আলাউদ্দিন শাহরিয়ার ।। বান্দরবানে পাহাড় ধসে প্রাণহানির সংখ্যা বাড়লেও থামছে না পাহাড় কাটা। রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে বান্দরবানের লেমুঝিরি পাড়ায় মৎস্য খামারের রাস্তা নির্মাণের নামে স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কাটছে বান্দরবান সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জামাল চৌধুরী। তার দেখাদেখি আশপাশের আরো কয়েকটি স’ানে স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কাটার মহোৎসবে মেতেছে আরও কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে বান্দরবানের সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের লেমুঝিরি এলাকায় ঘটনাস’লে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন শ্রমিক মিলে স্কেভেটর দিয়ে বিশাল একটি পাহাড়ের একপাশ কেটে ইতিমধ্যে সাবাড় করে ফেলেছেন। জানতে চাইলে শ্রমিকরা নিজেদের সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জামাল চৌধুরীর লোক বলে জানান। তারা আরও জানান, ডেইরি ফার্ম গড়ে তোলার জন্য পাহাড়ের মাটি দিয়ে বিপরীত পাশের নিচু জমি ভরাট করা হচ্ছে।
একই দৃশ্য দেখা গেছে লেমুঝিরি বম ছাত্র হোস্টেলের পার্শ্ববর্তী এবং লেমুঝিরি থেকে মায়াবন পাড়ার মধ্যবর্তী আরো ৩টি স’ানে। স্কেভেটর দিয়ে সেসব জায়গাতেও নির্দয়ভাবে পাহাড় কাটা চলছে সমানে। পাহাড় কাটা মাটি ট্রাকে করে নিয়ে ভরাট করা হচ্ছে নিচু জমি ও বিভিন্ন জলাশয়। জানা যায়, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এর দেখাদেখি স’ানীয় একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি এই পাহাড় কাটার সঙ্গে যুক্ত আছে।
খবর পেয়ে সোমবার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (্ইউএনও) শারমিন আক্তারের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত ঘটনাস’লে উপসি’ত হয়ে পাহাড় কাটা বন্ধ করে দেন। তবে ঘটনাস’লে দায়ী ব্যক্তিদের না পাওয়ায় আটক বা জরিমানা করতে পারেনি কাউকে।
স’ানীয় বাসিন্দা তাহেরা বেগম, জানে আলমসহ কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, লেমুঝিরি পাড়ায় পাহাড় ধসে গতবছর শিশুসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়। তারপরও পাহাড় কাটা বন্ধ হচ্ছে না এখানে। স্কেভেটর দিয়ে যেভাবে খাড়া পাহাড় কাটা হয়েছে বৃষ্টিতে যে কোনো মুহূর্তে পাহাড়টি ধসে ফের বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। সোমবার রাতেও স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কাটা হয়েছে। তারা সাধারণত ভোর এবং রাতের বেলার দিকে স্কেভেটর চালিয়ে পাহাড়ের মাটি কাটে। দিনের বেলায় শ্রমিকরা কেবল মাটি সরানোর কাজ করে।
পাহাড় কাটার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে নিজের পক্ষে সাফাই গেয়ে সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জামাল চৌধুরী বলেন, ব্যক্তি স্বার্থে নয়, জনস্বার্থেই পাহাড় কাটা হচ্ছে। পার্বত্য জেলা পরিষদের থোক বরাদ্দ এবং ব্যক্তিগত অর্থায়নে পাহাড় কেটে এখানে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। তাছাড়া আমার খামার বাড়ি থেকে মায়াবন পাড়া পর্যন্ত চলাচলের কোনো রাস্তা নেই। উন্নয়ন কাজের স্বার্থে পাহাড় কাটার নিয়ম আছে। তাই স’ানীয়দের স্বার্থে স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে রাস্তাটি তৈরি করছি। পাহাড়ের ভারসাম্য রক্ষা করে এখানে একটি ডেইরি ফার্ম করার স্বপ্নও রয়েছে আমার।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন জানান, পাহাড় কাটার পক্ষে কোন প্রকার যুক্তি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অবৈধভাবে পাহাড় কাটা বন্ধে প্রশাসন কঠোর ভূমিকায় রয়েছেন। ইতিমধ্যে কয়েকটি স’ানে অভিযান চালিয়ে জরিমানাও করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, চলতি বছর পাহাড় ধসে বান্দরবানের ঘুমধুমে ৩ জন, লামায় ৩ জন এবং জেলা শহরে ১ জনের মৃত্যু হয়। গতবছর এ লেমুঝিরি এলাকায় পাহাড় ধসে শিশুসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়।