সাহারা মালভূমির সুর ভেসে বেড়ালো আর্মি স্টেডিয়ামের মাঠে। ইরানের দল শোনালো পারস্যের ঐতিহ্যবাহী লোকগান। ছিলেন ভারতের বাসুদেব বাউল। দেশের শিল্পী শাহনাজ বেলী এবং শাহ আলম সরকার ও আলেয়া বেগমের গান শেষবারের মত মাতালো আর্মি স্টেডিয়াম। নানা দেশের লোকগানের সুরে মেতে মেরিল নিবেদিত ‘ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোকফেস্ট’ এবছরের মত বিদায় জানালো। সেইসঙ্গে সামনের বছর নতুন আঙ্গিকে বড় পরিসরে আয়োজনের আমন্ত্রণও জানালেন আয়োজকরা।
বাংলার সমৃদ্ধ লোকসঙ্গীত কী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে? কিংবা হারিয়ে ফেলছে কী তার স্বকীয়তা? কিংবা ফিউশন সঙ্গীতের নামে লোকসঙ্গীতের যে পরিবর্তন ও আধুনিকীকরণ হচ্ছে এটা কী ঠিক হচ্ছে? এ সব যুক্তি-তর্কই উড়ে গেলো শাহনাজ বেলী যখন গান ধরলেন। গানের বাণী যখন মানুষকে স্পর্শ করে তখন আর যুক্তি খাটে না। শাহনাজ বেলীর গান যেন সেই প্রমাণ নিয়ে হাজির হলো দর্শকদের সামনে।
কুষ্টিয়ার পশ্চিম আফদালপুরের এ শিল্পী ছোটবেলা থেকেই ফকির লালন সাঁইয়ের সমাধিসৌধে সঙ্গীত পরিবেশন করতে শুরু করেন। হলিউড ফোক পুরস্কারে ভূষিত এ শিল্পী প্রথমেই গেয়ে শোনান ফকির লালন সাঁইয়ের গান ‘চাতক মেঘের জল বিনে’ গানটি। একে একে গেয়ে শোনান শাহ্্ আবদুল করিম ও হাছন রাজার গান।
দিনের প্রথম পরিবেশনা ছিল বাংলাদেশের প্রখ্যাত দুই লোকশিল্পী শাহ আলম সরকার ও আলেয়া বেগমের যুগলবন্দি। তারা পালাগানের লড়াইয়ে অংশ নেন, যার নাম ‘শরিয়ত-মারফত’।
এদিকে, আয়োজনের ফাঁকেই হয়ে গেল উত্সবের সমাপনী পর্ব। এ পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, লোকসঙ্গীত শিল্পী নাশিদ কামাল। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ফোক ফেস্টের আয়োজক সান কমিউনিকেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আজকে একইসাথে আনন্দ ও শোকের দিন। আনন্দ হচ্ছে আমরা অসাধারণ তিনটি দিন কাটিয়েছি। শোক এজন্য যে আজ তা শেষ হয়ে যাচ্ছে।
নাশিদ কামাল বলেন, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, শাহ আবদুল করিম, বাউল, জারি সারির সাথে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে সঙ্গীতের সাথে মিশে গেছে আমাদের প্রাণ।
অঞ্জন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ও সারা বাংলার আনাচে-কানাচে লোক গানের যে শিল্পীরা রয়েছেন, তারাই আমাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে এই আয়োজন করতে।
সমাপনী পর্ব শেষে বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত তার দেশের ‘কান্ট্রি সং’ শুনিয়ে মুগ্ধ করেন দর্শকদের। এরপরেই আসে ইরানের দল রাস্তাক।
ইরানের লোকগানের দল ‘রাস্তাক’ বিশ্বজুড়েই সমাদৃত তাদের ফিউশন ফোকের জন্য। গতকাল বাংলাদেশের দর্শকদের গানে গানে মাতালেন জনপ্রিয় এই ব্যান্ডের শিল্পীরা।
শান্তি নিকেতনের বাতাসে, গাছের পাতায় খেলা করে বাসুদেব দাস বাউলের গান। পশ্চিমবঙ্গের এ শিল্পী বাউল এবং ঝুমুর গানের দারুণ সম্ভার নিয়ে হাজির হয়েছিলেন আর্মি স্টেডিয়ামে।
এবারের আয়োজনের সর্বশেষ পরিবেশনা নিহোজির ছিল আফ্রিকার দেশ মালির লোকগানের দল তিনারিওয়েন। লোকসঙ্গীত ছাড়াও ব্লুজ, রকের সঙ্গে সমসাময়িক গানের সুরের মিশ্রণে নিজেদের পরিবেশনা সাজায় দলটি। দলটির প্রধান ইব্রাহিম আগ আলহাবিব টিনের পাত্র ও সাইকেলের ব্রেকের তার দিয়ে নিজেই বানান একটি গিটার। শুরু করেন স্থানীয় লোকসঙ্গীত ও আরবের আধুনিক পপঘরানার গান গাইতে।
তিনারিওয়েনের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত উত্সবের তৃতীয় আসর।