রফিকুল আলম মামুন , বান্দরবান।। পাহাড়ে ফুল চাষে সফলতা পেয়েছেন বান্দরবান সদর উপজেলার বিক্রিছড়া এলাকার মারমা সম্প্রদায়ের এক চাষী।একসময় পাহাড়ের বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ প্রায় অসম্ভব ছিল। কিন্তু পাহাড়ের উঁচু জমিতে বানিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করে সেই অসম্ভব কাজকে সম্ভব করেছেন স্থানীয় চাষী উথোয়াইচিং। ফুল চাষে সফলতায় পাহাড়ের অন্য চাষীরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন বানিজ্যিক ফুল চাষে।
বিক্রিছড়া এলাকায় উথোয়িইচিং এর বাগান পর্রিদশণ করে দেখা যায়, বিশ শতক পাহাড়ি ঢালু জমিজুড়ে শোভা পাচ্ছে ডালিয়া, জিনিয়া, নানা রঙের গোলাপ, গাঁদা, টিউব রোজসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুল।পাশাপাশি রয়েছে জুমের নানা রকম মৌসূমী চাষাবাদও।সেখানে সকালে ফুল গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত উথোয়াচিং ও তার পরিবারের কয়েকজন সদস্য।
বিক্রিছড়া এলাকার বাসিন্দা উথোয়াইচিং জানান, ১৯৭১ সালে এসএসসি পাশ করার পর পড়ালেখা ছেড়ে দেন। মা-বাবার সাথে জুম চাষ শুরু করেন। ২০১৬ সালে তিনি প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে ফুল চাষ শুরু করেন নিজের ২০ শতক পাহাড়ি জমিতে। ফুল চাষে সহযোগিতা করেন স্ত্রী আর সন্তানেরা।
স্থানীয় হর্টিকালচার সেন্টার থেকে ডালিয়া, ইন্ডিয়ান জাতের গোলাপ, টিউব রোজ, বিভিন্ন প্রজাতির গাঁদা ফুলের চারা ও কলম সংগ্রহ করে রোপণ করেন তিনি। প্রতিটি ডালিয়ার চারা ১০ টাকায়, গোলাপ কলম ২০ টাকায় ক্রয় করেন তিনি। স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকে পর্রামশ নিয়ে পরিচর্যা করার পর প্রথম বছর এসব গাছ থেকে প্রায় ২০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেন স্থানীয় বাজারে।
পরের ২০১৭ সালে একই জমিতে অন্যান্য চাষাবাদের পাশাপাশি নিজের তৈরি চারা আর কলমে আবারো শুরু করেন ফুল বাগানের পরিচর্যা। সেই থেকেই মূলত চাষী উথোয়াইচিংয়ের স্বপ্নের যাত্রা শরু বলে জানান তিনি।
সে বছর চট্টগ্রাম শহরের হাটহাজারীর ফুল ব্যবসায়ীরা তার কাছ থেকে কিনে নিতে শরু করেন ডালিয়া, গোলাপ আর গাঁদা। প্রতিটি ডালিয়া আর গোলাপ বিক্রি করেন প্রতিটি ১০ টাকা হিসেবে। গাঁদা বিক্রি করেন প্রতি ২-৩ টাকা দরে।তাছাড়া অন্য ফূলও বিক্রি করেন বাজার দর অনুযায়ী।এ বছরের শুরুতেই প্রথম চালানে চট্টগ্রামের বাজারে ১২ শ ডালিয়া বিক্রি করেছেন ১২ হাজার টাকায়। চলতি মাসেই আরো কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকার ফুলের অর্ডার আছে তার কাছে।
উথোয়াচিং মারমা বলেন, ফুল চাষী হিসেবে ধীরে ধীরে পরিচিত পাবার পর এখন দুর দুরান্তের অনেকেই আমার বাগানে আসেন ফুল কিনতে। বিশেষ করে যেকোনো সরকারী-বেসরকারী অনুষ্ঠানের সময় ফুলের চাহিদা বেড়ে যায়। যখন স্থানীয়রা আমার কাছে ফুল কিনতে আসেন তখন আমি আনন্দ পাই। তাছাড়া আর্থিক ভাবেও লাভবান হচ্ছি।
স্থানীয় বাসিন্দা হ্লাচিং মারমা জানান, উথোয়াইচিংয়ের ফলের বাগান এলাকায় প্রথম্। তার সফলতা দেখে অনেকেই ফুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
এদিকে পাহাড়ে ফুল চাষের সম্ভাবনার বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আলতাফ হোসেন বলেন, পাহাড়ের সেচ সুবিধাযুক্ত জমিতে দেশি বিদেশী ফুলের বানিজ্যিক চাষাবাদ সম্ভব। তবে এখনো ফুল চাষ সম্পর্কে এখানকার মানুষ তেমন সচেতন নয়্। ফুল চাষ করতে যে কোন চাষী আমাদের কাছে সহযোগিতা চাইলে আমরা তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রস্তুত। পাহাড়ের ব্যপকভাবে ফুল চাষের দারুন সম্ভাবনা কাজে লাগানো গেলে প্রান্তিক পর্যায়ের পাহাড়ি অথর্নীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলেন আলতাফ হোসেন।