আগামীকাল রবিবার জনসভার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন ও আন্দোলনের মাঠে নামবে বিএনপি। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিকাল ২টায় এ জনসভায় ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। তফসিলের আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও সংসদ ভেঙে দেওয়ার আলটিমেটামও দেবে দলটি। এককভাবে এ জনসভায় দলটি খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুষ্ঠু নির্বাচনসহ সাত দফা দাবি তুলে ধরা ছাড়াও ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে কী করা হবে তা নিয়েও ১২ লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তুলে ধরবে। ব্যাপক লোক সমাগমের মাধ্যমে দেশ-বিদেশ সর্ব মহলে বার্তাও দিতে চায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা দল বিএনপি। কার্যত, এই জনসভার মাধ্যমে পুরো অক্টোবরজুড়েই রাজপথে সরব থাকবে দলটি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রবিবার রাজধানীতে বিএনপি এককভাবেই এই জনসভা করছে। আমরা শান্তিপূর্ণ জনসভা করতে চাই। জনসভায় ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা কী হবে তা নিয়ে নেতারা দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন। আমরা আমাদের দাবিগুলো তুলে ধরতে চাই। শিগগিরই আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিও চাই। তাকে সঙ্গে নিয়েই একাদশ নির্বাচনে যাব।’ জানা যায়, রবিবার জনসভার জন্য পুলিশের মৌখিক অনুমতি মিলেছে। আজ সকাল ১০টায় বেশ কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে লিখিত অনুমতি দেওয়া হবে। বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ডিএমপিতে যাবে। এর আগেও দুই দফা অনুমতি না পেয়ে জনসভার সময়সীমা পেছানো হয়।
নির্বাচনের জন্য বিএনপি ৭ দফা : ১. (ক) বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার। (খ) সব বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার। (গ) নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন মামলা না দেওয়ার নিশ্চয়তা আদায়। (ঘ) পুরনো মামলায় কাউকে গ্রেফতার না করা। (ঙ) কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের ন্যায্য আন্দোলন এবং সামাজিক ও গণমাধ্যমে মতপ্রকাশের অভিযোগে গ্রেফতার ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির নিশ্চয়তা আদায়। ২. ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া। ৩. আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করা। ৪. আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা। ৫. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে তাদের ওপর কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ না করা। ৬. সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগ নিশ্চিত করা। ৭. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার বিধান নিশ্চিত করা। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে যা করবে বিএনপি : ১. রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা। ২. সব প্রতিহিংসার রাজনীতির অবসানে জাতীয় ঐকমত্য গঠন। ৩. রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দলীয়করণের ধারার বদলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। ৪. রাষ্ট্রক্ষমতায় গ্রহণযোগ্য ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা। ৫. স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারক নিয়োগ এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা। ৬. স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবচ দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীকে আরও আধুনিক, শক্তিশালী ও কার্যকর করা। ৭. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। ৮. দুর্নীতি প্রতিরোধে দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথভাবে সংস্কার ও কার্যকর করা। ৯. সব নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা। ১০. সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়—মূলনীতিকে অনুসরণ করে জাতীয় মর্যাদা এবং স্বার্থ সংরক্ষণ করে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সৎ প্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্ব ও সমতার ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, বিনিয়োগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ১১. কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদকে মদদ না দেওয়া এবং কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেওয়া। ১২. সর্বনিম্ন আয়ের নাগরিকদের মানবিক জীবন নিশ্চিত করে, আয়ের বৈষম্যের অবসানকল্পে অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ এবং শ্রমজীবী জনগণের জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা।