নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের
বান্দরবানের কথিত তরুণ লীগ নেতা প্রিন্সের যত অপকীর্তি

কথিত তরুণ লীগ নেতা ও ডাক্তার প্রিন্স সেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক ।। 


বান্দরবানের কথিত চিকিৎসক, তরুণ লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের বান্দরবান জেলার সভাপতি প্রিন্স সেনের কুকির্তীতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন বান্দরবানের মানুষ। বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে, চাকুরী পাইয়ে দেয়ার নাম করে টাকা নেয়া, প্রতারণা, ভয়ভীতি প্রর্দশনসহ নানা কারণে এখন তিনি শহরে আলোচনার কেন্দবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন। এসব ঘটনায় প্রেক্ষিতে তার ওপর চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলার ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও।

কে এই প্রিন্স সেন :
দেশের বাড়ী ভোলা জেলার তজুমদ্দিন থানায়। পিতা তরুণ সেন। বিভিন্ন সূত্রের দেয়া তথ্যমতে, নানা ঘটনার জন্ম দিয়ে নিজ জেলা ভোলা থেকে ২০০৮ সালের দিকে চলে আসেন চট্টগ্রামের দোহাজারীতে। সেখানে চিকিৎসকের ভূয়া সনদ দেখিয়ে একটি ক্লিনিকে চাকুরী নেন।

বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজি সংগঠনের নেতা পরিচয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা প্রতারণার অভিযোগ প্রিন্স সেনের বিরুদ্ধে।

ক্লিনিকে চাকুরীর অন্তরালে নানা অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়েন প্রিন্স। একপর্যায়ে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে নিজের ভূয়া পরিচয় দিয়ে ২০১০ সালের মার্চ মাসে বান্দরবান শহরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রণজিত দাশের কণ্যা রুপা দাশকে বিয়ে করেন। সেই সুবাদে বান্দরবানে নিজের আস্তানা গড়ে তোলেন।

একপর্যায়ে শশুর বাড়ির সহযোগিতায় শহরের রোয়াংছড়ি বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় খোলেন খুচরা ওষুধের দোকান। সেখানেই চালাতে থাকেন চিকিৎসক পরিচয়ে চিকিৎসা। পরে ভুয়া চিকিৎসক হিসেবে জানাজানি হয়ে গেলে সেখান থেকে ফার্মেসী ব্যবসা গুটিয়ে নিয়ে জড়িয়ে পড়েন নানা অপকর্মে।

ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে নানা প্রতারণা করতেনি প্রিন্স সেন।

অপরদিকে নিজের আধিপত্য বোঝাতে মাঝে মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে মিছিল মিটিংয়েও সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে থাকেন। একপর্যায়ে নিজেকে কখনো পরিচয় দিতে থাকেন তরুন লীগের জেলার সভাপতি হিসেবে আবার কখনো বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের আহবায়ক হিসেবে।

প্রিন্সের যত অপকীর্তি:
বিয়ের পর থেকেই  স্ত্রীর ওপর যৌতুক দাবিতে অমানুষিক নির্যাতন চালাতে থাকেন কথিত ডাক্তার প্রিন্স সেন। এক পর্যায়ে বিয়ের দেড় বছরের মাথায় স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে হত্যার চেষ্টা করেন। ওই ঘটনায় স্ত্রী ও শশুর বাড়ীর লোকজনের করা মামলায় নয় মাস জেলও খাটেন তিনি। পরে স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় মুচলেকা দিয়ে স্ত্রীকে আবারো ঘরে তোলেন এক সন্তানের জনক ধূর্ত ও বাকপটু প্রিন্স।

বান্দরবান শহরে কালাঘাটার বাসিন্দা আওয়ামীলীগ নেতা মহরম আলী, বনরুপার বাসিন্দা সিরাজসহ রোয়াংছড়ি উপজেলার অনেক সহজ সরল মানুষকে প্রতারিত করার অভিযোগও আছে প্রিন্সের বিরুদ্ধে।

প্রিন্সের বক্তব্যঃ
স্ত্রী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপকর্মের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় কথিত তরুন লীগের নেতা প্রিন্সের কাছে। তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো অসত্য। আমি স্বচ্ছল ব্যক্তি। আমার গাড়ী বাড়ি সব আছে। শশুর বাড়ীর লোকজন আমার টাকায় চলে, তারা আমার ভালো চায়না। তারাই মূলত এসব কথাবার্তা ছড়াচ্ছেন।

প্রিন্স বলেন, আমি কেন্দ্র থেকে অনুমোদন নিয়ে তরুন লীগের কার্যক্রম পরিচালনা করছি। হিন্দু বৌদ্ধ মহাজোটেরও নেতৃত্ব দিচ্ছি। দলের নাম ভাঙ্গিয়ে আমি কোন সুবিধা নিচ্ছি না।

বিভিন্ন উপজেলায় ও সৃষ্টি করেন নিজের প্রভাব বলয়।

তবে, বান্দরবানের কথিত তরুন লীগ নেতা প্রিন্স সেন আওয়ামীলীগের কেউ নন বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইসলাম বেবী। তিনি জানান, তরুন লীগ বলতে আওয়ামীলীগে কোন সহযোগী সংগঠন নেই। কেউ নাম ভাঙ্গিয়ে কিছু করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ইসলাম বেবী আরো বলেন, প্রিন্সের নামে স্ত্রী নির্যাতন, প্রতারণাসহ নানা অভিযোগ পুরনো। দলীয় নাম ভাঙ্গিয়ে সে যাতে কোন ফায়দা হাসিল করতে না পারে সেদিকে তিনি সবাইকে সজাগ থাকতে বলেন।

স্বঘোষিত তরুণ লীগের নেতা নামধারী প্রিন্স সেনের বিরুদ্ধে স্ত্রী সন্তানকে নির্যাতন, চাকুরী দেবার নাম করে বিভিন্ন সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ আদায়, প্রতারণাসহ নানা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলাম বেবী এসব মন্তব্য করেন। এছাড়াও দলীয় সিনিয়র বেশিরভাগ নেতাই তার কর্মকান্ডে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।

প্রসঙ্গত, অব্যাহত স্ত্রী র্নিযাতনের ঘটনায় বাধ্য হয়ে গত মঙ্গলবার বান্দরবান সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন স্ত্রী রুপা দাশ। গ্রেফতার এড়াতে ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন তিনি।
মামলার তদন্তাকারী কর্মকর্তা সাব ইন্সপেক্টর জিয়াউর রহমান বলেন, এই ঘটনায় প্রিন্সকে খুঁজছি আমরা। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেয়ার করুন