মানুষের জীবনের যে সময়টিকে বয়ঃসন্ধিকাল বলে ধরা হয়, সেটা কত বছর ধরে চলে?
এক নতুন গবেষণার ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, আগে যা ভাবা হতো, এই বয়ঃসন্ধিকালের মেয়াদ আসলে তার চেয়ে অনেক বেশি। দশ বছর বয়সে শুরু হয়ে তা চলে ২৪ বছর পর্যন্ত।
এর আগে উনিশ বছর বয়সকেই বয়ঃসন্ধিকালের শেষ সীমা বলে মনে করা হতো।
কেন মানুষের বয়ঃসন্ধিকাল বলে সময়টার মেয়াদ বাড়ছে, তার নানা কারণ দেখিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
তরুণ ছেলে-মেয়েরা এখন অনেক দীর্ঘ সময় ধরে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বিয়ে করতে এবং সন্তান নিতে দেরি হচ্ছে।
এবং এসবের ফলে কখন মানুষ আসলে ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ হচ্ছে সেই ধারণাও বদলে যাচ্ছে।
‘ল্যান্সেট চাইল্ড এন্ড এডোলেসেন্ট হেলথ জার্নালে’ এ নিয়ে বিজ্ঞানীরা একটি লেখা প্রকাশ করেছেন।
সেখানে তারা বলেছেন, আইনকে যুগোপযোগী করে বয়ঃসন্ধিকালের সংজ্ঞা নতুন করে নির্ধারণ করার সময় এসেছে।
তবে অন্য একজন বিশেষজ্ঞ এর বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এর ফলে তরুণদেরকে অপরিপক্ক বলে বিবেচনার ঝুঁকি আছে।
বয়ঃসন্ধিকালের শুরু
মানুষের মস্তিস্কের একটি অংশ, যা ‘হাইপোথ্যালামাস’ নামে পরিচিত, সেখান থেকে যখন হরমোন নিঃসরণ শুরু হয়, তখন থেকেই বয়ঃসন্ধিকালের শুরু বলে মনে করা হয়।
এই হরমোন তখন মানুষের শরীরের পিটুইটারি গ্ল্যান্ড এবং গোনাডাল গ্ল্যান্ডগুলোকে সক্রিয় করে তোলে।
আগে সাধারণত ১৪ বছর বয়সের দিকে মানুষের শরীরে এই পরিবর্তন ঘটতো।
কিন্তু উন্নত দেশগুলোতে যেভাবে বিগত শতকে মানুষের স্বাস্থ্য এবং পুষ্টির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে, তার ফলে বয়ঃসন্ধি শুরুর সময় নেমে আসে দশ বছরের কাছাকাছি।
যুক্তরাজ্যের মতো শিল্পোন্নত দেশে গত দেড়শো বছরে মেয়েদের ঋতুমতী হওয়ার গড় বয়স প্রায় চার বছরে কমে এখন দশে নেমে এসেছে।
প্রায় অর্ধেক মেয়ের ঋতুস্রাব এখন শুরু হয় ১২ হতে ১৩ বছর বয়সে।
শারীরিক বৃদ্ধি যখন থামে
কেন বয়ঃসন্ধিকালের সংজ্ঞায় এর বয়সসীমা আরও বাড়ানো উচিৎ তা নিয়ে নানা ধরণের যুক্তি দেয়া হচ্ছে।
একটা যুক্তি হচ্ছে মানুষের শরীর এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সময় ধরে বাড়ে।
যেমন, মানুষের মস্তিস্ক এখন বিশ বছর বয়সের পরেও বিকশিত হতে থাকে। এটি আগের চেয়ে দ্রুত এবং অনেক বেশি দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে।
আর অনেক মানুষের ‘আক্কেল দাঁত’ এখন ২৫ বছরের আগে গজায় না।
জীবনের মাইল-ফলক
মানুষ এখন অনেক বেশি বয়সে বিয়ে করছে এবং তাদের সন্তান নেয়ার বয়সও পিছিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান দফতরের হিসেবে অনুযায়ী ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে ২০১৩ সালে পুরুষদের প্রথম বিয়ের গড় বয়স ছিল ৩২ দশমিক ৫ বছর এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ৩০ দশমিক ৬ বছর।
১৯৭৩ সালের তুলনায় প্রথম বিয়ের গড় বয়স প্রায় ৮ বছর বেড়ে গেছে।
যে বিজ্ঞানীরা এই গবেষণা চালিয়েছেন, তাদের প্রধান অধ্যাপক সুজান সয়্যার বলেন, যদিও যুক্তরাজ্যে ১৮ বছর বয়সেই একজন আইনত প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে গণ্য হতে শুরু করেন, তারা কিন্তু পুরোপুরি প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন শুরু করেন আরও অনেক পরে।
তাঁর মতে, দেরীতে সংসার বাঁধা, দেরীতে বাবা-মা হওয়া, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে বিলম্ব হওয়া– এসবের ফলে ‘বয়ঃসন্ধিকালের’ সীমানা এখন অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে।