বাংলা সাহিত্যকে নানা যুগে নানা কবি সাহিত্যিক নানা ভাবে সমৃদ্ধ করে চলেছেন। এই অসংখ্য কবি সাহিত্যিকের মাঝে অল্পকিছুজন মাত্র এখনো আমাদের ভাবনার খোরাক যোগায়, প্রেরণার উৎস হয়। তেমনি বাংলা সাহিত্যের দুই নক্ষত্র বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ।
বর্ষায় যেমন নদী তার যৌবন ফিরে পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে দু’কূল ভাসায় ঠিক তেমনি এই দুই কবি আমাদের ব্যাক্তি ও জাতীয় জীবনে এখনো উচ্ছ্বসিত করে, মোহিত করে তাঁদের সৃষ্টি সুধার জাদুতে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে তাঁরা যেখানে আজীবন আমাদের অসাম্প্রদায়িকতার বাণী শুনিয়েছেন, মানবতার জয়গান গেয়েছেন সেখানে আজো আমরা তাঁদের সাহিত্যকর্ম নিয়ে সাম্প্রদায়িক বিভেদ করি।
পদ্মাপাড়ের বাঙালির আত্মানুসন্ধান ও আত্মপ্রতিষ্ঠার সম্পদ এই দুই মহান কবি। একজন কোলকাতার জোড়াসাঁকোর আরেকজন বর্ধমানের চুরুলিয়ার । বিশ্বকবি কিংবা বিদ্রোহী কবি তাঁদের বাইরের পরিচয় হলেও তাঁদের আত্মার পুষ্টি এসেছিল এই পুর্ব বাংলার রূপ-রস-গন্ধে। তাই হয়তো, দুজনই চেয়েছিলেন অবিভক্ত ভারত।
তাই বাংলার বদনখানি মলিন হলে রবীন্দ্রনাথ যেমন নয়ন জলে ভেসেছেন আর চির সবুজ স্নিগ্ধ মনোরম বাংলাকে নমস্কার করেছেন বিদ্রোহী কবি। ১৯০৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ইংরেজদের ‘ডিভাইড এন্ড রুল’ পলিসির বাস্তবায়ন রোধ করতে বাউল সুরে লিখলেন আমার সোনার বাংলা যা বর্তমানে আমাদের জাতীয় সংগীত। অপরদিকে, নজরুল ১৯৪০ সালে পাকিস্তান আন্দোলনের বিরোধিতায় সাপ্তাহিক যুগান্তরে সম্পাদকীয় লেখেন ‘পাকিস্তান না ফাঁকিস্তান’ । এর জন্য বিদ্রোহী কবিকে চোরাগোপ্তা হামলারও শিকার হতে হয়। আমৃত্যু তিনি সেই ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়িয়েছেন।
ধর্মান্ধরা আগেও ছিলো এখনো আছে। এরা সমাজে বিভেদ, হিংসা, বিদ্বেষ ছড়ানো ছাড়া আর কিছু পারে না। এ কারণেই তাই কবি শামসুর রাহমান বলেছিলেন, ‘আমি ধর্মের বিরুদ্ধে না ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে’। ধর্মান্ধরা নিজের ধর্মতো ঠিকভাবে পালন করেই না বরঞ্চ অন্য ধর্মের নিন্দা ও সমালোচনা করতে দ্বিধাবোধ করে না। এরাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে সমাজে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে নিজের আখের গোছায়। নজরুল এদের মুখোশ খুলে দিয়েছিলেন তাঁর ‘মানুষ’ কবিতায়।
