সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবি পূরণে সরকারকে আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। কালকের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ৩৫-প্রত্যাশীদের অন্যতম সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র কল্যাণ পরিষদ এই হুঁশিয়ারি দেয়। চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবির বিষয়ে গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সাধারণ ছাত্র কল্যাণ পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক মুজাম্মেল মিয়াজী।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিসিএস পরীক্ষায় ২৯-এর বেশি বয়সী পরীক্ষার্থীদের ফল খারাপ হচ্ছে। কিন্তু কিছুদিন আগে সংসদে তিনি বলেছিলেন যে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বাড়ালে নতুনরা বঞ্চিত হবেন। ফলে প্রধানমন্ত্রী স্ববিরোধী কথা বলছেন এবং অযৌক্তিক মন্তব্য দাঁড় করিয়েছেন। বয়সসীমা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ফলাফল বড় বিষয় নয়, আমরা কেবল আবেদনের সুযোগ চেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ৩০-এর পর নিয়োগ হলে সংসার সন্তান সামলাতে কষ্ট হবে। কিন্তু আমরা মনে করি, বয়সসীমা বাড়ানো হলে মেয়েরা আরও আবেদন করার সুযোগ পেয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারবেন। আর পেনশনের সঙ্গে চাকুরির আবেদনের বয়সসীমা বাড়ানোর কোনো সম্পর্ক নেই।’
পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, যেসব দেশ চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা একবার বাড়িয়েছে, তারা ধীরে ধীরে তা বাড়িয়েই চলেছে। এর মাধ্যমে দেশগুলোর জিডিপি বেড়েছে, বেকারত্ব কমেছে। উন্নত, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত বিভিন্ন দেশই এমনটা করেছে। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে অবস্থান করে বাংলাদেশে চাকরির বয়সসীমা ৩৫ না করার যৌক্তিকতা কী?
পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক মুজাম্মেল মিয়াজী বলেন, কাল বুধবার পর্যন্ত তাঁরা অপেক্ষা করবেন। এর মধ্যে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের পদক্ষেপ দৃশ্যমান না হলে তাঁরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। ঢাকায় মহাসমাবেশের মতো কর্মসূচি দিতে পারেন তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সংগঠনের সমন্বয়ক সুরাইয়া ইয়াসমিন, এস এ চৌধুরী সজীব, ইউসুফ আলী সাকিল ও জালাল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল সোমবার গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখন নিয়মিত পড়াশোনা করলে ২৩-২৫ বছরের মধ্যেই সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিতে পারে। এ ছাড়া তিনটি বিসিএসে দেখা গেছে, যারা বেশি বয়সী, তাদের পাসের হার খুবই কম। তিনটি বিসিএসের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন, ‘এখন আপনারাই বলেন, চাকরির বয়স বাড়ালে কী হবে?’
চাকরিতে প্রবেশের বয়স না বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চাকরিপ্রার্থীদের যদি ৩৫ বছর বয়সে চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়, তত দিনে তাদের ঘর-সংসার, বউ-বাচ্চা হবে। এই বয়সে এসব সামলে চাকরি পাওয়া কঠিন। এ ছাড়া যদি কোনো প্রার্থী ৩৫ বছরে চাকরিতে প্রবেশ করে তাহলে প্রশিক্ষণের পর চাকরি শুরু করতে করতে তাঁর বয়স হবে ৩৭। এই বয়সে চাকরিতে প্রবেশ করলে তাঁর চাকরির বয়স ২৫ বছর হবে না। এটি না হলে তিনি চাকরিতে পূর্ণ পেনশনও পাবেন না।