রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন।
আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন প্রথম আলোকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র আজই আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা এখনো পদত্যাগপত্রটি পাননি। পাওয়ার পর আইনমন্ত্রী এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে এক মাসের বেশি ছুটি নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর বিদেশে যান বিচারপতি সিনহা। ছুটি শেষে ৯ নভেম্বর কানাডা যাওয়ার পথে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশনে রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্রটি জমা দেন তিনি। পরের দিন ১০ নভেম্বর পদত্যাগপত্রটি বঙ্গভবনে এসে পৌঁছে বলে নিশ্চিত করেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন।
বিচারপতি সিনহার ছুটির মেয়াদের শেষ দিন ছিল ১০ নভেম্বর। তিনি গত ১৩ অক্টোবর রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। অস্ট্রেলিয়ায় তিনি বড় মেয়ে সূচনা সিনহার বাসায় ওঠেন। চিকিৎসার জন্য অস্ট্রেলিয়া থেকে সিঙ্গাপুরে যান। পরে সিঙ্গাপুর থেকে তিনি কানাডায় ছোট মেয়ে আশা সিনহার বাসায় গেছেন।
এর আগে গত ২ অক্টোবর এক মাস ছুটির কথা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর চিঠি পাঠান বিচারপতি সিনহা। এর মেয়াদ ছিল ১ নভেম্বর পর্যন্ত। ছুটিতে থাকা অবস্থায় তাঁর ১৩ অক্টোবর বা কাছাকাছি সময়ে বিদেশে যাওয়ার এবং ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বিদেশে থাকার ইচ্ছা পোষণের বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করতে ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। গত ১০ অক্টোবর বিদেশ যাওয়ার বিষয়েপাঠানো ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আইন মন্ত্রণালয় ১২ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করে।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার পূর্ণাঙ্গ রায় গত ১ আগস্ট প্রকাশিত হয়। ওই দিনই পূর্ণাঙ্গ রায়টি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়। রায় প্রকাশের পর এ নিয়ে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সংক্ষুব্ধ হয়। বিশেষ করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন মন্ত্রী, দলীয় নেতা ও সরকারপন্থী আইনজীবীরা। তাঁরা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিও তোলেন।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং তার কিছু পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। বিচারিক সিদ্ধান্তের বিষয়ে সংসদে ওই দিন প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আলোচনা হয়, যাতে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৮ জন সংসদ সদস্য অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আদালত তাঁর এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে সংসদে পাস হওয়া সংবিধানের সংশোধনী বাতিল করেছেন।