ছেলেবেলায় রবীন্দ্র-নজরুল সম্পর্কে অনেক ভিত্তিহীন গালগল্প শুনেছি। যেমনঃ নোবেল প্রাইজ পাওয়ার কথা ছিল আসলে কাজী নজরুল ইসলামের। কিন্তু হিন্দুরা বেইমানি করে তা রবীন্দ্রনাথকে পাইয়ে দেয়। সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে পরে জানলাম কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১৮৯৯ সালের ২৪ মে। আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ১৮৬১ সালের ৭ মে। দুজনের বয়সের ব্যবধান প্রায় ৩৮ বছরের। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলি প্রকাশিত হয় ১৯১১ সালে আর তিনি নোবেল পুরস্কার পান ১৯১৩ সালে। অর্থাৎ গীতাঞ্জলি যখন প্রকাশিত হয় তখন কাজী নজরুলের বয়স ১২ এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন নোবেল পুরস্কার পান তখন কাজী নজরুল ইসলামের বয়স প্রায় ১৪ বছর। তাঁরা দুজনেই জন্মেছিলেন মে মাসে আবার তাঁদের মহাপ্রয়াণও হয় অগাস্ট মাসে। একজন ‘সঞ্চয়িতা’র কবি অন্যজন ‘সঞ্চিতা’র কবি।
রবীন্দ্রনাথের বয়স তখন ষাট আর নজরুলের বাইশ। কলকাতা পাবলিক লাইব্রেরিতে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সভায় ঢুকেই নজরুল মঞ্চে গিয়ে কবির চরণধূলি নিয়ে মঞ্চ থেকে নেমে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনই কবিগুরু তাঁর হাত খপ করে ধরে বললেন, ‘না নজরুল। তুমি নীচে নয়। তুমি এই সভায় আমার পাশেই বসবে’। ষাট বছরের কবির পাশে বাইশ বছরের বিদ্রোহী কবি। সম্পর্কের নৈকট্য এখানেই অনুমেয়।
১৯২১ সালে ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রথমবার শান্তি নিকেতনে যান। তাঁর যাত্রাপথের সঙ্গী ছিলেন কবি নজরুল। কলকাতা থেক শান্তিনিকেতনের দুই ঘণ্টার পথে গীতাঞ্জলির সব কবিতা তিনি একটার পর একটা শোনান ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহকে। এর জন্য তাঁর কোনো বইয়ের সাহায্য নিতে হয়নি।
কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘বিশ্বকবিকে আমি শুধু শ্রদ্ধা করে এসেছি সকল হৃদয়-মন দিয়ে, যেমন করে ভক্ত তার ইষ্টদেবতাকে পূজা করে। ছেলেবেলা থেকে তার ছবি সামনে রেখে গন্ধ-ধূপ, ফুল-চন্দন দিয়ে সকাল সন্ধ্যা বন্দনা করেছি। এ নিয়ে কত লোক ঠাট্টা বিদ্রুপ করেছে।’ কথাশিল্পী মনিলাল গঙ্গোপাধ্যায় একদিন নজরুলের এই ভক্তি-শ্রদ্ধার কথা নজরুলের উপস্থিতিতেই কবিগুরুকে বললেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হেসে বলেছিলেন, ’যাক আমার আর ভয় নেই তাহলে’ । নজরুল সঙ্কোচে দূরে গিয়ে বসলেও রবীন্দ্রনাথ সস্নেহে তাকে কাছে ডেকে বসিয়েছেন। নজরুল নিজেই লিখেছেন, ‘তখন আমার মনে হতো আমার পূজা সার্থক হলো, আমি বর পেলাম।’
‘বসন্ত’ গীতিনাট্যটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কাজী নজরুল ইসলামকে উৎসর্গ করেন। নজরুল তখন আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দী। কবি পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়ের মাধ্যমে জেলখানায় বইখানি পাঠিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি উৎসর্গপত্রে নজরুলকে ‘কবি’ বলে অভিহিত করে লেখেন, ‘জাতির জীবনের বসন্ত এনেছে নজরুল। তাই আমার সদ্য প্রকাশিত ‘বসন্ত’ গীতিনাট্যখানি কবি নজরুলকে উৎসর্গ করছি’। এতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছাকাছি থাকা অনেক কবি-সাহিত্যিক অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন তাঁর প্রতি। এর জবাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়সহ উপস্থিতজনদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমার বিশ্বাস তারা নজরুলের কবিতা না পড়েই এই মনোভাব পোষণ করছে। আর পড়ে থাকলেও তার মধ্যে রূপ ও রসের সন্ধান করেনি, অবজ্ঞাভরে চোখ বুলিয়েছে মাত্র।… কাব্যে অসির ঝনঝনা থাকতে পারে না, এও তোমাদের আবদার বটে। সমগ্র জাতির অন্তর যখন সে সুরে বাঁধা, অসির ঝনঝনায় যখন সেখানে ঝংকার তোলে, ঐকতান সৃষ্টি হয়, তখন কাব্যে তাকে প্রকাশ করবে বৈকি। আমি যদি আজ তরুণ হতাম, তাহলে আমার কলমেও এই সুর বাজত’।
যৌবনে নজরুল ইসলাম খুব রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতেন। এছাড়া গীতাঞ্জলির সবগুলো কবিতা ও গান তাঁর মুখস্থ ছিল। এ কথা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জানতে পেরে খুশি হয়ে বলেছিলেন, আমারই তো মুখস্থ নেই’। অবিশ্রামভাবে রবীন্দ্র সংগীত গাইতে পারতেন নজরুল। মুজফফর আহমেদ বলেন, ‘সে মূলত গাইতো রবীন্দ্রনাথের গান। এত বেশি রবীন্দ্র সংগীত সে কী করে মুখস্ত রেখেছিল তা ভেবে আমরা আশ্চর্য হয়ে যেতাম। সমস্ত কুরান যারা মুখস্ত করেন তাঁদের হাফিজ বলা হয় । আমরা বলতাম রবীন্দ্র সংগীত হাফিজ’। এছাড়াও অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশি, বিদ্রোহী, ভাঙ্গার গান পড়ে রবীন্দ্রনাথ অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছিলেন নজরুল ইসলামকে।
রবীন্দ্রনাথকে নজরুল কত সম্মান করতেন ,ভালোবাসতেন তা তাঁর ‘তীর্থ পথিক’ কবিতায় স্পষ্ট হয়ে উঠে-
‘তুমি স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি বিশ্বের বিস্ময়
তব গুণ-গানে ভাষা-সুর যেন সব হয়ে যায় লয়
তুমি স্মরিয়াছ ভক্তের তব, এই গৌরবখানি
রাখিব কোথায় ভেবে নাহি পাই, আনন্দে মূক বাণী।
কাব্যলোকের বাণী-বিতানের আমি কেহ নহি আর
বিদায়ের পথে তুমি দিলে তবু কেন এ আশিস-হার?
প্রার্থনা মোর, যদি আরবার জন্মি এ ধরণীতে-
আসি যেন গাহন করিতে তোমার কাব্য-গীতে’।
কাজী নজরুল ইসলাম
রবীন্দ্রনাথ নজরুলের ধূমকেতু পত্রিকার জন্য আশীর্বচন লিখে দিয়েছিলেন। পরে নজরুলের নবযুগ, লাঙল পত্রিকার জন্যও রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন। ১৯২৬ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রতিবাদ তাঁরা দুজনেই করেছিলেন। নজরুল তাঁর ‘কাণ্ডারি হুঁশিয়ার’ কবিতায় লিখেছেন, ‘“হিন্দু না ওরা মুসলিম?” ওই জিজ্ঞাসে কোন্ জন?’ আর রবীন্দ্রনাথ লিখলেন, ‘হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী, নিত্য নিঠুর দ্বন্দ্ব; / ঘোর কুটিল পন্থ তার, লোভজটিল বন্ধ’।
