নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের শেষ বাজেট প্রস্তাব ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এতে সব কূল রক্ষা করার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার বড় হলেও তাতে জনগণের ওপর বাড়তি করের চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা নেই। সংসারের খরচ বাড়ায় যারা করমুক্ত আয়সীমা বাড়বে বলে স্বপ্ন দেখছিল, তাদের চাওয়া পূরণ করতে না পারলেও এটি যে দরকার ছিল সে কথা স্বীকার করেছেন অর্থমন্ত্রী। দেশীয় শিল্পের জন্য উদারহস্তে প্রণোদনার ব্যবস্থা রেখেছেন তিনি। নিরুৎসাহ করেছেন দেশে উৎপাদিত হয় এমন পণ্যের আমদানি। তবে সম্পদশালী ও কর ফাঁকিবাজদের শক্ত করে ধরার কৌশলও রেখেছেন বাজেটে।
গত বছর বিতর্কিত নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের কথা বলে সব পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করতে চেয়ে চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। তাতে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে। পরে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সেখান থেকে পিছু হটেন মন্ত্রী। এবার জনগণের ওপর কর ও ভ্যাটের বাড়তি ভার না চাপিয়েই চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করে চাপমুক্ত হয়েছেন অর্থমন্ত্রী নিজেও। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা এই বাজেটের সুফল হিসেবে পাঁচ-ছয় মাস পরে হতে যাওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের কাছ থেকে প্রতিদান পাওয়ার আশা করেছেন তিনি।
বাজেটে সরকারি চাকুরেদের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কৃষক যাতে উৎপাদিত চালের ন্যায্যমূল্য পায় সে জন্য আমদানি শুল্ক পুনর্বহাল করা হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো পণ্য ও সেবায় বাড়তি শুল্ককর আরোপ না থাকায় ভোক্তাদেরও কপালে ভাঁজ পড়েনি। দেশি শিল্পকে প্রণোদনা দেওয়ায় ব্যবসায়ীরাও বাজেটকে স্বাগত জানিয়েছেন। কর্মসংস্থান বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা বলে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বেকারদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা আছে বাজেটে।
‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে ১১০ পৃষ্ঠার বাজেট বক্তৃতায় ২০০৯ সাল থেকে টানা ১০টি বাজেটের সারমর্ম উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী। তুলে ধরেছেন ধারাবাহিক অগ্রগতির কথা, অকপটে স্বীকার করেছেন কিছু হতাশার কথাও। তিনি বলেছেন, ‘আজ দেশ-বিদেশে সবাই স্বীকার করে যে এ ১০ বছরে দেশ অনেকখানি এগিয়েছে। তবু স্বপ্নের সীমারেখা এখনো স্পর্শ করা যায়নি।’ তবে উচ্চ প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সমাজ ও রাষ্ট্রে ন্যায্যতা ও সমতা নিশ্চিত করতে না পারার ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। সামনের দিনগুলোতে বৈষম্য দূর করে টেকসই উন্নয়ন করার মাধ্যমে এর সুফল সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন ৮৪ বছর বয়সী মুহিত।
বাজেট প্রণয়নের সময়ও যে অর্থমন্ত্রী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেছেন, তা স্পষ্ট করেছেন নিজের বক্তব্যেই। দেশের মানুষের সার্বিক মুক্তির কাণ্ডারি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আবারও ক্ষমতায় আসার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা’ ও দেশের জনগণের সার্বিক মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য যোগ্য নেতৃত্ব এবং উন্নয়ন পরিকল্পনার ধারাবাহিকতা দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘আমি নিশ্চিত যে সেই নেতৃত্ব জননেত্রী শেখ হাসিনা আগামীতেও আমাদের দেবেন। আল্লাহতায়ালার কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি তাঁর সীমাহীন রহমত এ ক্ষেত্রেও বর্ষণ করবেন।’
শুল্ককরে ছাড় দেওয়ার মাধ্যমে দেশীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ভোক্তাদেরও স্বস্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে বাজেট প্রস্তাবে। বেসরকারি খাতের বিপুলসংখ্যক মানুষের জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা ভবিষ্যতে চালু করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিজীবীদের ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহঋণ দেওয়া হবে। ১ জুলাই বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার সময় থেকেই এই ঋণ সুবিধা নিতে পারবেন তাঁরা। পেনশনার ও সরকারি চাকরিজীবীদের হয়রানি কমাতে একটি পেনশন অফিস স্থাপন করার ঘোষণা দিয়েছেন মুহিত। নতুন করে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ১১ লাখ মানুষকে নগদ ভাতা ও খাদ্য সহায়তা দেবে সরকার। মুক্তিযোদ্ধাদের পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বিজয় দিবস ভাতা।
বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়েছে, সরকার সারা দেশে এক হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করবে। নির্বাচন সামনে রেখে এবার গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ এবং পল্লী অবকাঠামো উন্নয়নে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। বিপুল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে পুরোপুরি কাজে লাগানোর জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি ও দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রমে আরো গতি সঞ্চার করার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। উচ্চ প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি যোগাযোগ-বিদ্যুৎ-জ্বালানি অবকাঠামো বিনির্মাণ ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির আয়োজন রয়েছে।
বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে ২০৩০ সালের মধ্যেই ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে মোট ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে বিনিয়োগকারীদের জমি পাওয়ার সংকটের সমাধান হবে, অবকাঠামোগত সংকট দূর হবে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা সম্ভব হলে অতিরিক্ত চার হাজার কোটি ডলার রপ্তানি হবে, কর্মসংস্থান হবে এক কোটি মানুষের। বিভিন্ন শিল্প খাতে বড় ধরনের ছাড় দেওয়া হয়েছে বাজেটে। ওষুধ শিল্পে অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক রেয়াত দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। টেক্সটাইল শিল্পের কিছু কাঁচামাল আমদানিতে মওকুফ করা হয়েছে শুল্ক। দেশে রড ও ইস্পাতের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ শিল্পের কাঁচামাল ফেরো অ্যালয়ের সম্পূরক শুল্ক ১৫ থেকে ১০ শতাংশ করা হয়েছে, আমদানি ক্ষেত্রে প্রতিটনে শুল্ক এক হাজার টাকা থেকে ৮০০ টাকা করা হয়েছে। দেশীয় টিভি, ফ্রিজ, মোটরসাইকেল, টায়ার-টিউব ও মোবাইল ফোন উৎপাদক প্রতিষ্ঠানকে শুল্ককরে ছাড় দিয়ে এসব পণ্য আমদানিতে বাড়তি করারোপ করা হয়েছে। ফলে এসব খাতে বিনিয়োগ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তৈরি পোশাক শিল্পে করপোরেট করহার বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতের সবুজ কারখানার কর ১০ থেকে ১২ শতাংশ, পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত কারখানার কর ১২ থেকে ১২.৫ শতাংশ এবং নিবন্ধিত নয়, এমন কারখানার কর ১২ থেকে ১৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও মালিকদের চাপে প্রতিবছর পোশাক খাতের প্রস্তাবিত করহার কমাতে হয় বাজেট পাস করার আগেই।
মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন অর্থমন্ত্রী। অচিরেই বাংলাদেশ উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হবে বলে আশার বাণী শোনান তিনি। তবে ৯ বছর আগে এক লাখ ১৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণার পর এ সরকারের টানা ১০টি বাজেট দেওয়া অর্থমন্ত্রী প্রতিবার বাজেটের আকার যে হারে বাড়িয়েছেন, বাস্তবায়নের হার সে তুলনায় কমেছে। বাজেট বাস্তবায়নে গতি আনতে নানা পরিকল্পনা করেও সফল হতে না পারার হতাশা রয়েছে তাঁর নিজের মধ্যেও। তবে আগামী দিনে বাস্তবায়ন বাড়বে বলে আশা করেন তিনি। মুহিত বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আগামীতে আমরা অনেক ভালো অবস্থানে থাকব।’ এ জন্য এখন থেকে বাজেট অনুমোদনের পর, অর্থাৎ ১ জুলাই থেকেই প্রকল্প পরিচালকরা প্রকল্পে ইচ্ছামতো অর্থ খরচ করতে পারবেন।
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে অনেক সফলতার মধ্যে বিভিন্ন খাতে হতাশার চিত্রও উঠে এসেছে। দেশে যে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি, শিক্ষার মানে যে উন্নতি হয়নি, সেসব কার্যত স্বীকার করেছেন তিনি। সবার জন্য গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে এখাতে বাজেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যার পরিমাণ ৫৩ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। প্রতিবছর যেখানে ২০ লাখ তরুণ কর্মবাজারে প্রবেশ করে, সেখানে গত ১০ বছরে সরকারের উদ্যোগে মাত্র এক লাখ ৮২ হাজার ৭৫৬ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
শিল্প খাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমেই একটি দেশের প্রকৃত অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আতঙ্কের তথ্য দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, কর্মসংস্থানে শিল্প খাতের অবদান আশানুরূপ নয়। ২০১০ সালে শিল্প খাতে মোট কর্মসংস্থানের অংশ ছিল ২২.৩ শতাংশ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা ২০.৩ শতাংশে নেমে এসেছে।
বাজেটে অবকাঠামো খাতে বরাবরের মতোই বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নয়ন হলেও এখনো তা সবার জন্য নিশ্চিত করা যায়নি। সরকার বিদ্যুৎ সংযোগ সম্প্রসারণ করছে। আর শিল্পে গ্যাস সংযোগ নিশ্চিত করতে এলএনজি আমদানি হচ্ছে। বাজেটে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ খাতে ২৪ হাজার ৯২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে।
দেশের পশ্চিমাঞ্চলে ৬১টি সেতু নির্মাণ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ অবস্থানে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণে সরকারের পরিকল্পনার কথা রয়েছে বাজেট বক্তৃতায়। কর্ণফুলী ট্যানেল নির্মাণকাজ ২০২২ সালে শেষ হওয়ার আশাবাদ প্রকাশ করেছেন মুহিত। যমুনা নদীর ওপর ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু’ নির্মাণ করার কথাও জানান তিনি। দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের মধ্যে সরাসরি চলাচলের সুযোগ তৈরির জন্য এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত করে ঢাকা ইস্ট ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
ঢাকায় ২০২০ সালের মধ্যে মেট্রো রেল নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার আগেই আগামী অর্থবছর শুরু হবে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজ। ঢাকার জন্য নিউ ইয়র্কের আদলে একটি মেট্রো যোগাযোগ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার কথা বললেন অর্থমন্ত্রী। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু, তুরাগ ও হালদা নদী দখল ও দূষণ থেকে রক্ষায় অনেক উদ্যোগ নিয়েও সফলতা নেই সরকারের। তবুও এসব নদী নিয়ে তিনি শোনালেন আশার বাণী। তিনি বলেন, এসব নদীকে ‘সংকটাপন্ন এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করে সংরক্ষণের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাজেট বক্তৃতায় কিছু সুন্দর সুন্দর কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। যেমন—জাতীয় আয়ে শিল্প খাতের অবদান এখনকার ৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো কবে, কিভাবে বাস্তবায়িত হবে—সে সম্পর্কে কিছুই বলা নেই। পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে তিন কোটি মানুষকে স্থায়ীভাবে দারিদ্র্যমুক্ত করার কথাও বলেছেন তিনি। সরকারি পাটকলগুলোর লোকসান থেকে রেহাই পেতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) মাধ্যমে পরিচালনা করা দরকার বলে মত দিয়েছেন। জাহাজশিল্পের গৌরব পুনরুদ্ধারের কথা বলেছেন।
বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে জেলা বাজেট প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করতে না পারা মুহিত প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করতে ভোলেননি। স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণে জোর দিয়ে তিনি বলেন, রাজস্ব আয়ের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারেরই থাকবে। তবে জেলা সরকারের দায়িত্ব হবে ৬০ শতাংশ ব্যয় করা। এই ব্যবস্থাটি আগামী নির্বাচনের পরই বাস্তবায়নের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী ইশতিহারে বিভিন্ন দলকে এ বিষয়ে তাদের ধারণা ও কার্যক্রম প্রকাশ করতে হবে।…প্রায় দুই দশক ধরে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যেভাবে হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনে আমরা এখন প্রস্তুত এবং সেটি করতে হলে শাসন কাঠামো ঢেলে সাজাতে হবেই হবে।’
ব্যয় বাড়িয়ে এবং শুল্ককর ও ভ্যাটে ছাড় দিয়ে জনগণকে রুষ্ট না করার চেষ্টার এই বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আয় করতে হবে দুই লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। এটি বিদায়ী বছরের মূল বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭১ হাজার ২০১ কোটি টাকা বেশি। এই বাড়তি অর্থ আদায়ে করদাতাদের ওপর ভরসা রেখেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, আয়করব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে। ভ্যাট ও করে অনলাইনব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। এর সুফল মিলবে।
‘বিভিন্ন দপ্তর ও এজেন্সির নিকট করদাতার যে আর্থিক তথ্য থাকে তা কর বিভাগের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শেয়ার করার বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করছি। এর ফলে কর ফাঁকি মোকাবেলা অনেক সহজ হবে।’ এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলতে চেয়েছেন, কেউ ব্যাংকে, শেয়ারবাজারে, সঞ্চয়পত্র কিংবা অন্য কোনো স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করলে সংশ্লিষ্ট খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওই তথ্য এনবিআরকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানাবে। ফলে কেউ কর দেওয়ার সময় সম্পদের তথ্য গোপন রেখে ফাঁকি দিতে পারবে না।
বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো যাতে রাজস্ব ফাঁকি দিতে না পারে, সে জন্য ইসিআর ব্যবহারের পরিবর্তে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) স্থাপন বাধ্যতামূলক হচ্ছে। এর মাধ্যমে এনবিআর ও ইএফডি ব্যবহারকারীদের মধ্যে অনলাইন সংযোগ স্থাপিত হবে। এতে রাজস্ব আয় বাড়বে। হেলিকপ্টার সার্ভিসের ওপর ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সতর্কতার সঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে কর-ভ্যাট বাড়াতে হয়েছে অর্থমন্ত্রীকে। তাঁকে খেয়াল রাখতে হয়েছে সাধারণ মানুষের ওপর যাতে চাপ না পড়ে, দেশি শিল্প যাতে সুরক্ষা পায়। আয় বাড়াতে হলে যাদের সম্পদ আছে, করযোগ্য আয় আছে অথচ করের আওতার বাইরে রয়ে গেছে এমন মানুষের প্রতি নজর দিতে হবে তাঁকে। প্রস্তাবিত বাজেটে দুটি গাড়ি বা সিটি করপোরেশন এলাকায় আট হাজার বর্গফুট বা তার বেশি আয়তনের গৃহ-সম্পদ থাকলে তাঁকে এবার প্রথমবারের মতো আয়করের ১০ শতাংশ হারে সারচার্জ দিতে হবে। কারও নিট সম্পদের মূল্য সোয়া দুই কোটি টাকার বেশি হলে ন্যূনতম তিন হাজার টাকা সারচার্জ দিতে হয়। এটি ১০ হাজার করা হয়েছে।
রাজস্ব প্রশাসনকে উপজেলা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে এনবিআরের।