দেড় মাস পর আজ শনিবার বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে।
বিকাল সাড়ে ৫টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন দলটির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান।
দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, দলের পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি, দল পূণর্গঠন, জোট সম্প্রসারণ ও ছাত্রদলের সংকট সমাধান ইত্যাদি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এছাড়া সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের নির্বাচিত চারজনের শপথ নেয়ার ব্যাখ্যাও চাওয়া হতে পারে এ বৈঠকে।
গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রায় প্রতি সপ্তাহের শনিবার স্থায়ী কমিটির বৈঠক বসত। কিন্তু দলের নির্বাচিত এমপিদের শপথ গ্রহণকে কেন্দ্র করে প্রায় দেড় মাস ধরে কোনো বৈঠক হয়নি।
যদিও বিএনপি নেতারা জানান, যেহেতু রমজান মাসে কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকতেন না, সে কারণেই গত দেড় মাসে স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়নি।
তবে খোঁজ নিয়ে বৈঠক না হওয়ার পেছনে ভিন্ন ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক বসেছিল।
ওই বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের নির্বাচিতদের শপথ নেয়ার বিষয়ে স্থায়ী কমিটির নেতাদের কাছ থেকে একক ক্ষমতা চেয়ে নিয়েছিলেন।
তখন তাকে স্থায়ী কমিটির নেতারা বলেছিলেন, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দলের চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানই সর্বময় ক্ষমতার মালিক।
সেক্ষেত্রে এই ক্ষমতা চাওয়ায় স্থায়ী কমিটির নেতারা বিব্রতবোধ করেছিলেন। বৈঠকের পরদিন ২৯ এপ্রিল তারেক রহমান দলের নির্বাচিতদের শপথ গ্রহণের সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া অন্যরা শপথ নেন।
সূত্র জানায়, শপথ নেয়াকে কেন্দ্র করে স্থায়ী কমিটির নেতারা চরম ক্ষুব্ধ হন। এর কয়েকদিন পর স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকেও পরে তা বাতিল করতে বাধ্য হয় বিএনপি।
জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েক নেতা বৈঠকে বসতে অস্বীকৃতি জানানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওই বৈঠক বাতিল করা হয়েছিল।
নয়াপল্টনে স্কাইপের মাধ্যমে কথা বলে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের ক্ষোভ প্রশমনে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্রকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েক সদস্যের সঙ্গে বৈঠকও করেন গয়েশ্বর।
স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কাছে নিজেদের অবস্থান জানাল ছাত্রদল:
এদিকে বয়সসীমা নির্ধারণ না করে ধারাবাহিক কমিটির দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদলের নেতারা শুক্রবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যের সঙ্গে দেখা করেছেন।
এ সময় তাদের কাছে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন সদ্য সাবেক ছাত্রনেতারা। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিকালে প্রথমে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও ড. আবদুল মঈন খানের সঙ্গে দেখা করেন তারা।
পরে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলম, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে দাবির বিষয়ে অবহিত করেন ক্ষুব্ধ নেতারা।
একই সঙ্গে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মঙ্গলবার নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঘটে যাওয়া পরিস্থিতির বিষয়টিও তুলে ধরেন ছাত্রদল নেতারা।
এছাড়া সার্চ কমিটিতে থাকা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিও শুক্রবার রাতে ছাত্রদল নেতাদের ফোন করে ইতিবাচক সমাধানের আশ্বাস দেন।
এ বিষয়ে ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ইখতিয়ার রহমান কবির বলেন, বিএনপির সিনিয়র নেতারা তাদের ওপর আস্থা রাখার কথা বলেছেন।
আজ শনিবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন তারা। একই সঙ্গে বিএনপি মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা আমাদেরকে কোনো কর্মসূচি পালন না করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এজন্য শনিবার নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি আমরা প্রত্যাহার করেছি।