দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালুর আরও বেশ কিছু সম্পদ জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আদালতের আদেশে গতকাল বৃহস্পতিবার দুদক ওইসব সম্পদ জব্দ করে। দুর্নীতি দমন কমিশনের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার ঢাকা মহানগর আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. আল মামুন ফালুর সম্পত্তি জব্দের এ নির্দেশ দেন।
আদালতের আদেশে এসব সম্পদের দাম প্রায় ৩৬ কোটি টাকা উল্লেখ করা হলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন এসব সম্পদের দাম ৩০০ কোটি টাকারও বেশি।
দুদকের মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানান, দুবাইয়ে ১৮৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা পাচারের অভিযোগে চলতি বছরের ১৩ মে মোসাদ্দেক আলী ফালু ও আরএকে গ্রুপের এমডিসহ চারজনকে আসামি করে মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। মামলার তদন্তকালে ফালুর এসব সম্পদের সন্ধান পাওয়া যায়।
তিনি এসব সম্পদ অন্য কোথাও হস্তান্তর, স্থানান্তর, বন্ধক বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন জানতে পেরে আদালতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। পরে গত ২৭ অক্টোবর তদন্ত কর্মকর্তা এসব সম্পদ জব্দের জন্য আদালতে আবেদন করলে ২৯ অক্টোবর আদেশ দেয় আদালত। সে আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল এসব সম্পদ জব্দ করা হয়।
দুদক কর্মকর্তা প্রণব কুমার আরও জানান, ফালুর যেসব সম্পদ জব্দ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে রোজা প্রোপার্টিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে এর ৯৩ লাখ শেয়ার, যার মূল্য ৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা, রাকীন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক হিসেবে ২০ শতাংশ শেয়ার, যার মূল্য ২৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, রোজা এন্টারটেইনমেন্টের পরিচালক হিসেবে থাকা শেয়ার, যার মূল্য ২০ লাখ টাকা, রোজা ইনভেস্টমেন্টের পরিচালক হিসেবে থাকা শেয়ার, যার মূল্য ২৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং আইএফআইসি ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখায় রোজা প্রোপার্টিজের ব্যাংক হিসাব। এর বাইরে কাকরাইলে ফালুর ২২ দশমিক ৫৩ শতাংশ আয়তনের একটি বাণিজ্যিক প্লটও ক্রোক করা হয়েছে।
দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, রোজা প্রোপার্টিজের শেয়ারের অভিহিত দাম ৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা হলেও এর বাজারমূল্য কমপক্ষে ৯৩ কোটি টাকা। একইভাবে রাকীন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের ২০ শতাংশ শেয়ারের বাজারমূল্য কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকা। আর কাকরাইলের বাণিজ্যিক প্লটটির দাম অন্তত ৫০ কোটি টাকা।
এর আগে চলতি বছরের শুরুতে মোসাদ্দেক আলী ফালু ও তার স্ত্রী মাহবুবা সুলতানার আরও কিছু সম্পদ জব্দ করে দুদক। তখন রাজধানীর উত্তরখানে আলাদা দুটি জায়গায় মোট ৬৭ শতাংশ জমি, বড় মগবাজারের পাঁচটি জায়গায় ৪৫ শতাংশ জমি, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দুটি দোকান, কাকরাইলে দুটি জায়গায় ১৮ শতাংশ জমি, বাউনিয়ায় সাড়ে ৮২ শতাংশ জমি, তেজগাঁও শিল্প এলাকায় সাড়ে ছয় শতাংশ জমি এবং কাকরাইল ও দক্ষিণ শাহজাহানপুরে ফালুর মালিকানাধীন একটি করে ফ্ল্যাট জব্দ করা হয়। এ ছাড়া ফালুর ইন্টারন্যাশনাল টেলিভিশন চ্যানেল লিমিটেড (এনটিভি), রোজা অ্যাগ্রো লিমিটেড, রোজা প্রোপার্টিজ লিমিটেড ও স্টার পোরসিলিন প্রাইভেট লিমিটেডের শেয়ারও জব্দ করা হয়। একই সময়ে ফালুর স্ত্রী মাহবুবা সুলতানার মালিকানাধীন একটি ছয়তলা বাড়ি এবং ইন্টারন্যাশনাল টেলিভিশন চ্যানেল লিমিটেড (এনটিভি), রোজা অ্যাগ্রো লিমিটেড ও এমএএইচ সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সব শেয়ার জব্দ করা হয়।