রাজধানীতে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় এখন উত্তাল গোটা দেশ। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। এদিকে দেশব্যাপী অঘোষিত বাস ধর্মঘট চলছে। ফলে যানবাহন সংকটে বিপাকে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় ঢাকার সাথে সারা দেশের যোগাযোগ আপাতদৃষ্টিতে বন্ধ। এতে দূরযাত্রায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।
বিশেষ করে বিভিন্ন জেলা থেকে জরুরি কাজে ঢাকায় আসতে চাইলেও পারছেন না অনেকে। বিশেষ করে লোকাল পরিবহনে বেশ কিছু দূর এগোলেও রাজধানীতে প্রবেশ পথেই ঝামেলায় পড়ছেন তারা। রাজধানীতে প্রবেশে রিকশা, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলই আর পায়ে হেঁটে চলাই এখন ভরসা। তবে পথে পথে ছাত্রদের জিজ্ঞাসাবাদ আর লাইসেন্স দেখাতেই বিরক্ত হচ্ছেন চালক-যাত্রীরা।
ফরিদপুর থেকে আলিম নামে এক যাত্রী তার স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় যাওয়া চেষ্টা করছিলেন। একদিকে দূরপাল্লার বাস বন্ধ, অন্যদিকে আর্থিক সমস্যা থাকায় অসুস্থ স্ত্রীর জন্য কোন অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে পারেননি তিনি। অগত্য বাধ্য হয়েই স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে সকালে রওনা দেন। পাটুরিয়া ঘাট পার হয়ে অন্য যাত্রীদের ঠেলাঠেলি সামলে স্ত্রীকে নিয়ে ওঠেন লোকাল বাসে। এরপর এক অজানা আতঙ্কে বাসে বসে সময় গুনছিলেন তিনি। হঠাৎ ধামরাই পার হয়ে ইসলামপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কবলে পড়ে বাসটি। চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স চেকিংয়ে দীর্ঘ সারি পরে যায় সড়কে। কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে আলিমের। স্ত্রীর কথা ভেবে বারবার উঁকি দিতে থাকেন জানলায়। এরপর একসময় ছাত্ররা বাস চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করেন। তবে সব কাগজ ঠিক থাকলেও তারা বাসটি আটকে দিলেন অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ার অজুহাতে। আর তখনই চিৎকার করে আলিম বলে উঠলেন, ‘ও ভাই, আল্লাহ’র ওয়াস্তে আমাদের যাইতে দেন। আমার বউটা খুব অসুস্থ। ঢাকায় ডাক্তার দেখাতে নিয়া যাইতে দেন।
শুধু আলিম নন, দূরযাত্রার পথে সবাইকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এদিকে রাজধানীর প্রবেশ পথে নবীনগর এবং বাইপাইল থেকে কোন বাস চলাচল করছেনা। ফলে পায়ে হেঁটে এবং রিকশায় চলাচলের চেষ্টা করছেন সবাই। সকাল থেকে রাজধানীর আব্দুলাহপুর থেকে এয়ারপোর্ট সড়ক ছিল বন্ধ। রাস্তার মাঝে শিক্ষর্থীদের বসে থেকে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। তবে অ্যাম্বুলেন্সকে খুব দ্রুত ছেড়ে দিতে দেখা গেছে। এছাড়া পথে পথে সব ধরনের যানবাহন চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। এমনকি মোটারসাইকেলে সহযাত্রীর হেলমেট না থাকলে তাতে বাধা দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
এদিকে শিক্ষার্থীদের এমন বিক্ষোভে কেউ কেউ বিরক্ত হলেও অনেকে সন্তোষ প্রকাশ করে বাহবাহ দিচ্ছেন। তারা বলছেন, রাজধানীতে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। যেসব কাজ পুলিশের, তা এখন শিক্ষার্থীরাই করছে এবং চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। প্রতিদিন যদি সব জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ এভাবে তদারকি করতো তাহলে সড়কে এতো বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হত না।