সংক্ষিপ্ত সময়ের ব্যবধানে বিশেষ বর্ধিত সভা ডাকা হলেও এ নিয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের মধ্যে বিশেষ আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। তারা দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিজেদের কৌশল উপস্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
আগামী ২৩ জুন শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এই বর্ধিত সভা হবে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ, জাতীয় পরিষদ, উপজেলা-পৌরসভা ও জেলা-মহানগর সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক, সকল মহানগরের আওতাভুক্ত প্রতিটি থানা-ওয়ার্ড সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, দলীয় এমপি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ ও মহিলা), সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়ররা এই বিশেষ বর্ধিত সভায় উপস্থিত থাকবেন। বর্ধিত সভার আগে তৃণমূল নেতারা সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলের নতুন কেন্দ্রীয় কার্যালয় উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
বর্ধিত সভায় উপজেলা-পৌরসভার পাশাপাশি মহানগরের আওতাভুক্ত থানা-ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের আমন্ত্রণ জানানোর প্রথা না থাকলেও দলের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আগ্রহে এবার তৃণমূলের নেতারা বর্ধিত সভায় উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, ২৩ জুন দলের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে নতুন কেন্দ্রীয় কার্যালয় উদ্বোধনকে ঘিরেই তৃণমূল নেতাদের বিশেষ বর্ধিত সভায় ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সভায় তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা বক্তব্যের সুযোগ পাবেন বলে জানিয়েছেন উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ূয়া।
জানা গেছে, উপজেলা-জেলা ও মহানগর সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকরা যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েই বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন। তারা খোলামেলা কথা বলবেন বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে কয়েকজন তৃণমূল নেতা সমকালকে বলেছেন, তাদের প্রধান বিবেচ্য বিষয় একটাই- আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের বিজয়। তাদের মতে, নির্বাচনী বৈতরণী পেরুতে হলে প্রার্থীর জনপ্রিয়তা বিশেষ বিবেচনায় আনতে হবে। প্রয়োজনে বিতর্কিত পুরনো এমপিদের বাদ দিয়ে জনপ্রিয় নতুন প্রার্থী বাছাই করতে হবে। সেই সঙ্গে দলের জনপ্রিয়তা আরও বাড়াতে হলে মাদক নির্মূল অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। তৃণমূল নেতারা চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ এবং হাইব্রিড নেতাকর্মীদের দ্রুত দল থেকে সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নানা কারণে ইতিমধ্যেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়া নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দেবেন।
গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ সমকালের সঙ্গে আলাপকালে জানিয়েছেন, তিনি সুযোগ পেলে আগামী নির্বাচনে স্বচ্ছ ইমেজের জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানাবেন। একই সঙ্গে চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি হাইব্রিড তাড়ানোর প্রস্তাব করবেন।
নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী এমপি বলেছেন, আগামী নির্বাচনের বৈতরণী পেরুনোর জন্য বিতর্কিত পুরনো এমপিদের বাদ দিয়ে জনপ্রিয় নতুন প্রার্থী বাছাই করতে হবে। দলের জনপ্রিয়তা আরও বাড়াতে মাদক নির্মূল অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। একরামুল করিম চৌধুরী সুযোগ পেলে এই বিষয়গুলো বর্ধিত সভায় উপস্থাপন করবেন।
নরসিংদী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র কামরুজ্জামান কামরুলের ভাষায়, আগামী নির্বাচনে জয় পেতে হলে সারাদেশে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্য আরও মজবুত করতে হবে। সকল স্তরে দলের বিভেদ দূর করতে হবে। অন্যথায় নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তিনি বর্ধিত সভায় বক্তৃতার সুযোগ পেলে বিষয়টি তুলে ধরবেন।
৪ হাজার ১৫৭ নেতা বিশেষ বর্ধিত সভায় অংশ নেবেন। তাদের মধ্যে ৪ হাজার ৩৫ জন তৃণমূল পর্যায়ের নেতা। ১২২ জন কেন্দ্রীয় নেতার মধ্যে কার্যনির্বাহী সংসদের ৮১ এবং উপদেষ্টা পরিষদের ৪১ জন রয়েছেন। তৃণমূল নেতাদের মধ্যে জাতীয় পরিষদের ৯৯, জেলা-মহানগরের ১৫৬ জন সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক, উপজেলার ৯৮৪ জন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, পৌরসভার ৬৪৬ জন সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক, সংরক্ষিত মহিলাসহ ২৮৯ জন দলীয় এমপি, ১১টি সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত ৯৬টি থানা কমিটির ১৯২ জন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কেন্দ্রীয় ২৬ জন সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক, সিটি করপোরেশনের ৫ জন মেয়র, ৪৮ জন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ৩৩৬ জন উপজেলা চেয়ারম্যান, ৩৩০ জন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ), ৩২৬ জন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা), ২১৬ জন পৌর মেয়র, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ওয়ার্ডের ২৫৮ জন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ওয়ার্ডের ১২৪ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর উপস্থিত থাকবেন।