রঙের হয়। সম্পূর্ণ পরিপক্ক হলে খোসা হাত দিয়ে চাপ দিলে সহজেই ভেঙ্গে যায়। প্রতিটি ফলে প্রায় ৬ থেকে ১২টি বীজ থাকে।

শেয়ার করুন