সংখ্যালঘু হিন্দুদের কথিত নিপীড়ন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে অভিযোগ করা বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কোনো ধরনের আইনি প্রক্রিয়া শুরু না করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একথা জানান।
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তার বিরুদ্ধে তড়িঘড়ি করে ব্যবস্থা নয়। প্রিয়া সাহা যে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন এ বিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। উনি কোন উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেছেন তা জানতে হবে, এরপর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ইতোমধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ঢাকায় দু’টি মামলা করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, “রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলার জন্য রাষ্ট্রপক্ষের সম্মতি নেওয়ার পর গৃহীত হয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীও তার (প্রিয়া সাহা) বিরুদ্ধে মামলা করতে চেয়েছিলেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে এ বিষয়ে নিষেধ করেছি। কারণ, তড়িঘড়ি করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা ঠিক নয়। তাকে আত্মপক্ষের সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। এছাড়া এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।”
গত বুধবার হোয়াইট হাউসে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহার দেওয়া বক্তব্যকে ঘিরে তোলপাড় চলছে।
সেখানে আমন্ত্রিত চীন, তুরস্ক, উত্তর কোরিয়া, মিয়ানমারসহ ১৬টি দেশে সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের শিকার একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা বলছিলেন ট্রাম্প।
এ সময় প্রিয়া সাহা নামের এক নারী নিজেকে বাংলাদেশি পরিচয় দিয়ে বলেন, “স্যার, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। সেখানকার ৩ কোটি ৭০ লাখ সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ‘নিখোঁজ’ হয়ে গেছে। দয়া করে বাংলাদেশি জনগণকে সাহায্য করুন। আমরা দেশ ছাড়তে চাই না, থাকতে চাই।”
ট্রাম্প তখন বলেন, “বাংলাদেশ?” জবাবে হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়ে ওই বাংলাদেশি নারী আরও বলেন, “এখনো সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু মানুষ থাকে। আমার অনুরোধ, দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা দেশ ছাড়তে চাই না। সেখানে থাকতে আমাদের সহযোগিতা করুন। আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি। তারা বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। আমার জমি ছিনিয়ে নিয়েছে। কিন্তু কোনো বিচার হয়নি।”
তখন ট্রাম্প জিজ্ঞাসা করেন, “কে জমি নিয়ে গেছে?” উত্তরে প্রিয়া সাহা বলেন, “মুসলিম মৌলবাদী সংগঠনগুলো। তারা সবসময় রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়ে আসছে।”
পরে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এবিসি নিউজের একটি ভিডিওতে প্রিয়া সাহার কথোপকথনের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে এ নিয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন মহলে নানা ধরনের সমালোচনা-আলোচনা শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ভিডিওকে কেন্দ্র করে নানা মন্তব্য করেন অনেকেই।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া স্ট্যাটাসে প্রিয়া সাহার করা মন্তব্য খতিয়ে দেখার ঘোষণা দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।তিনি বলেন, “তিনি (প্রিয়া সাহা) কেন এটা করলেন তা খতিয়ে দেখা হবে। প্রিয়ার অভিযোগগুলোও সরকার শুনবে এবং খতিয়ে দেখবে।” সূত্র: দেশ রূপান্তর অনলাইন