বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা পাসের পর প্রাপ্ত সনদপত্রে অনেকেরই নাম এবং অন্যান্য তথ্য ভুল থাকে। সেগুলো সংশোধন করতে বারবার শিক্ষাবোর্ডে যাতায়াতসহ নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়। এখন নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অনলাইনে আবেদন করেই সার্টিফিকেটের নাম সংশোধন করা যাবে। শুধু সংশোধিত সার্টিফিকেট আনতে একবারই শিক্ষাবোর্ডে যেতে হবে আবেদনকারীকে।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এই নিবন্ধটি লিখেছেন তৌকির ইসলাম।
সংশোধন অনলাইন/অফলাইন দু’ভাবেই করা যায়। তবে দালাল বা কোন প্রকার থার্ড পার্টি ছাড়া ঝামেলামুক্ত ভাবে কাজ করার জন্য অনলাইন আমার সাজেশনে থাকবে। কারণ এখানে হাতে ফরম ফিলাপ করার কিছু নাই। হাতে লিখলে আপনার ভুল ওরা ধরবেই। এই জন্য অনলাইন করা সুবিধাজনক। আপনাকে দৌড়াদৌড়ি/পরিশ্রম কিছুটা কম করতে হবে। তাই আমি আজকে শুধু অনলাইন প্রসেস নিয়ে লিখবো।
আমি গতকালকে (০৯/১০/১৯ ইং) আমার সংশোধিত সার্টিফিকেট হাতে পেয়েছি। তাই প্রথমেই আমার খরচের হিসাব দেই তাহলে পরবর্তী কাজ সহজে বুঝতে পারবেন।
- পত্রিকায় বিজ্ঞাপন- ৩০০ টাকা
- নোটারি পাবলিক -৫০০ টাকা (কম বেশি লাগতে পারে)
- আবেদেন ফি ৫৫৮×২= ১১১৬ টাকা (এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি)
- সার্টিফিকেট উত্তোলন ফি ৫৫৮×২= ১১১৬ টাকা (২টি)
আমার মোট খরচঃ ৩,০৩২ টাকা
ট্রান্সপোর্ট বাবদ আরো কিছুটা খরচ হবে। তবে ২ টি সার্টিফিকেটের জন্য মোটামুটি ৩০০০-৩৫০০ টাকা খরচ হবে।
১. নোটারি_পাবলিক
নাম বা জন্মতারিখের ভুল সংশোধনের জন্য প্রথমে আইনজীবীর মাধ্যমে নোটারি বা এফিডেভিট করাতে হবে। প্রার্থীর নিজের নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে তার বয়স যদি ১৮ বছরের বেশি হয়, তাহলে তিনি নিজেই এফিডেভিট করতে পারবেন। প্রার্থীর বয়স যদি ১৮ বছর পূর্ণ না হয় বা প্রার্থী যদি তার মা-বাবার নাম সংশোধন করতে চান, তাহলে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে প্রার্থীর বাবা কর্তৃক প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারি পাবলিকের কাছ থেকে এফিডেভিট করতে হবে।
২. পত্রিকায়_বিজ্ঞাপন
হলফনামা সম্পাদনের পর একটি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীর সার্টিফিকেট নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, শাখা, পরীক্ষার সাল, পরীক্ষাকেন্দ্রের নাম, রোল নম্বর, বোর্ডের নাম এবং জন্মতারিখ উল্লেখ করে যা সংশোধন করতে চান (প্রার্থীর নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম বা জন্মতারিখ) তা সংক্ষেপে উল্লেখ করতে হবে।
এই ২ টি কাজ সম্পাদন করার পর আপনি যেই স্কুল বা কলেজে লেখাপড়া করেছেন সেটির সাহায্য লাগবে। (অনলাইন আবেদনের ক্ষেত্রে এর কোন বিকল্প নেই)
এবার আপনি উপরে উল্লেখিত ২ টি কাগজ এবং আপনার বাবা-মায়ের নাম সংশোধন করতে হলে উনাদের সার্টিফিকেট বা ন্যাশনাল আইডি কার্ড / আপনার নিজের হলে জন্ম নিবন্ধন সনদ নিয়ে সরাসরি আপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলে যান। এই কাজটি আপনি বাসায় বসে করতে পারবেন না, কারণ এটি কলেজের EIIN ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে করা হয়। এর একটিই সুবিধা আপনাকে শিক্ষা বোর্ডে যেতে হচ্ছে না, নিজের স্কুল থেকেই কাজ হয়ে যাবে। টপিকে ফিরে আসি…
