ঘুষ, হয়রানি, নারী নির্যাতন ও চাঁদা দাবি ছাড়াও পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে জীবননাশের হুমকির অভিযোগই পাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। দেশের বিভিন্নস্থান থেকে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ প্রতিকার চেয়ে পুলিশ সদর দফতরের ‘আইজিপি কমপ্লেইন মনিটরিং সেলে’ অভিযোগ জানাচ্ছেন। এ সেলে প্রতিমাসে অভিযোগ আসার সংখ্যা গড়ে তিন শতাধিক। ই-মেইল, মোবাইল ফোন এবং সরাসরি এসব অভিযোগ আসে।
এসব অপরাধের জন্য পুলিশ সদর দফতর ও বিভিন্ন ইউনিটের দফতর থেকে তিরস্কার থেকে শুরু করে প্রমোশন ও টাইম স্কেল স্থগিত, চাকুরিচ্যুতি ও পদাবনতির মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ঘুষ নেওয়া, নানাভাবে হয়রানি, বিয়ের পর স্ত্রীকে ভরণ-পোষণ না দেওয়া ও যৌতুকের জন্য নির্যাতন, মামলা দায়েরের পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়া, জমি-জমা সংক্রান্ত এবং পুলিশ সদস্যের হুমকির মুখে জীবনের নিরাপত্তা চাওয়ার অভিযোগ আসছে। এগুলোর মধ্যে ঘুষ ও হয়রানির পর ভরণপোষণ না দেওয়ার জন্য পুলিশ স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর অভিযোগই বেশি।
পুলিশ সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট সেলের তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ১৪ হাজার ৬৫৮ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাদের মধ্যে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০ হাজার ৭৭৭ জনকে (কনস্টেবল থেকে এসআই), ইন্সপেক্টর পদ মর্যাদার ৩৭ জন এবং এএসপি থেকে তদূর্ধ্ব সাতজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কনস্টেবল থেকে এসআই পদের ১০ হাজার ৩৯৫ জনকে লঘুদণ্ড ও ৩৫৭ জনকে গুরুদণ্ড, ইন্সপেক্টর পদ মর্যাদার সাত জনকে গুরুদণ্ড ও ২৯ জনকে লঘুদণ্ড এবং সাময়িক বরখাস্তসহ বিভাগীয় শাস্তি দেওয়া হয়েছে সাতজন পুলিশ কর্মকর্তাকে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গুরুদণ্ডের শাস্তি বরখাস্ত বা চাকুরিচ্যুতি ও পদাবনতি। ২০১৭ সালে ২৫ জনকে চাকুরিচ্যুত করা হয়।
এদিকে, বাহিনীর অভ্যন্তরীণ তদন্তে উঠে এসেছে, জঙ্গি ও মাদকের বিরুদ্ধে অনেক আগে থেকেই জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে পুলিশ। তবে পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া না গেলেও মাদক ব্যবসা, বিক্রি ও সেবনের অভিযোগ আছে। গত ৩১ জানুয়ারি পুলিশ সদর দফতর থেকে সারাদেশের পুলিশের জন্য ১০টি নির্দেশনা দেওয়া হয়। যারা মাদক বিক্রেতাদের কাছ থেকে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নেন,তাদের চিহ্নিত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা ও প্রয়োজনে ফৌজদারি মামলার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৩ নভেম্বর সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক ‘আইজিপি কমপ্লেইন সেল’ চালু করেন। যেখানে এসএমএস (০১৭৬৯৬৯৩৫৩৫ ও ০১৭৬৯৬৯৩৬) এবং মেইল (complain@police.gov.bd) করে অভিযোগ করতে পারেন ভুক্তভোগীরা।
এ বিষয়ে সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুলিশের দুর্নীতি, অনিয়ম ও বিভিন্ন অপরাধ প্রতিরোধ এবং বাহিনীতে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে এ ব্যবস্থা চালু করা হয়। উদ্যোগটি পুলিশ বাহিনীসহ বিভিন্ন মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে। ভবিষ্যতেও এসব বিষয়ে সেলটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সহেলী ফেরদৌস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুলিশের যেকোনও সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে সেটা সংশ্লিষ্ট ইউনিটে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখে শাস্তির সুপারিশ করে। পরে পুলিশ সদর দফতর থেকে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা ছাড়াও ফৌজদারি মামলা করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হলে পুলিশের সব পর্যায়ের সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এছাড়াও অপরাধ প্রবণতা কমাতে পুলিশ সদস্যদের মোটিভেশনাল ট্রেনিংও দেওয়া হচ্ছে। যেখানে অপরাধ করলে সাজা পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়।’