বাংলাদেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বেশির ভাগেরই ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। প্রতিদিনের যোগাযোগ আর তথ্য আদান-প্রদান সহজ করে দিচ্ছে বলেই ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। সঙ্গে বাড়ছে ফেসবুকের ওপর নির্ভরশীলতা। আবার ফেসবুক নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়া ব্যবহারকারীর সংখ্যাও কম নয়। ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তার প্রশ্ন থাকে বলে এই বিড়ম্বনা মাঝেমধ্যে ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
অনেক ব্যবহারকারী আছেন যাঁরা নিজেদের নামের অ্যাকাউন্ট থেকে ফেসবুকে বন্ধু হওয়ার অনুরোধ পেয়েছেন। মানে সেই ব্যবহারকারীর নাম ও ছবি দিয়ে অন্য কেউ ভুয়া বা ফেক অ্যাকাউন্ট খুলে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। আর তারকাখ্যাতি পাওয়া ব্যবহারকারীদের নামে যে কতশত ফেক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তার হিসাব রাখতেও আলাদা হিসাবরক্ষক দরকার। ইদানীং অ্যাকাউন্ট হাতছাড়া হওয়াটা বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। অনেকে আবার জানান, অ্যাকাউন্টে ঢুকতে লগ-ইন করতে পারছেন না। তবে লগ-ইন করতে না পারা মানেই যে অন্য কেউ সেই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছে, এমন নয়। ‘ফেসবুক হ্যাক’ বর্তমান সময়ের একটি আতঙ্কের নাম।
নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন বুঝবেন কীভাবে?
ব্যবহারকারীরা নিয়মিত যেসব স্থান থেকে লগ-ইন করে থাকেন, এর বাইরে অন্য কোথাও থেকে লগ-ইন করার চেষ্টা করা হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেটি জানানো হয়। আবার অজানা কোথাও থেকে লগ-ইন করা হলে সেটি বন্ধ করার সুযোগও আছে ফেসবুকে।
অন্য কেউ অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বা নেওয়ার চেষ্টা করছে কি না বোঝার বেশ কয়েকটি উপায় আছে। যেমন ব্যক্তিগত তথ্য পরিবর্তন হয়ে যাওয়া, অপর কোনো পোস্টের মন্তব্যের ঘরে কিংবা নিজের টাইমলাইনে এমন কিছু শেয়ার হওয়া যা ব্যবহারকারীর নিজের লেখা নয়। পাসওয়ার্ড, এমনকি ই-মেইল এবং ফোন নম্বর বদলে যাওয়া এবং এর ফলে লগ-ইন না হওয়ার ঘটনাও হয়ে থাকে।
কতটা ক্ষতি হতে পারে
অ্যাকাউন্টে লগ-ইন না হওয়ার সমস্যাটি গুরুতর। অন্য কেউ যদি অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলে, তবে সে অনায়াসেই অ্যাকাউন্টের সব তথ্য, পোস্ট (পাবলিক নয় এমন গুলোও), মেসেঞ্জারের আলোচনাসহ সবকিছুই দেখতে ও পড়তে পারবে। অনেক ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত বন্ধুরা হ্যাক হওয়ার বিষয়টি না জানলে মূল ব্যক্তির সঙ্গে কথোপকথন চালাচ্ছেন ভেবে আলোচনা চালিয়ে যেতে পারেন।
সামাজিকভাবেও ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে কখনো কখনো। সরাসরি আর্থিক ক্ষতি না হলেও, যে বা যারা নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, তারা অর্থের বিনিময়ে নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করে থাকে। কখনো আবার ব্যক্তিগত তথ্যগুলো প্রকাশ না করার শর্তে নিয়মিত অর্থের দাবি করতে পারে।
হ্যাকড হলে কী করবেন?
অন্যের পোস্টে বা নিজের টাইমলাইনে কোনো কিছু পোস্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনাগুলো সাধারণত হয়ে থাকে ফেসবুকের বিভিন্ন থার্ড পার্টি অ্যাপ থেকে। ‘অন্য অনেকে ব্যবহার করছে, তাই আমিও করলাম’—এমন মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ফেসবুকে অন্য প্রতিষ্ঠানের (থার্ড পার্টি) নতুন যেকোনো অ্যাপ ব্যবহারের সময় কী কী তথ্য ব্যবহারের অনুমতি চাইছে, তা যাচাই করে নিতে হবে, আর ফেসবুকে পোস্ট করার অনুমতি চাইলে সেটি বাতিল করে দিতে হবে।
সব সমস্যাই সমাধানযোগ্য
নিজের ফেসবুকের নিয়ন্ত্রণ যেভাবেই হারাক, তা ফিরে পাওয়ার পথ খোলা আছে। তবে শুরু থেকে সতর্ক থাকলে থাকলে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
- ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়েছে মনে হলে ফেসবুকের সাহায্য পাতা (www.facebook.com/help/hacked) থেকে এ ব্যাপারে তথ্য জানতে পারেন এবং কী কী ধাপ অনুসরণ করে আবার অ্যাকাউন্ট ফিরে পাওয়া যাবে, তা-ও সেখানে পাওয়া যাবে।
- পাশাপাশি হ্যাকিং-সংক্রান্ত সব সাহায্যের জন্য দেখতে হবে www.facebook.com/hacked ঠিকানার পাতাটি। অ্যাকাউন্টে যে ধরনের সমস্যা হচ্ছে, সেগুলো ধাপে ধাপে নির্বাচন করে সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়া যাবে।
নিরাপদ থাকতে করণীয়
ফেসবুকে যেসব নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য রয়েছে, সেগুলো ব্যবহার ও সক্রিয় রাখার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। ব্যক্তিগত সব ধরনের যোগাযোগ ও তথ্য ফেসবুক থেকেই পাওয়া সম্ভব। তাই তা যেন অন্য কারও হাতে যায়, সে বিষয়ে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলা হলে হ্যাকিং-সংক্রান্ত সমস্যাগুলো এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব—
সকল নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সক্রিয় রাখা (www.facebook.com/ settings?tab=security)।
- ই-মেইল ও ফোন নম্বর নিশ্চিত করা। বেশি নিরাপত্তার জন্য দুই ধাপে লগ-ইন নিশ্চিত করা এবং লগ-ইন কোড জেনারেট অপশনটি ব্যবহার করা।
- নিয়মিত পাসওয়ার্ড বদলে ফেলা। পাসওয়ার্ডগুলো এমন হতে হবে যেন পরিচিত কেউ হলেও অনুমান করতে না পারে।
- ই-মেইল, টুইটার বা অন্য কোথাও ব্যবহার করা হয়েছে এমন অর্থাৎ এক পাসওয়ার্ড একাধিক জায়গায় ব্যবহার না করা।
- সেটিংস-অ্যাপলিকেশন (www.facebook.com/settings?tab=applications) থেকে কী কী অ্যাপলিকেশন সক্রিয় আছে, তা যাচাই করে অপরিচিতগুলো মুছে ফেলা।
- নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও সব সময় মনে রাখতে হবে, ফেসবুকে এমন কিছু কখনো শেয়ার বা আপলোড করা উচিত নয়, যা প্রকাশ পেলে নিজের ক্ষতির আশঙ্কা আছে।