সাফ ফুটবল ২০১৮
পাকিস্তানকে হারালো বাংলাদেশ

ম্যাচের বাকি তখন পাঁচ মিনিট। গ্যালারিতে থাকা হতাশ দর্শকরাও আস্তে আস্তে মাঠ ছাড়তে থাকেন। তখনই নাটকীয়তা। মুহূর্তটাই বদলে দিলেন তপু বর্মণ। বিশ্বনাথ ঘোষের লম্বা থ্রো মাথায় লাগিয়ে পাকিস্তানের জালে পাঠান তপু বর্মণ। স্তব্ধ গ্যালারি গর্জে ওঠে। যারা মাঠ ছেড়ে যাচ্ছিলেন তারাও দাঁড়িয়ে উদযাপনে ব্যস্ত। গোল করার আনন্দে গায়ের জার্সি খোলা তপু কোথায় যে হারিয়ে গেলেন। সতীর্থদের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে হয়তো বলেছেন, ‘দেখ, আমি পেরেছি।’ সত্যিই পেরেছেন। তার এই গোল যে বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে গতকাল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে পাকিস্তানকে ০-১ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালের পথে এগিয়ে গেল জেমি ডের দল। একই সঙ্গে প্রতিশোধও নিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৩ কাঠমান্ডু সাফে গ্রুপ পর্বে এই পাকিস্তানের কাছেই ২-১ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। ঢাকার মাঠে এবার বদলা নিলেন মামুনুল ইসলামরা। আগামীকাল নেপালের বিপক্ষে গ্রুপ ‘এ’র সেরা হওয়ার লড়াইয়ে নামবেন জামাল ভূঁইয়ারা। ওই ম্যাচে ড্র করলেই নয় বছর পর শেষ চারে উঠে যাবে বাংলাদেশ। এই গ্রুপে দুই ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে জেমি ডের দল। নেপাল ও পাকিস্তানের পয়েন্ট সমান ৩। ভুটান-বধের পর ফুটবলে সাড়া জাগে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার আসে প্রায় ১৫ হাজার দর্শক। ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে মালয়েশিয়া যুব দলের সঙ্গে বাংলাদেশের ম্যাচে গ্যালারি পরিপূর্ণ ছিল। সাড়ে তিন বছর পর আবারও বঙ্গবন্ধুতে দর্শকের ঢল নামে। পুরো ম্যাচে মাসুক মিয়া জনি-তপু বর্মণদের নাম ধরে গলা ফাটিয়েছেন তারা। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমার্ধে অচেনা বাংলাদেশ। মধ্যমাঠ বলতে কিছুই ছিল না। মাঝমাঠ পাকিস্তানের দখলে। বল নিয়ে পাকিস্তানের সীমানায় যেতে গেলেই মাঝমাঠে বাধাপ্রাপ্ত হন মামুনুল ইসলাম-জামাল ভূঁইয়ারা। অথচ পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা ঠিকই মধ্যমাঠ দিয়ে বাধা ছাড়াই বল নিয়ে বাংলাদেশের সীমানায় আক্রমণ করেন। গোলের কয়েকটি সুযোগও সৃষ্টি করে হোসে অ্যান্তোনিও নোগুয়েরার দল। গোলরক্ষক শহিদুল আলম কয়েকবার দলকে বাঁচিয়েছেন। আতিকুর রহমান ফাহাদের জায়গায় মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলামকে নামিয়েও খুব একটা ফল আসেনি। বাংলাদেশ আক্রমণ শানিয়েছে লেফট উইংয়ে। ডান উইং ছিল নিষ্ফ্ক্রিয়। ওয়ালী ফয়সাল-জামাল ভূঁইয়াদের উঁচু সেন্টারগুলো মাথায় লাগাতে ব্যর্থ হন মাহবুবুর রহমান সুফিল-সাদ উদ্দিনরা। উচ্চতায় এগিয়ে থাকা জেশান রেহমান-মহসনি আলীরা লাফিয়ে উঠে হেড করে বাংলাদেশের সব চেষ্টায়ই বৃথা করে দেন। প্রথম ৪৫ মিনিট বলার মতো কোনো আক্রমণই করতে পারেনি বাংলাদেশ। একটা কর্নার আদায় করলেও তার সদ্ব্যবহার করতে ব্যর্থ হন জেমি ডের শিষ্যরা। প্রথমার্ধে বাংলাদেশের পাসগুলোও ছিল এলোমেলো। ছোট ছোট পাসে খেলার বদলে লম্বা পাসে খেলার কৌশল অবলম্বন করে স্বাগতিকরা। বল পজিশনে এগিয়ে থাকলেও আক্রমণ বেশি করেছে পাকিস্তানই। ভুটান ম্যাচের বাংলাদেশকে প্রথমার্ধে যায়নি চেনা।

বিরতির পর গতি আসে বাংলাদেশের খেলায়। একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে তারা। বলও বেশিরভাগ সময় ছিল পাকিস্তানের সীমানায়। কিন্তু রক্ষণে শক্তিশালী পাকিস্তানের জালে বলই পাঠাতে পারেনি স্বাগতিকরা। ৫৮ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে বিপুল আহমেদের শট পাকিস্তান গোলরক্ষক ইউসুফ ইজাজ বাটের হাতে চলে গেলে হতাশা নেমে আসে বাংলাদেশ শিবিরে। কাউন্টার অ্যাটাকে পাকিস্তানও ছিল বিপজ্জনক। ৫৫ মিনিটে রক্ষণের ভুলে গোল খেতে বসে বাংলাদেশ। মোহাম্মদ আলীর শট লাফিয়ে উঠে কর্নারের বিনিময়ে ফেরান গোলরক্ষক শহিদুল। গোলের জন্য মরিয়া জামাল ভূঁইয়ারা একচেটিয়া প্রাধান্য বিস্তার করে খেলতে থাকেন। ৮২ মিনিটে মামুনুল ইসলামের সেট পিস বক্সের ভেতরে পেয়েও বল পোস্টে রাখতে পারেননি তপু বর্মণ। সে তপুই এনে দেন কাঙ্ক্ষিত গোল। ৮৫ মিনিটে বিশ্বনাথ ঘোষের লম্বা থ্রো মাথা ছুঁয়ে বল জালে জড়ান এ ডিফেন্ডার। একটু পর রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই জয়ের আনন্দে মেতে ওঠে গ্যালারি।

শেয়ার করুন