স্বতন্ত্র ভোট করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে চাইছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী। নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় দলটি দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারবে না। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জামায়াত এখন বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করার কথা ভাবছে।
আরপিও অনুযায়ী, স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে চাইলে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে এক শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক সই থাকতে হয়। তাদের ভোটার নম্বরসহ বিস্তারিত পরিচয় দিতে হয়। জামায়াতের আশঙ্কা, সমর্থনকারীদের কাউকে চাপ দিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে যদি বলানো হয়, জোর করে সই নেওয়া হয়েছে বা সই ভুয়া, তাহলে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যাবে। তাছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকেও ধানের শীষ প্রতীক ব্যবহারের জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। বিএনপির আরেক শরিক ঐক্যফ্রন্ট নেতারাও এতে আপত্তি করবে না। এ ব্যাপারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এহসানুল মাহবুব জোবায়ের জানান, স্বতন্ত্র পরিচয়ে নির্বাচন করার দলীয় সিদ্ধান্ত থাকলেও পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে তা বদল হতে পারে। ২০-দলীয় জোটের অন্য শরিকদের মতো জামায়াতও ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে পারে। এ বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা চলছে। বিএনপির সঙ্গেও আলোচনা হচ্ছে। ২৮ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হওয়ার আগেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জানা গেছে, জামায়াত নেতারা ৬৪টি আসনে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। জোটগতভাবে অন্তত ৩৫টি আসন চান তারা। কম আসন দেওয়া হলে বেশ কিছু আসনে জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী দেখা যেতে পারে। এ ছাড়াও ঢাকা-১৫ আসনে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন। জামায়াত যেসব আসন ছাড় দেবে না তার মধ্যে ঢাকা-১৫ একটি। নেতা-কর্মীরা জানান, স্বতন্ত্র নাকি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া হবে, এ সিদ্ধান্ত না হওয়ায় তারা মনোনয়নপত্র জমা দেননি। ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সই করা দলীয় মনোনয়নের চিঠি সংগ্রহ করে রাখা হচ্ছে জামায়াতের প্রার্থীদের জন্য। ২৭ নভেম্বরের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতারা।
জামায়াতের এক কর্মপরিষদ সদস্য জানান, ভোটের মাঠে বিএনপি প্রার্থীরা কিছুটা ছাড় পেলেও জামায়াতের কাউকে ছাড় দেবে না পুলিশ ও প্রশাসন। তাই বিএনপির প্রতীকে নির্বাচন করলে কিছুটা হলেও বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে। স্বতন্ত্র পরিচয়ে নির্বাচন করলে একেক আসনে একেক প্রতীকে ভোট করতে হবে। তিনি জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দণ্ডিত হয়ে এবার দলের হেভিওয়েট প্রার্থীরা ভোটে নেই। সাবেক এমপি অনেকেই প্রয়াত কিংবা বয়োবৃদ্ধ। দলের আমির মকবুল আহমাদও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। নতুন প্রার্থীদের স্বতন্ত্র পরিচয়ে ভোটারের কাছে পরিচিত করানো কঠিন। তাই ধানের শীষে নির্বাচন করার পক্ষে মতামত দিয়েছেন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারা। জামায়াত নেতারা জানান, জামায়াতকে ২৫টির বেশি আসনে ছাড় দিতে রাজি নয় বিএনপি। দলটির সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠকে অংশ নেওয়া জামায়াতের এক নেতা জানান, জোটগতভাবে ৩৫ আসন দাবি করা হয়েছে। ২০০৮ সালে ৩৮ আসনে নির্বাচন করা জামায়াত ৩৩টিতে জোটের মনোনয়ন পেয়েছিল। এবার দুটি আসন বেশি চায়। জামায়াত ধানের শীষে নির্বাচন করলে এমপি ও ভোট বিএনপির ঘরেই যাবে। তাই বেশি সংখ্যক আসন ছাড়তে বিএনপি রাজি হবে বলে মনে করছেন তারা।
তাছাড়া জামায়াত স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে বিএনপির প্রার্থী বিদ্রোহী হিসেবে থেকে যেতে পারেন। কিন্তু জামায়াত ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করলে বিদ্রোহীরা তখন আর সুবিধা করতে পারবেন না। বিএনপি নেতা-কর্মীরা ধানের শীষের পক্ষেই থাকবেন। এদিকে জামায়াত বাদে ২০-দলীয় জোটের আট নিবন্ধিতসহ বাকি দলগুলো বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোটে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপির আরেক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের তিন নিবন্ধিত দল গণফোরাম, জেএসডি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থীরাও ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন। গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেছেন, জামায়াত ঐক্যফ্রন্ট নয়, ২০ দলের শরিক। ২০ দলের শরিকরা কে কোন প্রতীকে নির্বাচন করবে তাদের বিষয়। ঐক্যফ্রন্টের এ নিয়ে কোনো আপত্তি নেই।