দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, সরকার বিগত ১০ বছরে দুর্যোগ পরবর্তী ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের পরিবর্তে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এর ফলে দুর্যোগে মানুষের জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি দৃশ্যমানভাবে হ্রাস পেয়েছে। আজকের বিশ্ব যেখানে দুর্যোগে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার কথা ভাবছে সেখানে বাংলাদেশ ১০ বছর আগে থেকেই সেই বিষয় নিয়ে কাজ করে আসছে।
আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০১৮ উপলক্ষে শনিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো শাহ্ কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ সম্ভু, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ এম এ হাশিম, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. মাহবুবা নাসরীন প্রমুখ।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের মধ্যেই নিহিত রয়েছে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার সাফল্য। এ উপলব্ধি থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশে প্রথম দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কর্মসূচি গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ফলে মানুষের মৃত্যুহার ও সহায় সম্পদের ক্ষতি অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ১০ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে একই মাত্রার ঘূর্ণিঝড় মোরা’য় মাত্র ৬ জন লোক মারা যায়।
সরকার যে কোনো দুর্যোগে মানুষের মৃত্যুর হার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে চায় জানিয়ে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বলেন, প্রত্যেকটি দুর্যোগ মোকাবিলায় পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ, অবকাঠামো নির্মাণ, প্রয়োজনীয় উদ্ধার সরঞ্জামাদি সংগ্রহ, স্বেচ্ছাসেবকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে বাংলাদেশ একটি সক্ষম ও সহনশীল জাতিতে উপনীত হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ শৈত্য প্রবাহ, হাওর এলাকায় আগাম বন্যা, ঘূর্ণিঝড় মোরা, পাহাড় ধস, পরপর দুইবারের বন্যা ও রোহিঙ্গা সমস্যার মত বড় বড় ৬টি দুর্যোগ অত্যন্ত সফলতার সাথে মোকাবিলা করেছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা বিবেচনা করে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে এখন দুর্যোগ মোকাবিলায় রোল মডেল বলা হয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী আরও বলেন, প্রতিবন্ধিতা বান্ধব দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে সরকার আন্তর্জাতিক পরিসরে নিয়ে গিয়ে বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করতে পেরেছে। যে কোনো দুর্যোগে বিনা পয়সায় ১০৯০ নম্বরে ডায়াল করলেই দুর্যোগের পূর্বাভাস আবহাওয়া বার্তা জানা যাবে।
এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য- ‘কমাতে হলে সম্পদের ক্ষতি, বাড়াতে হবে দুর্যোগের পূর্ব প্রস্তুতি’। দিবসটি উপলক্ষ্যে দেশব্যাপী আলোচনা সভা, র্যালি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পোস্টার প্রদর্শন ও লিফলেট বিতরণ করেছে।
এরই অংশ হিসেবে ঢাকায় আলোচনা সভা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও মেলার আয়োজন করা হয়। ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন দুর্যোগে সাহসিকতার সাথে মানুষের জানমাল রক্ষায় অসাধারণ ভূমিকা রাখায় এ বছর সিপিপির ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককে জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত করা হয়।