১৯২২ সালে প্রতীকধর্মী রাজনৈতিক কবিতা ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ র জন্য নজরুলকে রাজদ্রোহিতার অভিযোগে বন্দী করা হয়। প্রথমে প্রেসিডেন্সি জেলে, পরে আলীপুর সেন্ট্রাল জেলে কবিকে স্থানান্তর করা হয়। একটি পরাধীন জাতির সামনে সম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকারের চিত্র তুলে ধরায় কবি তখন দেশবাসীর শ্রদ্ধা-সম্মানের পাত্র। ১৪ এপ্রিল ১৯২৩ সালে আবার তাঁকে হুগলী জেলে স্থানান্তর করা হয়। এখানকার জেলার রাজবন্দীদের সাথে চরম দূর্ব্যবহার ও অত্যাচার করতো । তাই কবি অনশন শুরু করেন। অনশনে কবি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েন। তা জানা যায় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখায়-
‘হুগলি জেলে আমাদের কবি কাজী নজরুল ইসলাম উপুষ করিয়া মরমর হইয়াছে। বেলা ১টার গাড়ীতে যাইতেছি। দেখি যদি দেখা করিতে সেয় ও দিলে আমার অনুরধে যদি সে আবার খাইতে রাজি হয়। না হইলে আর কোনো আশা দেশি না। একজন সত্যিকারের কবি । রবী বাবু ছাড়া আর বোধ হয় এমন কেহ আর এত বড় কবি নাই’। দেখা করতে না পেরে মুমূর্ষ কবিকে বাঁচানোর জন্য শিলিং এ চিঠি লেখা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে যাতে কবি যেন নজরুলকে অনশন ভাঙতে অনুরোধ করে পত্র লিখেন। রবীন্দ্রনাথও পত্রোত্তরে নজরুলকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন জানিয়ে লিখেন, ‘আদর্শবাদীকে আদর্শ ত্যাগ করতে বলা তাকে হত্যা করারই সামিল’।
অবশ্য পরে স্নেহভাজন নজরুলের অনশনে বিচলিত হয়ে রবীন্দ্রনাথ তাকে টেলিগ্রাম করেন-‘ Give up hunger strike, our literature claims you.’ অনশনের চল্লিশদিনে নজরুল বন্ধুমাতা বিরজাসুন্দরী দেবীর হাতের লেবুর রস পান করে অনশন ভঙ্গ করেন।
রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের মধ্যকার গুরু-শিষ্য সম্পর্কে ফাটল ধরাতে নানা চক্র তৎকালীন সময়েও যেমন সক্রিয় ছিল এখনো আছে। এদের মধ্যে যেমন মৌলবাদী মুসলমান ছিল তেমনি ছিল মৌলবাদী হিন্দু। কোনো পক্ষই চায়নি রবীন্দ্র-নজরুল সম্পর্ক অটুট থাকুক। তাই একবার রটিয়ে দেয় হলো রবীন্দ্রনাথ নজরুলের রক্ত অর্থে খুন শব্দের ব্যবহারের সমালোচনা করেছেন। এতে কলকাঠি নেড়েছিলো শনিবারের চিঠির সজনীকান্ত দাস ও মোহিতলাল মজুমদার। তারা নজরুলকে কবি বলে গণ্য করতেন না। নজরুল কবিগুরুর এই কথা শুনে ব্যথিত হলেন। তিনি ভাবতেই পারছিলেন না যেই কবিগুরু তাঁর কবিতায় আরবি-ফারসি শব্দ ব্যবহারের প্রশংসা করেছিলেন সেই কবিগুরু কি করে অমন কথা বলতে পারেন। তাই তিনি ব্যথিত চিত্তে লিখলেন ‘বড়র পিরিতি বালির বাঁধ’। পরে অবশ্য রবীন্দ্রনাথ বলেছেন তাঁর ঐ কথা ছিল কোন উদীয়মান কবির জন্য, কোনো উদিত কবির জন্য নয়। কবিগুরুও ব্যথিত হয়েছিলেন নজরুল কেন এই রটনায় বিশ্বাস করল?
