বাংলাদেশের ডিটারজেন্টে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান পাওয়া গেছে এক গবেষণায়

বাংলাদেশে প্রচলিত প্রায় সব ব্র্যান্ডের ডিটারজেন্টে এমন কিছু উপাদান শনাক্ত হয়েছে যার সংস্পর্শে ত্বকের এলার্জি, চর্মরোগ, কিডনির রোগ এমনকি জেনেটিক মিউটেশনের মতো সমস্যা হতে পারে।

এছাড়া এই ডিটারজেন্ট যদি পানিতে মিশে যায় – তাহলে তা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির সঙ্গে বিক্রিয়া করে। তখন এর রাসায়নিক গঠন ভেঙে তৈরি হতে পারে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী মারাত্মক উপাদানও।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নাহিন মোস্তফা নিলয়ের গবেষণায় এসব তথ্য উঠে আসে।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এই গবেষণার কাজ শুরু করেন তিনি। গত মাসে গবেষণার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) জমা দেন তিনি।

গবেষণা কাজের জন্য তিনি বাজার থেকে জনপ্রিয় ও বহুল-ব্যবহৃত প্রায় ১০টি ব্র্যান্ডের ডিটারজেন্ট পাউডার নিয়ে পরীক্ষা চালান।

সেখানে তিনি দেখতে পান যে বেশিরভাগ ডিটারজেন্টেই রয়েছে ক্ষতিকর ফ্লুরোসেন্ট হোয়াইটেনিং এজেন্ট। যেটা টিনোপোল নামেও পরিচিত। এটি মূলত কাপড়কে সাদা করতে ও উজ্জ্বলতা বাড়াতে ব্যবহৃত হয়।

বাংলাদেশের বাজারে যেসব ডিটারজেন্ট বিক্রি হচ্ছে, সেগুলোর বেশিরভাগে এই উপাদানটির পরিমাণ আদর্শ মাত্রার চাইতে অনেক বেশি বলে জানান মি. নিলয়।।

মূলত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের বিভিন্ন জলাশয়ের পানির মান পরীক্ষা করতে গিয়ে ফ্লুরোসেন্ট হোয়াইটেনিং এজেন্টের সন্ধান পান তিনি।

সেই থেকেই তিনি গবেষণা শুরু করেন। পরে ইউজিসির একটি প্রকল্পে কাজ করতে গিয়ে তিনি পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কাছের পানির নমুনায় এই এজেন্ট শনাক্ত করেন।

তার ধারণা, দেশের অন্যান্য নদীতেও এই উপাদান পাওয়া যেতে পারে। কারণ বাংলাদেশের বাসাবাড়ি ও শিল্পকারখানায় কাপড় ধোয়ার এই রাসায়নিক-যুক্ত পানি সরাসরি নদীনালা ও জলাশয়ে ফেলা হয়।

এই রাসায়নিক পদার্থ এতটাই ক্ষতিকর যে পানি শোধনাগারেও তা সম্পূর্ণরূপে দূর করা যায় না।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি সর্বাধুনিক ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টও পানি থেকে পুরোপুরি ফ্লুরোসেন্ট হোয়াইটেনিং এজেন্ট পরিশোধন করতে পারেনি বলে জানান মি. নিলয়।

অর্থাৎ এই উপাদানটি একবার পানিতে মিশে গেলে, ওই পানি আর শতভাগ পরিশোধন করা সম্ভব না।

বরং পানি শোধনের জন্য যে রাসায়নিক ব্যবহৃত হয়, উল্টো সেটার সঙ্গে বিক্রিয়ার ফলেও বাই-প্রোডাক্ট হিসেবে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থ তৈরি হতে পারে বলে মি. নিলয় উল্লেখ করেন।

তবে কোন কোন ব্র্যান্ডের ডিটারজেন্টের ওপর তিনি পরীক্ষা চালিয়েছেন সেগুলোর নাম তিনি প্রকাশ করেননি।

মি. নিলয়ের প্রত্যাশা, তার এই গবেষণা মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে কাজে আসবে।

এছাড়া ডিটারজেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের পণ্যে ক্ষতিকর কেমিক্যালগুলো সহনীয় মাত্রায় ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হবে বলেও তিনি আশা করেন।

গবেষণাকাজে তিনি পানির ক্ষতিকর উপাদানের মাত্রা পরিমাপে ব্যবহার করেছেন সর্বাধুনিক এক পদ্ধতি ।

ইউজিসির অধীনে গবেষণাটির তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করেছেন পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শফি মুহাম্মদ তারেক। তার মতে এই গবেষণা সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

প্রতিবেদনটি বিবিসি বাংলা অনলাইন থেকে নেয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন