বান্দরবানের একমাত্র সরকারি পাবলিক লাইব্রেরিতে দিনদিন কমছে পাঠক। পর্যাপ্ত জনবল নেই। নতুন বইয়ের সরবরাহও যথেষ্ট নয়। এ অবস্থায় জেলার পাঠকেরা হয়ে পড়ছেন বইবিমুখ।
জেলা সদরের জজকোর্ট এলাকায় অবস্থিত লাইব্রেরিটির মূল ফটক দেখে বোঝার উপায় নেই, এটি খোলা না বন্ধ। কোথাও কোনো সময়সূচিও লেখা নেই। এ অবস্থায় আগ্রহী পাঠকেরা কখনো কখনো লাইব্রেরি বন্ধ দেখে ফিরে যাচ্ছেন। সময়ে সময়ে নতুন বই এলেও তা থেকে যাচ্ছে বস্তাবন্দী। পাঠক সেইসব বইয়ের নাগাল পাচ্ছেন না।
জেলার একমাত্র লাইব্রেরিটির এ দৈন্যদশায় এলাকার পাঠকেরা হতাশা ব্যক্ত করেছেন। কেউ কেউ সেটি কার্যকর করার ব্যাপারে পরামর্শও দিয়েছেন।
বান্দরবান সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মেহেদী হাসান জানান, ‘অনেকেই জানেন না যে, বান্দরবানে একটি সরকারী গণগ্রন্থাগার আছে। প্রচার ও অবস্থানগত কারণে এখানে নিয়মিত পাঠকদের আসা-যাওয়া হয়না। পাঠাগারে রকমারি বইয়ের অভাব ও বেশিরভাগ পুরোনো ছেঁড়া ধুলোমাখা বইয়ের দেখা মেলে। যা দেখে কর্তৃপক্ষের লোকবল সংকট এবং দায়সারা ভাব বুঝতে পারা যায়।
কিছুদিন আগে কলেজের একজন শিক্ষার্থী পাঠাগারে সদস্য হতে গেলে নানা বিড়ম্বনার কারণে শেষ পর্যন্ত আর হতে পারেননি। এটি র্কমদক্ষতার অভাব নাকি চরম গাফিলতি বুঝতে পারছি না। আশা করি যথাযথ কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি দিবেন।’
বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও লাইব্রেরির পাঠক মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি যতবারই পাঠাগারে যাই ততবারই ভাবি কিছু সুপারিশ জানাবো, কিন্তু বলার জন্য দায়িত্বরত কাউকে সেখানে পাইনি।’
চারুশিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মী চৌধুরী কিরণ বিকাশ বড়ুয়া বলেন, ‘জেলা গ্রন্থাগার আমার ভাল লাগার একটা প্রতিষ্ঠান। ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত একটা সময় ছিল, যখন পাঠাগারে একটু ঘুরে না আসলে মনটা অতৃপ্ত থেকে যেত। তখন দেখতাম অনেক পাঠক ছিলেন। তাদেরকে উৎসাহিত করতেন সেই সময়কার লাইব্রেরিয়ান নিয়াজ মোহাম্মদ সাহেব এবং লাইব্রেরী সহায়ক ছিলেন সম্ভু বাবু। ওনারা সবার সাথে প্রাণখুলে কথা বলতেন। নিয়াজ সাহেব বেশীরভাগ সময় পাঠাগারে কাটাতেন। তাই ওনার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মেশার অনেক সুযোগ হয়েছিল। লাইব্রেরির সেই যৌবন আজ নেই বললেই চলে। এখানে টয়লেট ব্যবস্থাপনাও বেশ দুর্বল। যা পাঠকের জন্য খুবই বিব্রতকর।’
বান্দরবান সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মাধবী তঞ্চঙ্গ্যা জানান, ‘পাঠাগারে বাচ্চাদের জন্য একটি র্কণার দেখে অনেক ভাল লাগলো। শৈশব থেকে বাচ্চাদের পাঠাগারমুখী হওয়া এবং বই পড়ার সাথে পরিচিত হওয়া সত্যিই খুব চমৎকার একটি ব্যপার।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী প্রিয়তোষ দাশ জানান, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সব প্রতিষ্ঠানে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ এর কথা বলা থাকলেও পাঠাগারে তেমন কোন নির্দেশনা আমার চোখে পড়েনি। এছাড়া পাঠকশূণ্যতা অনুভব করি।’
নতুন বই না থাকার ব্যাপারে অফিস সহায়ক সাইফুল ইসলাম ভুঁইয়া জানান, ‘নতুন বইগুলো শেলফে তোলা হয়নি। আমাদের জনবলও কম। আমাকে একাই ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ডিউটি করতে হয়।’
লাইব্রেরির এ দুর্দশার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে ভারপ্রাপ্ত লাইব্রেরি সহকারি মা শৈ থুই চাক বলেন, ‘আগে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ জন পাঠক থাকলেও বর্তমানে পাঠকের সংখ্যা খুব কম। কোভিডের জন্য পাঠাগার কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা আছে। তবে স্বাভাবিক অফিসের কার্যক্রম চলছে। গত মার্চের ২৬ তারিখ থেকে পাঠকসেবা বন্ধ আছে, অধিদপ্তরের নির্দেশনা আসলে পাঠকসেবা চালু হবে। অফিস র্কাযক্রম শুরুর সাথে সাথে কিছু পাঠক আসছেন এবং এন্ট্রি স্বাক্ষর করানো ছাড়াই সেবা নিচ্ছেন।
এখানে বাচ্চাদের জন্য আলাদা পড়ার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন রং চেনার উপকরণ এবং খেলার উপকরণ রয়েছে। শিশু এবং কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাই পাঠাগারে বেশি আসেন। করোনাকালে অনলাইনে চিত্রাঙ্কণ ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় এবং বিজয়ীদের পুরষ্কার স্ব-স্ব ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। প্রচার প্রচারনার কিছুটা ঘাটতি আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।’
লাইব্রেরি অফিসের তথ্যমতে, ২০১৯ সালে ১২০৬টি নতুন বই এসেছে। বর্তমানে মোট বইয়ের সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার। নিবন্ধিত পাঠক রয়েছেন ২৫ জন। পাঠাগারে কর্মরত আছেন ৪ জন।