প্রিয় কর্মস্থলে শেষবারের মতো গোলাম সারওয়ার

গোলাম সারওয়ার। -ফাইল ফটো

দেশবরেণ্য সাংবাদিক, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ারকে শেষবারের মতো তেজগাঁওয়ে তার প্রিয় কর্মস্থল সমকাল কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় বারডেমের হিমঘর থেকে তার মরদেহ সমকাল কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সমকাল পরিবারের সদস্যরা প্রিয় অভিভাবককে শেষ শ্রদ্ধা জানান। সকাল সোয়া ৯টার দিকে সমকাল কার্যালয়-সংলগ্ন বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওসমানী হল মাঠে গোলাম সারওয়ারের তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

জানাজা শেষে গোলাম সারওয়ারের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হচ্ছে। সকাল ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় সর্বস্তরের মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন সাংবাদিকতার বাতিঘর গোলাম সারওয়ারকে।

শহীদ মিনার থেকে দুপুর ১টায় গোলাম সারওয়ারের মরদেহ নেওয়া হবে তার পাঁচ দশকের আড্ডাস্থল জাতীয় প্রেস ক্লাবে। সেখানে সহকর্মীরা তাকে শেষ বিদায় জানাবেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানানো হবে একাত্তরের রণাঙ্গনের এই মুক্তিযোদ্ধাকে। জোহরের নামাজের পর তার চতুর্থ জানাজা অনুষ্ঠিত হবে প্রেস ক্লাব চত্বরে। আসরের নামাজের পর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শেষ শয্যায় শায়িত হবেন তিনি।

গত ২৯ জুলাই অসুস্থ হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি হন ৭৫ বছর বয়সী সম্পাদক গোলাম সারওয়ার। অবস্থার অবনতি ঘটলে গত ৩ আগস্ট সিঙ্গাপুর নেওয়া হয় তাকে। গত ১৩ আগস্ট সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ২৫ মিনিটে সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার।

গত মঙ্গলবার রাত ১০টা ৫০ মিনিটে বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি গোলাম সারওয়ারের মরদেহ সিঙ্গাপুর থেকে দেশে নিয়ে আসা হয়। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মধ্যরাতে মরদেহ নেওয়া হয় তার উত্তরার বাসভবনে। সেখানে সহকর্মী, স্বজনরা তাকে শেষবারের মতো দেখেন।

বারডেমের হিমঘরে রাত কাটিয়ে গতকাল বুধবার বিকেলে প্রায় চার দশকের আবাসস্থল উত্তরায় শেষবারের মতো ফেরেন গোলাম সারওয়ার। উত্তরায় যখন বসতি গড়ে ওঠেনি, সরু পথ, চারপাশ গাছপালা আর ঝোপজঙ্গলে ঘেরা তখন থেকেই তিনি সেখানকার বাসিন্দা। আধুনিক ও অভিজাত উত্তরা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তার অবদানও কম নয়।

গতকাল বিকেল ৪টা থেকেই উত্তরা চার নম্বর সেক্টর জামে মসজিদের সামনে ছিল বহু মানুষের অপেক্ষা। গোলাম সারওয়ার আসেন নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক ঘণ্টা পর- আসরের নামাজ শুরুর কয়েক মিনিট আগে। না, গতকাল তিনি স্মিতহাস্যে কারও সঙ্গে করমর্দন করেননি। দেরিতে আসায় বিনীত কণ্ঠে দুঃখ প্রকাশ করেননি। কফিনের ভেতর প্রিয় মানুষটির নিথর মুখ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন অপেক্ষমাণদের অনেকেই।

বেদনাবিধুর পরিবেশে মসজিদের ভেতর জানাজায় অংশ নেন মুসল্লিরা। প্রয়াত গোলাম সারওয়ারের পরিবারের পক্ষ থেকে বাবার জন্য দোয়া চান বড় ছেলে গোলাম শাহরিয়ার রঞ্জু। দীর্ঘদিন একসঙ্গে পথচলার টুকরো টুকরো স্মৃতিচারণ করেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফসার আহমেদ ও উত্তরা চার নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতির সভাপতি আনিসুল ইসলাম।

আতিকুল ইসলাম জানান, সর্বগুণের অধিকারী ভালো মানুষ ছিলেন গোলাম সারওয়ার। উত্তরার উন্নয়নে তার কাছ থেকে সুপরামর্শ পেতেন তিনি। এলাকার যে কোনো অনুষ্ঠান আয়োজনে শত ব্যস্ততার মধ্যেও উদ্যোগী ভূমিকায় থাকতেন তিনি। এই মানুষটিকে হারিয়ে শুধু উত্তরাবাসী নয়, পুরো বাংলাদেশই শোকাচ্ছন্ন।

আফসার আহমেদ বলেন, নির্ভীক সাংবাদিক, অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী গোলাম সারওয়ারের চলে যাওয়া দেশের জন্য, সাংবাদিকতার জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।

আনিসুল ইসলাম বলেন, একবার উত্তরা চার নম্বর সেক্টরের মাঠ ও পার্কে সেক্টরের বাইরের কাউকে বিচরণ না করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু গোলাম সারওয়ার বললেন, তাহলে অন্য মানুষগুলো মুক্ত নিঃশ্বাস নিতে কোথায় যাবে? সবার বিচরণের কথাই তো বিবেচনা করা উচিত। তার এ কথার পর আগের সিদ্ধান্ত পাল্টে মাঠ ও পার্ক সবার বিচরণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

জানাজার পর মসজিদ চত্বরে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয় গোলাম সারওয়ারের মরদেহ। এলাকার মানুষ নীরবে দাঁড়িয়ে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এর আগে গতকাল দুপুরে গোলাম সারওয়ারের মরদেহ হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে তার জন্মস্থান বরিশালের বানারীপাড়া নেওয়া হয়। সন্ধ্যা নদীর তীরের বানারীপাড়ায় বেড়ে উঠেছেন তিনি। বাবা-মা আদর করে তাদের এই বড় সন্তানকে ডাকতেন দুলাল নামে। এলাকাবাসীরও দুলাল ছিলেন তিনি। ছিলেন বানারীপাড়া অন্তঃপ্রাণ।

গতকাল দুপুরে বানারীপাড়ায় তার মরদেহ পৌঁছালে শেষবারের মতো গোলাম সারওয়ারকে দেখতে আসেন সবাই। বানারীপাড়া মডেল ইনস্টিটিউশন মাঠে তার প্রথম জানাজায় মানুষের ঢল নামে। শোকার্ত মানুষ তাদের প্রিয় দুলালের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। শেষ শ্রদ্ধা জানান প্রিয় সন্তানকে।

সূত্র: সমকাল অনলাইন

শেয়ার করুন