জেলা প্রশাসকদের প্রধানমন্ত্রীর ২৩ নির্দেশনা

জনগণের জন্য সরকারি সেবা সুষ্ঠুভাবে নিশ্চিত করা, বাল্যবিয়ে রোধ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সামাজিক বৈষম্য হ্রাস, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, তথ্য প্রযুক্তির প্রসার মাদক, সন্ত্রাস, খাদ্যে ভেজাল, অনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধসহ ২৩টি বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০১৮ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

জেলা প্রশাসকদের দেওয়া ২৩টি নির্দেশনা:

১. জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করে সর্বক্ষেত্রে শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আপনাদের আরও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

২. সরকারি সেবা পেতে সাধারণ মানুষ যাতে কোনোভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হন, সেদিকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে।

৩. যুব সমাজকে মাদকের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। মাদকবিরোধী অভিযান চলবে।

৪. গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্ভাবনাময় স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে উদ্যোগী হতে হবে।

৫. তৃণমূল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করতে হবে।

৬. তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিকাশে নেতৃত্ব দিতে হবে।

৭. শিক্ষার সবস্তরে নারীশিক্ষার হার বৃদ্ধি, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে।

৮. ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সরকারি ভূমি রক্ষায় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

৯. কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সার, বীজ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ইত্যাদির সরবরাহ নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে।

১০. ভেজাল খাদ্যদ্রব্য বাজারজাত প্রতিরোধে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে এবং এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড কঠোর হাতে দমন করতে হবে।

১১. দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে।

১২. পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং এই সংক্রান্ত আইন ও বিধি-বিধানের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

১৩. প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয় প্রশমনে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২’ এবং এ সংক্রান্ত স্থায়ী নির্দেশনাবলি অনুসারে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

১৪. সাধারণ মানুষকে সহজে সুবিচার প্রদান ও আদালতে মামলার জট কমাতে গ্রাম আদালতগুলোকে কার্যকর করতে হবে।

১৫. জেলা প্রশাসকরা জেলাপর্যায়ে বিভিন্ন কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এসব কমিটিকে সক্রিয়, গতিশীল ও ফলপ্রসূ করতে হবে।

১৬. দপ্তরসমূহের বিদ্যমান সেবাসমূহ তৃণমূলে পৌঁছানোর লক্ষ্যে তথ্য মেলা, সেবা সপ্তাহ পালনসহ ইত্যাদি কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।

১৭. শিল্পাঞ্চলে শান্তি রক্ষা, পণ্য পরিবহন ও আমদানি-রফতানি নির্বিঘ্ন করা এবং চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, পেশিশক্তি ও সন্ত্রাস নির্মূল করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১৮. বাজার ব্যবস্থার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির যেকোনো অপচেষ্টা কঠোর হাতে দমন করতে হবে।

১৯. নারী ও শিশু নির্যাতন এবং পাচার, যৌতুক, ইভটিজিং এবং বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে নজরদারি বাড়াতে হবে।

২০. নারীর প্রতি সহিংসতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

২১. নিজ নিজ জেলায় ক্রীড়া, বিনোদন ও সৃজনশীল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ বাড়াতে হবে। শিশু-কিশোরদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সংস্কৃতিবোধ ও বিজ্ঞানমনস্কতা জাগিয়ে তুলতে হবে।

২২. প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

২৩. পার্বত্য জেলাসমূহের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, বনাঞ্চল, নদী-জলাশয়, প্রাণিসম্পদ এবং গিরিশৃঙ্গগুলোর সৌন্দর্য সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়া পর্যটনশিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কুটিরশিল্পের বিকাশে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে হবে।

এর আগে, অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। দেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যেতে জেলা প্রশাসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনে ১৮টি অধিবেশনের মাধ্যমে আপনারা মাঠ পর্যায়ের সমস্যা এবং সম্ভাবনার কথা নীতি-নির্ধারণীর পর্যায়ে সরাসরি তুলে ধরার সুযোগ পাবেন।

ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ৬৪ জেলায় কর্মরত জেলা প্রশাসক এবং আট বিভাগীয় কমিশনার উপস্থিত ছিলেন। তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলন চলবে ২৬ জুলাই পর্যন্ত।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল হান্নান ও প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব নজিবুর রহমান।

শেয়ার করুন