এই বিতর্ক বিপদসীমা অতিক্রম করার আগেই প্রমথ চৌধুরী ‘আত্নশক্তি’ পত্রিকাতে ‘বঙ্গসাহিত্যে খুনের মামলা’ শীর্ষক একটি রসাত্মক রচনার দ্বারা নজরুলের ভুল ভাঙাতে সাহায্য করেন। তিনি বলেন, ‘এ সন্দেহ আমার মনে উদয় হয়নি, যে সভায় তিনি কথা বলেন সে সভায় আমি উপস্থিত ছিলাম। যতদূর মনে পড়ে, কোন উদীয়মান তরুণ কবির নবীন ভাষার উদাহরণস্বরূপ তিনি খুনের কথা বলেন। কোন উদিত কবির প্রতি তিনি কটাক্ষ করেননি’। এ লেখা নজরুলের ক্রোধ প্রশমিত করে এবং প্রমথ চৌধুরীর সাথে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের সাথে দেখা করেন এবং তাদের গুরু-শিষ্যের সুসম্পর্ক পূনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। মৌলবাদীদের আকাঙ্ক্ষা অপূর্ণই থেকে যায়। এই একটি ‘খুনের মামলা’র অভিমান পর্ব ছাড়া তাঁদের সম্পর্কে আর কোনো ছেদ চোখে পড়ে না।
তাই সমালোচনা, আক্রমণ, নিন্দাজ্ঞাপন সবকিছুই এরা করেছে। এখনো করছে। এদের সাহিত্যের মর্মমূলে প্রবেশের শক্তি ও যোগ্যতা নেই। এরা রবীন্দ্র-নজরুলকে বিচার করেছে ধর্ম দিয়ে। যেই মানবতার গান এই দুই মহীষী গেয়ে গিয়েছেন আজীবন তাকে কলঙ্কিত করতে চেয়েছে ধর্মকে ব্যবহার করে। এরা মূর্খ এরা জ্ঞানপাপী।
সাহিত্য বিচার করতে করতে গিয়ে সৃজনশীল সাহিত্যিকদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয়াটা বাতুলতা। সৃজনশীল সকল সাহিত্যিকই স্বতন্ত্র। ব্যাক্তি, চেহারা, জীবন যাপন, ধর্ম, দর্শন, চিন্তায়-চেতনে, মননে তাঁরা কোনোভাবেই একজন আরেকজনের সাথে তুল্য নন। তাদের একজায়গাতেই শুধু মিল পাওয়া যায় আর তা হোলো মানবতা। তাঁরা মানবতার যে সত্য বুকে লালন করে তার শেকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। রবীন্দ্র নজরুলের এই শেকড় উৎপাটন করা তাই মৌলবাদীদের পক্ষে সম্ভবপর হয়নি কখনো। রবীন্দ্রনাথ যেমন বাঙালি ও বাংলাদেশের কবি তেমনি নজরুলও বাঙালি, বাংলাদেশ ও আমাদের কবি। তাঁরা দুজনেই বাংলা সাহিত্যের অমর কবি। তাই মৌলবাদীদের হাজার প্ররোচনা সত্বেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম বাঙালি জাতির হৃদয়ে ক্রমাগত ভাস্বর হয়ে উঠতে থাকবেন। একথা খুব জোর দিয়েই বলা যায়।
তথ্যসূত্রঃ
- তাঁরা দু’জন রবীন্দ্র-নজরুলঃ অধ্যাপক শান্তিরঞ্জন ভৌমিক
- রবীন্দ্র জীবন কথাঃ প্রভাতকুমার মুখপাধ্যায়
- সাহিত্যে ও জীবনে রবীন্দ্র-নজরুলঃ সাযযাদ কাদির
- ইতিহাসের নিরিখে রবীন্দ্র-নজরুল চরিতঃ সরকার শাহাবুদ্দীন আহমেদ
- রবীন্দ্র-নজরুল ও অন্যান্যঃ ড.সফিউদ্দিন আহমদ
লেখক: মেহেদী হাসান, প্রভাষক, বাংলা বিভাগ, বান্দরবান সরকারি কলেজ।