প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির সহায়ক সরকারের দাবি অসাংবিধানিক—এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে, তা ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব পালন করবে। এ সময় সরকারের পরিসর ছোট করা হবে। সরকার নির্বাচনের সময়ে শুধু রুটিন কার্যক্রম পরিচালনা করবে। কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত নেবে না।
বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে সরকারের চতুর্থ বর্ষপূর্তির দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হবে। কিন্তু সে সরকার কেমন হবে তার ব্যাখ্যা ওই বক্তব্যে ছিল না।
সংসদে সরকারি দলের সাংসদ তানভীর ইমামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে, তার একটি ব্যাখ্যা দেন। সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন হচ্ছে সংবিধান। সংবিধান অনুযায়ী সহায়ক সরকার বলে কোনো সরকার গঠন করার বিধান নেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিএনপি কোনো দিনই গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার পক্ষে ছিল না। আর এ জন্যই বর্তমানে তারা অসাংবিধানিকভাবে সহায়ক সরকারের দাবি করে আসছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের সরকার গণতন্ত্রকে সব সময় সমুন্নত রাখবে। সে জন্য সংবিধান পরিপন্থী কোনো সরকারব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করব না।’
বিএনপির অবৈধ দাবি করা অভ্যাস
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি জন্ম নিয়েছে মার্শাল ল জারি করে সংবিধান লঙ্ঘন করার মাধ্যমে অবৈধ পথে। তাই অবৈধ দাবি করাটা তাদের অভ্যাস। জিয়াউর রহমানের আমলে ভোটারবিহীন গণভোট (হ্যাঁ/না ভোট) করেছিল বিএনপি এবং সামরিক বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে কোনো নিয়মনীতি অনুসরণ না করে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে সরিয়ে জিয়াউর রহমান নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে এবং সরকার গঠন করেন। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে পরবর্তী সময়ে তাঁর এই কর্মকাণ্ড অবৈধ ঘোষিত হয়েছে।
বিএনপি নির্বাচনী-ব্যবস্থা ধ্বংস করেছিল
তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে সরকার গঠন করার পর মাগুরা ও ঢাকার উপনির্বাচনে নজিরবিহীন কারচুপি করেছিল। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন করে অবৈধ সরকার গঠন করে বিএনপি। গণ-আন্দোলনের মুখে দেড় মাসের মধ্যে তাদের পতন ঘটে। ওই সময়ে বিএনপি নির্বাচনী-ব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছিল। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্পষ্ট রূপরেখা থাকা সত্ত্বেও তাদের পছন্দসই ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার চেষ্টা করে নির্বাচনের নামে প্রহসন করার উদ্দেশ্য থাকায় দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর ক্ষমতায় থাকে।