এই কাগজগুলো রেডি করে আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে জানান। উনি আপনার প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কম্পিউটার অপারেটরকে অনলাইন আবেদন করার জন্য নির্দেশনা দিবেন৷ তখন সে আপনার ডকুমেন্ট স্ক্যান করে আবেদন করে দিবে এবং আপনার ফোনে ম্যাসেজ চলে আসবে সাথে সাথে। তারপর উনি আপনাকে সোনালি ব্যংকে আবেদন ফি জমা দেওয়ার জন্য একটা রশিদ দিবেন। ৫৫৮ টাকা জমা দিতে হবে (প্রতিটির জন্য)। টাকা জমা দেওয়ার পর রশিদ অবশ্যই যত্ন করে রাখবেন। আবেদন ফি জমা না দিলে আপনার আবেদন গৃহীত হবে না। আবেদন ফি জমা করার পর আপনার জন্য এডুকেশন বোর্ডের ওয়েবসাইটে আলাদা একটা প্রোফাইল ক্রিয়েট হবে।
(লগ ইন লিংক: https://efile.dhakaeducationboard.gov.bd/index…/…/lastupdate )
সেখানে লগইন করে আপনি আপনার মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই সর্বশেষ অবস্থা ট্র্যাক করতে পারবেন। টাকা জমা দেওয়ার পর ঝিম ধরে ৩ মাস বসে থাকুন। আপনার আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ৩ মাস বা এর বেশি সময় লাগবে। যখন কাজ শেষ হবে তখন আপনার ফোনে ম্যাসেজ চলে আসবে এবং আপনি আপনার প্রোফাইলে লগ ইন করবেন।
সেখানে আপনার জন্য নতুন একটা অপশন আসবে “ডকুমেন্ট উত্তোলন”। সেই অপশনে গিয়ে আপনি ডকুমেন্টস উত্তোলনের আবেদন করবেন। এবার আর কলেজে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, কারণ এখন আপনার কাছে সেই সাইটে লগইনের জন্য পাসওয়ার্ড আছে। সেখানে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে যেই ডকুমেন্ট উত্তোলন করতে চান সেটার জন্য ঘরে বসে আবেদন করুন৷ (যদি বাসায় কম্পিউটার না থাকে তবে যে কোন কম্পিউটারে দোকানে এই কাজ করতে পারবেন)। আবেদন করার পর উত্তোলন ফি বাবদ ৫৫৮ টাকা সোনালি ব্যংকে পে করার জন্য একটা ডকুমেন্টস পেয়ে যাবেন। সেটা নিয়ে ব্যাংকে যান। আগের মতোই ফি জমা দিন। কাজ শেষ, এবার ১ সপ্তাহ অপেক্ষা করুন।
তারপর আপনার ফোনে ম্যাসেজ আসবে আপনার ডকুমেন্টস রেডি। তখন আপনি আবার আপনার প্রোফাইলে লগইন করে উত্তোলন করার চূড়ান্ত ডকুমেন্টস আছে সেটা ডাউনলোড করে প্রিন্ট করুন। এবার আপনাকে প্রথমবারের মতো শিক্ষা বোর্ডে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে ৪ নম্বার ভবনের ৫ তালায় আপনার অরিজিনাল সার্টিফিকেট জমা দিন। এর পরদিন বিকালে আবার সেই অফিসে যান। চুড়ান্ত ডুকুমেন্টস এবং ব্যাংকে যে ফি জমা দিয়েছিলেন সেটার মূল কপি জমা দিয়ে বুঝে নিন আপনার নতুন সংশোধিত সার্টিফিকেট।
আমার সম্পূর্ণ প্রসেসটা শেষ হতে ১৪৩ দিন সময় লেগেছে। তাই অনলাইনে কোন প্রকার তদবির ছাড়া এবং অতিরিক্ত কোন টাকা প্রদান ছাড়া কাজটা করতে হলে আপনাকে একটু ধৈর্য্য ধরতেই হবে। আর মনে রাখবেন, আপনি বৈধ উপায়ে কাজ করলে যে তৃপ্তিটা পাবেন সেটা আর কিছুতে পাবেন না। আর এখন এটা আরো সহজ, কারো টেবিলে ফাইল নিয়ে দৌড়ানোর প্রয়োজন নেই। সবাই সচেতন হলেই প্রতিটা দপ্তর হবে দুর্নীতিমুক্ত।
লেখক: তৌকির ইসলাম