এডিস মশার কামড় থেকে পুলিশ সদস্যদের বাঁচাতে সারা দেশে ইউনিটভিত্তিক অফিসার নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নতুন এই পদের নাম ‘ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট অফিসার’ বা ডিএমও। তার সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে সংশ্লিষ্ট ইউনিটে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে ১৯ দফা নির্দেশনা পালনেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনা পালনের জন্য পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ সুপার ও বিভিন্ন ইউনিট প্রধানদের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, ‘একজন উপপরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার কর্মকর্তা ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।’
সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) তাপতুন নাসরিন বলেন, ‘মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগ থেকে বাঁচতে পুলিশ সদস্যদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকাসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ধর্মীয়, নৈতিক ও পেশাগত দায়িত্বের জায়গা থেকে তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে বলা হয়েছে।’
পুলিশ সদর দপ্তর ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একাধিক কর্মকর্তা জানান, গত মে মাস থেকে পুলিশ ও তাদের পরিবারের সদস্যরা এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হতে শুরু করেন। জুলাই মাসে আক্রান্তের সংখ্যা হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। একাধিক কর্মকর্তা ও তাদের স্বজনদের মৃত্যু হয়। এতে রাস্তায় দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই এ রোগ থেকে বাঁচতে সদর দপ্তর থেকে নির্দেশনা পাঠানো হয় সারা দেশের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের।
তারা আরও জানান, গত ৭ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (স্বাস্থ্য ও শিক্ষা) তাপতুন নাসরিন স্বাক্ষরিত নির্দেশনা সারা দেশের রেঞ্জ ডিআইজি, বিভাগীয় কমিশনার ও এসপিদের কাছে পাঠানো হয়। তবে ঈদের ছুটি থাকায় ওই নির্দেশনা পৌঁছাতে দেরি হয়েছে। গতকাল রবিবার সেই চিঠি বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তারা হাতে পেয়েছেন। গতকাল নির্দেশনাটি ডিএমপির বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছেও পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘চিঠি বিতরণে দায়িত্বশীলদের গাফিলতির কারণেই এটি আসতে দেরি হয়েছে। ততদিনে অনেক পুলিশ সদস্য ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।’
রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মনোয়ার হাসানাত খান বলেন, ‘গত মে মাস থেকে পুলিশ সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যরা ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে শুরু করেন। জুলাই মাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যায়। বর্তমানে পুলিশ পরিবারে এই রোগে আক্রান্তের হার অপরিবর্তিত রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় ২১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৮৪ জন। এর আগে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক শাহাব উদ্দিন কোরেশীর স্ত্রী সৈয়দা আক্তার মারা যান। এরপর মারা যান পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) উপপরিদর্শক (এসআই) কোহিনুর আক্তার। ৩০ জুলাই রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে কর্মরত পুলিশ সদস্য দুলাল হোসেনের স্ত্রী রূপা আক্তার জনির মৃত্যু হয়।’
১৯ দফা নির্দেশনা : পুলিশ সদস্যদের ঘুমানোর সময় দিনে ও রাতে মশারি টাঙানো, প্রয়োজনে শরীরে মশা নিরোধক ক্রিম মেখে দায়িত্ব পালন এবং জ্বর হলে দ্রুততম সময়ে হাসপাতালে পাঠানো ও রক্ত পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধে বাহিনীর সদস্যদের সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইউনিটভিত্তিক ডিএমওকে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড বা পৌরসভার দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত সদস্যদের জন্য পুলিশের প্রতিটি হাসপাতালে একটি বিশেষ মেডিকেল টিম গঠন করে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র ও মশা নিরোধক ক্রিম সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। পুলিশের সব হাসপাতাল, স্থাপনা, ব্যারাক, অফিস, থানা, ফাঁড়ি, তদন্তকেন্দ্র, ক্যাম্প, শপিংমল, আবাসিক ভবন, রান্নাঘর, টয়লেট, ডাইনিং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে বলা হয়েছে।
বিশেষ করে ফুলের টব, চৌবাচ্চা, অব্যবহৃত পাত্র, টায়ার, ড্রাম, নারিকেল ও ডাবের খোসা, ফ্রিজ, এয়ার কন্ডিশনার, পরিত্যক্ত যানবাহন, ভবনের ছাদ ইত্যাদিতে যাতে পানি জমে না থাকে সে বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে ডিএমওকে। এসব নির্দেশনা পালন নিশ্চিতসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে তাকে প্রতিদিন প্রতিবেদনও পাঠাতে বলা হয়েছে।