রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি সংকট সামাল দিতে দূরদর্শী ভূমিকার জন্য ইন্টার প্রেস সার্ভিসের ‘ইন্টারন্যাশনাল এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ এবং গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশনের ‘স্পেশাল রিকগনিশন ফর আউটস্ট্যান্ডিং লিডারশিপ’ সম্মাননা পেয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিউইয়র্কে বৃহস্পিতবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার পর পৃথক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার হাতে পুরস্কার দুটি তুলে দেওয়া হয়।
পুরস্কার দুটি বাংলাদেশের জনগণকে উৎসর্গ করে শেখ হাসিনা বলেছেন, সব দেশেরই নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের পাশে দাড়ানো উচিৎ।
মানবিক কারণে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে নজির স্থাপন করায় ইন্টার প্রেস সার্ভিস শেখ হাসিনাকে ‘ইন্টারন্যাশনাল এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ দিয়েছে। এর আগে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান ও বুট্রোস বুট্রোস-ঘালি এবং ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট মার্তি আহতিসারি এ পুরস্কার পেয়েছেন।
আর দাতব্য সংগঠন ‘গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন’ শেখ হাসিনাকে ‘স্পেশাল রিকগনিশন ফর আউটস্ট্যান্ডিং লিডারশিপ’ সম্মাননা দিয়েছে রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে।
জাতিসংঘ সদর দফতরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আয়োজিত ইন্টার প্রেস সার্ভিসের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর হাতে ‘ইন্টারন্যাশনাল এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ তুলে দেন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক উইলিয়াম লুসি সুইং। এরপর রাতে নিউইয়র্কের পার্ক এভিনিউয়ে আরেক অনুষ্ঠানে গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশনের প্রেসিডেন্ট ইরিনা বোকোভা প্রধানমন্ত্রীর হাতে ‘স্পেশাল রিকগনিশন ফর আউটস্ট্যান্ডিং লিডারশিপ’ অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন।
নাইজারের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদু ইসুফু, তিউনেসিয়ার প্রেসিডেন্ট বেজি সাইদ এসেবসি এবং গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপ্রাসও এই পুরস্কার পেয়েছেন।
সম্মাননা গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে মিয়ানমারে; তাদেরকেই এর সমাধান করতে হবে। রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে মিয়ানমারে নিরাপদ আবাসস্থল তৈরির ওপর জোর দেন তিনি। মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার যেন তাদের নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়, সেজন্য আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা, প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ আহমেদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এসময় উপস্থিত ছিলেন।
জাতিসংঘ মহাসচিবের বৈঠক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ‘পূর্ণ সমর্থন ও সব ধরনের সহযোগিতার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক। নিউইয়র্কে বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতিসংঘ সদর দফতর আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে শেখ হাসিনার এই বৈঠক হয়।
শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, তাদের আলোচনায় রোহিঙ্গা সঙ্কট এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়। শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও সব ধরনের সহযোগিতার কথা বলেছন জাতিসংঘ মহাসিচব। বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতি তার ভালবাসার কথা তিনি তুলে ধরেছেন।
পররাষ্ট সচিব বলেন, বৃহস্পতিবারের বৈঠকেও জাতিসংঘ মহাসচিব শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকৃত অর্থেই ‘লক্ষণীয় ও শিক্ষণীয়’। বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রুত শুরু করার ওপর জোর দিয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় শেখ হাসিনাকে নেতৃত্ব ধরে রাখারও অনুরোধ করেছেন তিনি।
শহীদুল হক বলেন, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সবার অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। আন্তর্জাতিক রেডক্রসের প্রেসিডেন্ট পিটার মাউরা এবং ৭৩তম সাধারণ পরিষদের সভাপতি মারিয়া ফেরনান্দা এসপিনোসা গার্সিসও বৃহস্পতিবার জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন।