সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা। অন্যান্য স্থানের মতোই এই উৎসবকে ঘিরে বান্দরবানের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে নেমে এসেছে আনন্দের বন্যা। জেলার বিভিন্ন জায়গার পূজা মন্ডপগুলোও প্রস্তুত হয়ে আছে পূজারীদের অপেক্ষায়। তবে আলাদা কিছু বৈশিষ্টের কারণে বান্দরবানের রাজার মাঠের কেন্দ্রীয় দূর্গা পূজার মন্ডপটি ইতোমধ্যেই বিশেষ আকর্ষণীয় মন্ডপ হিসেবে সবার মাঝে স্থান করে নিয়েছে।

এতোদিন বান্দরবানের কেন্দ্রীয় দূর্গা পূজার মন্ডপটিকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সেরা মন্ডপ হিসেবে আয়োজকরা দাবি করে আসলেও এবার মন্ডপটিকে বৃহত্তর চট্টগ্রামের সেরা হিসেবে দেখছেন পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা।
কেন বান্দরবান জেলার ঐতিহ্যবাহি রাজার মাঠের দূর্গা পূজার মন্ডপটি চট্টগামের সেরা তা জানতে খোলা চোখ ডটকমের বিশেষ প্রতিবেদক রফিকুল আলম কথা বলেছেন স্থানীয় সনাতন সম্পদ্রায়ের প্রতিনিধিদের সাথে।

কেন্দ্রীয় দূর্গা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লক্ষীপদ দাস বলেন, “ দূর্গা পূজার আয়োজনটি শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য নয় এখানে সব জাতি পেশার মানুষ মন্ডপে উপস্থিত হন। কখনো কোনো বিশৃংখলা হয় না। পূজা মন্ডপে না আসলে বোঝা যাবেনা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত কি । তাছাড়াও বিশাল মাঠে মন্ডপ হওয়ায় সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ একসাথে পূজা উপভোগ করতে পারেন। দেশের নামী দামী শিল্পীরা ধর্মীয় সংগীতসহ নানা পরিবেশনা নিয়ে হাজির হন। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পূজার থিমগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়। এবার মা দূর্গা ঘোড়ায় চড়ে আসছেন। তাই ঘোড়ার রথ তৈরিতেও নেয়া হয়েছে নানা প্রযুক্তির সুবিধা। যা অন্যান্য অনেক মন্ডপে এখনো করা সম্ভব হচ্ছে না। মূলত এসব কারণেই বান্দরবানের মন্ডপটিকে সেরা বলা হয়”।

চট্টগ্রাম মহানগরীর মন্ডপগুলো সাথে কিছুটা তুলনা করে লক্ষীপদ দাস বলেন, ‘সেখানকার মন্ডপগুলোতে পর্যাপ্ত জায়গা নেই। পূজায় আসা লোকজন গাদাগাদি করে পূজা উপভোগ করেন। তাতে অনেক সময় বিশৃংখলা তৈরি হয়। বান্দরবানে এ সমস্যা হয় না।’
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জনি সুশীল বলেন, ‘রাজার মাঠের পূজা মন্ডপটি শুধু হিন্দুদের জন্য নয়। সকল সম্প্রদায়ের নারী পুরুষ মন্ডপটি দেখতে আসেন। এখানে কোনো ভেদাভেদ থাকে না। তাছাড়াও বিশাল খোলা মাঠ হওয়ায় পূজারীসহ দর্শনাথীরা কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই দেখে যেতে পারেন পূজার নানা আয়োজন।’

পূজা উদযাপন কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজেশ্বর দাশ বলেন, ‘লাখো মানুষের সমাবেশে পরিণত হয় বান্দরবানের দূর্গা পূজা। পূজাটি শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে না। নিরাপত্তাসহ সাম্প্রদায়িক হীনমন্যতা না থাকায় বান্দরবানের পূজা মন্ডপটি ইতিমধ্যেই চট্টগ্রাম অঞ্চরে সাড়া ফেলেছে। পূজার ছুটিতে যে সব পর্যটক বান্দরবান বেড়াতে আসেন তারাও ছুটে আসেন পূজা মন্ডপে। সব মিলিয়ে বান্দরবানের মন্ডপটি অবশ্যই চট্টগ্রামের সেরা।’
বান্দরবানের হিন্দু সম্পদ্রায়ের প্রতিনিধি পূজা উদযাপন পরিষদের জ্যেষ্ঠ সদস্য সৌরভ দাশ শেখরের মতে, ‘বিশাল খোলামেলা মাঠে এতবড় প্যান্ডেলে নারী পুরুষের জন্য আলাদা আলাদা ব্যবস্থা করে পূজা মন্ডপ চট্টগ্রামের অন্য কোথাও দেখা যায় না। এখানে সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছ প্রশাসন। সকল সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর হয় মন্ডপটি। পূজাকে ঘিরে শহরের আলোকসজ্জাও নজর কাড়া। তাছাড়া পূজাস্থলের কাছেই বিস্তৃত মাঠে বসে শারদীয় লোকজ মেলা। নানা আয়োজন থাকে সেখানে। দূর দুরান্ত থেকে আসা লোকজন মেলায় নানা সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেন তাতে মেলার আকর্ষন অনেক বেড়ে যায়।’
সমাজকর্মী রাজেশ দাশ বলেন, ‘পর্যটন এলাকা হওয়ায় বান্দরবানের কেন্দ্রীয় পূজা মন্ডপটি বিশেষ মর্যাদা পেয়েছে। দীর্ঘ ছুটির ফলে দেশ বিদেশের বেড়াতে আসা মানুষ পূজা দেখতে আসেন। এটি অন্য কোথাও দেখা যায়না। তাছাড়াও বান্দরবানের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি অন্য যে কোনো জায়গার তুলনায় ভালো হওয়ায় জেলার বাইরের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ পূজায় হাজির হয়। অন্যান্য সুযোগ সুবিধাতো রয়েছেই”।