ভুটান শহরে বাংলাদেশের ছোট ছোট মেয়েরা এখন সবার আদরের হয়ে ওঠেছেন। মেয়েরা যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই ভুটানিজদের আদর পাচ্ছেন। সেমিফাইনালে ভুটানের মাঠে ভুটানকে হারিয়ে আজ ফাইনালে ভারতের সামনে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।
চোখ ধাঁধানো ফুটবল নৈপূণ্যের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মারিয়া মান্ডা, তহুরা, নাজমা, আনাই মগিনি, মনিকা, আঁখিদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। বাংলার মেয়েদের এই সাফল্যের কথা শুনেছেন ভুটানের রাজাও।
ভুটানে বাংলাদেশের মেয়েরা এখন সাফল্যের প্রতীক। মাত্র সাত মাসের অনুশীলনেই তারা পাকিস্তান, নেপাল ও ভুটানকে হারিয়েছে। আর ভুটানের কোরিয়ান কোচ এক বছর তালিম দিয়েছেন। অথচ সেই মেয়েরা বাংলাদেশের মেয়েদের কাছে পাত্তাই পায়নি। ৫-০ গোলে হেরেছে। এই সব কথা ভুলে গিয়েছেন বাংলার মেয়েরা। আজ ফাইনাল নিয়েই ভাবছেন সবাই। মনিকা, মারিয়াদের একটাই কথা আজ ভারতের বিপক্ষে হবে আসল খেলা। গ্রুপ পর্বে ১৪-০ গোলে পাকিস্তানকে হারানো, ৩-০ গোলে নেপালকে হারানো কিংবা সেমিফাইনালে ৫-০ গোলে ভুটানকে হারানোর সাফল্য ভুলে গিয়ে ভারত বধের ছঁক আঁকছেন খেলোয়াড়, কোচ এবং দলের সকলে।
সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে আজ বাংলাদেশ ও ভারতের খেলা শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায়। সবার চোখ থাকবে ফাইনালের মঞ্চে। টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। আরেক বার ট্রফি অর্জন করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করবে মেয়েরা। তারা ফুটবল ছুঁয়ে শপথ নিয়েছেন। যেভাবেই হোক ভারতকে হারিয়ে দেশবাসীকে আকেরটি ট্রফি এনে দিতে চান মেয়েরা।
টানটান উত্তেজনা এখন ভুটানে। এই ভারতকে ঢাকায় প্রথম সাফের আসের একবার নয়, দুই বার হারিয়েছিল বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল দল। চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল গত ডিসেম্বরে, কমলাপুর স্টেডিয়ামে। লিগ খেলায় ৩-০ এবং ফাইনালে ১-০ তে হারিয়েছিল ভারতকে। সে সব স্মৃতি বাংলাদেশকে রোমাঞ্চিত করলেও স্পর্শ করে না মাহমুদা আক্তার, তহুরা খাতুন, নীলা, মনিকা, শামসুন নাহার, আনুচিংদের। কারণ তারা জানে ভারত অনেক শক্তিশালী। ভারত মনে করছে ফাইনালে শুধু জয় নয়, প্রতিশোধের খেলা হবে আজ। কিন্তু বাংলাদেশের মেয়েদের কানে জয়ের মন্ত্র ঢেলে দিয়েছেন কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটন, বাফুফের ষ্ট্র্যাটেজিক ডিরেক্টর অস্ট্রেলিয়ান পলস্মলী ও দলের সহকারী কোচ সিনিয়র ফুটবলার সাতক্ষীরার মেয়ে সাবিনা খাতুন।
আজকে ভুটানিজদের বেশির ভাগই ভারতের পক্ষে থাকবে। কিন্তু অনেক ভুটানিজ আছেন যারা বাংলাদেশের মেয়েদের খেলায় মুগ্ধ হয়েছেন। সংখ্যায় কম হলেও তারা আজ ভুটানে অবস্থানরত বাংলাদেশি দর্শকদের সঙ্গে খেলোয়াড়দের উত্সাহ দেবেন। আর সেই উত্সাহে মাঠে তেড়ে ফুঁড়ে উঠবেন মেয়েরা।
গতকাল কোচ ছোটন সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, তার দল স্বাভাবিক খেলাটা খেলবে। যে ছন্দে রয়েছে সেটাই তিনি ধরে রাখতে চান। বললেন, ‘এই কটা দিন আমরা যে খেলাটা খেলেছি তার চেয়েও ভালো খেলবো আমরা।’ সহকারী কোচ সাবিনা খাতুন বলেন, ‘এখন সময় হয়েছে নিজেদের প্রমাণ করার। এত দিন যা খেলেছি আমরা তার চেয়েও কঠিন লড়াই হবে আজ ভারতের বিপক্ষে। এখানেই আমাদের শক্তিমত্তা দেখাতে হবে। আমরা সেরা সেটা আজ প্রমাণ করতে হবে।’
দলের অধিনায়ক মারিয়া মান্ডা বলেন, ‘ভারত অনেক শক্তিশালী দল। তাদের অভিজ্ঞতাও অনেক বেশি। অভিজ্ঞ ফুটবলার দলে আছেন। যারা পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে সব দিকেই।’ গোলকিপার মাহমুদা আক্তার এখনও কোনো গোল হজম করেননি। আজকেও তার লক্ষ্য ভারতকে হতাশ করবেন। বলেছেন, ‘যেভাবে গত তিনটি খেলায় গোলবার আগলে রেখেছিলাম সেভাবেই আজ ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশকে আগলে রাখব।’ ষ্ট্রাইকার তহুরা খাতুন যেন আরো বেশি আক্রমণাত্বক। তিনি বললেন, ‘আমরা ফাইনালের ট্রফি জিততে এসেছি। আমার লক্ষ্য হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব গোল করা। আমি গোল করতে চাই।’