বাংলাদেশে ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যেই কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের দ্বিতীয় একটি দলকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এনামুর রহমান এ কথা জানিয়েছেন। তবে এ সপ্তাহের কোন্ দিন কিংবা এ দফায় কতজন রোহিঙ্গাকে সেখানে স্থানান্তর করা হচ্ছে, সে সংখ্যা তিনি জানাননি। এর আগে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দ্বিতীয় দফায় এক হাজার শরণার্থীকে ভাসানচরে নেয়া হবে।
প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এনামুর রহমান বলেছেন, “রোহিঙ্গাদের আরেকটি দল ভাসানচরে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বিষয়টির নেতৃত্ব দিচ্ছে।” এর আগে ডিসেম্বরের চার তারিখে ১,৬৪৫ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার আপত্তির মধ্যেই তখন ওই রোহিঙ্গাদের প্রথমে বাসে করে চট্টগ্রামে নেয়া হয়, এরপর সেখান থেকে তাদের নৌ বাহিনীর জাহাজে করে ভাসানচরে পাঠানো হয়। সে সময় জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাসানচরে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা সম্পর্কে জাতিসংঘ অবগত আছে। কিন্তু শরণার্থীদের স্থানান্তর প্রস্তুতি কিংবা রোহিঙ্গাদের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংস্থাটিকে যুক্ত করা হয়নি।
২০১৭ সালের আগষ্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও নিপীড়নের মুখে দেশটি থেকে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। ওই বছরের নভেম্বর মাসে কক্সবাজার থেকে এক লক্ষ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে একটি প্রকল্প নেয় সরকার। আশ্রয়ণ-৩ নামে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে। কিন্তু ২০১৮ সালে যখন প্রথম তাদের স্থানান্তরের পরিকল্পনা করা হয়, তখন থেকেই রোহিঙ্গারা সেখানে যাবার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে আসছিল। এদিকে, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী সব সময় বলে এসেছে, ভাসানচরে যাবার ব্যাপারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ওপর যেন চাপ প্রয়োগ না করা হয়, তারা যেন জেনে-বুঝে এবং মুক্তভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রথম দফায় রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের সময় সরকার বলেছিল যে, যারা সেখানে গেছেন, স্থানান্তরের জন্য তাদের কোনোরকম জোর করা বা ভয়ভীতি দেখানো হয়নি, তারা স্বেচ্ছায় সেখানে যাচ্ছেন।
রোববার কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ‘রোহিঙ্গাদের যে দলটি এবার যাবে তারা স্বেচ্ছায় যাচ্ছেন।’ সরকার বরাবর বলে এসেছে, কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরের চেয়ে ভাসানচরে জীবনযাত্রার মান ভালো। তবে, জাতিসংঘ জানিয়েছে ভাসানচরে কোন ‘সেফটি অ্যাসেসমেন্ট’ চালানোর অনুমতি দেয়া হয়নি সংস্থাটিকে।