পেয়ারে পাকিস্তানওয়ালাদের থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করে চলতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের যারা মন্ত্রী বানিয়েছিল, লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত পতাকা এদের হাতে তুলে দিয়েছিল, তাদের ব্যাপারে জাতিকে সচেতন থাকতে হবে। তাদেরকে ক্ষমা করবেন না। জাতি যেন কোনদিন তাদের ক্ষমা না করে—জাতির প্রতি আজদের দিনে আমার এটাই আবেদন থাকবে।
মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শনিবার বিকালে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, যাদের হৃদয় থাকে পাকিস্তানে, তারা বাংলাদেশে থেকে সব রকমের আরাম আয়েশ ফল ভোগ করবে আর অন্তরাত্মাটা পড়ে থাকবে ওখানে (পাকিস্তানে)। তাদের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।
এখন মানুষ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিতে ভয় পায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এমন একটি সময় দেখেছি মানুষ নিজে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতে সাহস পেতেন না। সরকারি চাকরি পেতে মুক্তিযোদ্ধা কথাটি লিখতেও ভয় পেতেন। কারণ, তাহলে চাকরি পাবেন না। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর এই অবস্থা বাংলাদেশে সৃষ্টি হয়েছিল। তবে, দীর্ঘ ৯ বছর আমরা সরকারে থাকার কারণে এখন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে মানুষ গর্ববোধ করেন। তারা এখন আর ভীত সন্ত্রস্ত হন না। এখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসগুলো সামনে আসছে। মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। এই আত্মবিশ্বাসটা যেন হারিয়ে না যায়। এমন কোনও অন্ধকারে আমরা যেন আবার না পড়ি। এই পরিবেশ যেন বাংলার মাটিতে আর না আসে সে ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। আবার যে সেই ধরনের বিপদে আমরা পড়ে না যাই।’
বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহারের গুরুত্ব কম দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নাকি বাংলা ভাষায় পড়ানো হয় না। এটা কেন? কেন বাংলায় পড়ানো হবে না। আমরা দাওয়াতের কার্ডও এখন বাংলা ভাষায় লিখতে চাই না। মনে হয় এটা যেন ব্যাধির মতো ছড়িয়ে গেছে। এটা কেন হচ্ছে জানি না। বিয়ের কার্ডটাও কেন বাংলা ভাষায় লেখা হবে না। ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা, কাজেই আমরা ইংরেজি শেখার বিপক্ষে নই। কিন্তু,যে ভাষার জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি তার চর্চা করবো না কেন? কাজেই বলবো, দ্বিতীয় ভাষা শিক্ষার ওপর অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। এতে দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। তবে, সঙ্গে সঙ্গে মায়ের ভাষা—যে ভাষার জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি তার চর্চাও থাকতে হবে। এ বিষয়ে পরিবার থেকেই উৎসাহিত করতে হবে।’
রায় ইংরেজিতে লেখা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উচ্চ আদালতের রায় ইংরেজিতে লেখা হয়। আমাদের অনেকে আছেন ইংরেজি বোঝেন না। তার উকিল যা বোঝাবেন তাকে তা বুঝতে হচ্ছে। সেই উকিল সাহেব ঠিকমতো বোঝাতে পারছেন নাকি আরও কিছু টাকা খসানোর বা পকেট খালি করার জন্য অন্যভাবে বোঝাচ্ছেন তা কিন্তু তার মক্কেল বুঝতে পারেন না। তবে, এখন নিম্ন আদালতে মোটামুটি বাংলায় রায় লেখা শুরু হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু জেলে বসে ভাষার আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার দিক-নির্দেশনা দিতেন। ১৯৪৮ সাল থেকে ভাষার জন্য আন্দোলন শুরু হয়। ৫২ সালে বুকের রক্ত দিয়ে তা আদায় করে ছাত্র-জনতা।
আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর বাংলা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর পাকিস্তানের প্রথম শাসনতন্ত্র প্রণয়ন হয়। ওই শাসনতন্ত্রে বাংলা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায়। ওই সময় ২১ ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটিও ঘোষণা করা হয়।
আমরা যা কিছু পেয়েছি সংগ্রামের মধ্য থেকে পেয়েছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় জাতির পিতা আন্দোলনের পথ ধরে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেন। সেই সংগ্রামের পথ ধরে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। প্রতিটি অর্জনের পেছনে এদেশের জনগণের ত্যাগ রয়েছে।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশকে যেন পাকিস্তানের প্রদেশ বানানোরই চেষ্টা হয়েছিল। তখন পরাজিত শক্তির প্রতি (ক্ষমতাসীনদের) তোষামোদি আমরা দেখেছি। যুদ্ধাপরাধীদের দল করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্র হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের দল করার সুযোগ দেওয়া। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিদেশে দূতাবাসে চাকুরি করার সুযোগ করে দেওয়া।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউশন গঠনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন,বিশ্বব্যাপী এখন বাংলাদেশের ওপর দায়িত্ব পড়েছে মাতৃভাষাকে রক্ষা ও সংরক্ষণ করার।