তথ্য অধিকার ও গোপনীয়তার দ্বন্দ্ব
তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এবং অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩ এর তুলনামূলক বিশ্লেষণ
১৯২৩
অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট
রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা রক্ষায় প্রণীত একটি ঔপনিবেশিক আইন।
২০০৯
তথ্য অধিকার আইন
জনগণের তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার আইন।
বাংলাদেশে তথ্য অধিকার আইন প্রণয়নের পরও অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট বলবৎ রয়েছে। একটি আইন স্বচ্ছতার কথা বলে, অন্যটি গোপনীয়তার। এই দুই আইনের сосуবস্থান আইনি পরিসরে এক জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
আইনের উদ্দেশ্য: এক ঝলকে
তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯
এই আইনের মূল উদ্দেশ্য হলো সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং সরকারি ও বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত বেসরকারি সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি, দুর্নীতি হ্রাস ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। এটি নাগরিকদের তথ্য জানার অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়।
অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩
এই আইনের প্রধান উদ্দেশ্য হলো রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করতে পারে এমন স্পর্শকাতর তথ্য, বিশেষ করে গুপ্তচরবৃত্তি এবং গোপনীয় দাপ্তরিক নথি ফাঁস হওয়া থেকে রক্ষা করা। এর মূল ভিত্তি হলো রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা।
সাংঘর্ষিক ধারাসমূহ: মুখোমুখি তুলনা
তথ্য অধিকার আইনের কিছু ধারা অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের বিধানের উপর প্রাধান্য বিস্তার করে, যা এই দুই আইনের মধ্যেকার মূল দ্বন্দ্বটি তুলে ধরে।
| বিষয় | তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ | অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩ |
|---|---|---|
| তথ্যের প্রাপ্যতা | ধারা ৩: প্রত্যেক নাগরিকের কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে তথ্য লাভের অধিকার থাকিবে এবং কর্তৃপক্ষ তথ্য প্রদান করিতে বাধ্য থাকিবে। | ধারা ৫: দাপ্তরিক গোপন তথ্য কোনো অননুমোদিত ব্যক্তিকে প্রদান করা দণ্ডনীয় অপরাধ। |
| আইনের প্রাধান্য | ধারা ৩০: এই আইনের বিধানাবলী, আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনের বিধানাবলীর সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও, প্রাধান্য পাইবে। | এই আইন একটি বিশেষ আইন হিসেবে এর আওতাভুক্ত বিষয়ে প্রাধান্য দাবি করে, যদিও নতুন আইনের কাছে এর কার্যকারিতা সীমিত হয়েছে। |
| ব্যতিক্রম | ধারা ৭: ২০টি বিষয়ে তথ্য প্রকাশ বাধ্যতামূলক নয়, যার মধ্যে দেশের নিরাপত্তা, অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি সৃষ্টিকারী তথ্য অন্তর্ভুক্ত। | ধারা ৩ ও ৫: রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রায় সকল গোপনীয় তথ্য প্রকাশে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। |
আইনি প্রাধান্য কীভাবে কাজ করে?
নাগরিক তথ্যের জন্য আবেদন করে
কর্তৃপক্ষ আবেদন পর্যালোচনা করে
প্রশ্ন: তথ্যটি কি ধারা ৭ অনুযায়ী সীমাবদ্ধ?
না
তথ্য অধিকার আইন প্রাধান্য পাবে। তথ্য প্রদান বাধ্যতামূলক।
হ্যাঁ
তথ্য প্রদানে বাধ্য নয়। অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট প্রযোজ্য হতে পারে।
এই প্রবাহচিত্র থেকে স্পষ্ট যে, তথ্য অধিকার আইনের প্রাধান্য শর্তহীন নয়। আইনের ৭ নং ধারায় উল্লেখিত ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রগুলোতে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের বিধানগুলো এখনো প্রাসঙ্গিক।
তথ্য অধিকার আইনের সীমাবদ্ধতা (ধারা ৭)
তথ্য অধিকার আইনের ৭ নং ধারায় ২০টি ক্ষেত্রকে তথ্য প্রদানের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এই ক্ষেত্রগুলো মূলত অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের মূল উদ্দেশ্যগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই অব্যাহতিপ্রাপ্ত ক্ষেত্রগুলোকে কয়েকটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়, যা পাশের চার্টে দেখানো হলো।
- জাতীয় নিরাপত্তা ও অখণ্ডতা: দেশের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা এবং বিদেশি রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক বিষয়ক তথ্য।
- অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থ: বাজেট, কর নীতি, এবং বাণিজ্যিক গোপনীয়তা সংক্রান্ত আগাম তথ্য।
- তদন্তাধীন বিষয়: কোনো মামলার তদন্ত প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে এমন তথ্য।
- ব্যক্তিগত গোপনীয়তা: ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা লঙ্ঘনকারী তথ্য।
✨ জেমিনি এআই আইনি ব্যাখ্যা ✨
নির্দিষ্ট কোনো আইনি পরিস্থিতিতে তথ্য অধিকার আইন এবং অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট কীভাবে কাজ করে, তা জেমিনি এআই-এর মাধ্যমে যাচাই করুন। আপনার প্রশ্নটি স্পষ্টভাবে লিখুন।
আইনি ব্যাখ্যা ও উপসংহার
“তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী আইন যা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে। তবে এর ৩০ নং ধারার প্রাধান্য সত্ত্বেও, ৭ নং ধারার ব্যতিক্রমী বিধানগুলো অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩-কে পুরোপুরি বাতিল করে না। বরং, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার মতো সংবেদনশীল বিষয়ে পুরোনো আইনের প্রাসঙ্গিকতা এখনো রয়ে গেছে। আইন দুটির মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য বিদ্যমান।”
সুতরাং, বাংলাদেশে তথ্য অধিকার আইন বলবৎ হওয়ার পরেও অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট বিলুপ্ত হয়নি। সাধারণ প্রশাসনিক কাজে স্বচ্ছতা আনার ক্ষেত্রে তথ্য অধিকার আইনই সর্বোচ্চ, কিন্তু যখনই জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন আসে, তখন অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের বিধান প্রয়োগের সুযোগ থেকে যায়। এই দ্বৈত অবস্থান নাগরিকের তথ্য অধিকার এবং রাষ্ট্রের গোপনীয়তার মধ্যে এক চলমান বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।





