বান্দরবানে খুমী জনগোষ্ঠীর প্রথম স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন লেলুং খুমী। যিনি এর আগেও খুমী জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রথম ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জনকারী ছিলেন। সম্প্রতি চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্স্টাস ডিগ্রি অর্জন করেন লেুলং।
লেলুং খুমী জানান, ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবলিক পলিসি এন্ড লিডারশীপ বিভাগে ভর্তি হন তিনি। এ বছর সেপ্টেম্বরে এই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এটি খুমী জনগোষ্ঠীর কারো প্রথম স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন।
এর আগে ২০০৬ সালে অসএইড (AusAid)র স্কলারশিপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে যান। পরে সেখানকার সাউদার্ন ক্রস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে সমাজবিজ্ঞানে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর বাংলাদেশে ফিরে এসে কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ শুরু করেন।
লেলুং বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আমি এমন একটি জনগোষ্ঠীর সদস্য; যেখানে এখনও আমিই প্রথম ব্যাচেলর ডিগ্রি এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারী। এটি একদিকে গর্বের ব্যাপার, অন্যদিকে দুঃখজনকও বটে।
বাংলাদেশের অধিকারবঞ্চিত, অধিকতর অবহেলিত জনগোষ্ঠীর শিক্ষা এবং আর্থ-সমাজিক উন্নয়নে সম্পৃক্ত থেকে একটি বৈষ্যম্যহীন, ন্যায্যতাভিত্তিক সমাজ গঠনের স্বপ্ন দেখেন বলে জানান তিনি।
লেলুং খুমীর জন্ম বান্দরবানে রুমা উপজেলার সদর ইউনিয়নে খোলাইন পাড়ায়। এক সময় দুর্গম এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড পরিচালিত রুমা উপজাতীয় আবাসিক বিদ্যালয়ের হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেছিলেন তিনি। পরে সেখান থেকে ১৯৯৮ সালে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাশ করেন।
২০০১ সালে চট্টগ্রামে লোহাগাড়া বারআউলিয়া ডিগ্রী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর ঢাকার শেখ বোরহান উদ্দিন কলেজে নৃবিজ্ঞান বিভাগে অনার্সে ভর্তি হয়েছিলেন। ২০০৫ সালে খুমী ভাষার অভিধান প্রণয়নে খুমী ভাষার অনুবাদক হিসেবে আমেরিকার ডার্টমাউথ কলেজে চলে যান।
এর পরের বছর অসএইড (AusAid)র স্কলারশীপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে যান তিনি। তাঁর বাবা-মা দুজনই ছিলেন জুমচাষী।
খুমী জনগোষ্ঠীর ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ খুমী স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং তেজগাঁও কলেজের অর্থনীতি বিভাগের মার্স্টাস শিক্ষার্থী নাংফ্রা খুমী বলেন, দেশের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে খুমী জনগোষ্ঠীর এখনও মাত্র ৪০ জনের মত শিক্ষার্থী রয়েছে।
প্রথম ব্যাচেলর ডিগ্রি এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারী হিসেবে লেলুং খুমীকে নিয়ে সমাজে গর্ব রয়েছে। একটি জুমচাষী পরিবার থেকে উনি যেভাবে উঠে এসেছেন তাঁকে আমরা গর্বের সাথে অনুসরণ করি।
সামাজিক সংগঠন খুমী সোস্যাল কাউন্সিলের সহ-সভাপতি সিংঅং খুমী জানান, জনসংখ্যায় কম হওয়ার পাশাপাশি একটি জনগোষ্ঠী হিসেবে খুমীরা আর্থ-সামাজিক এবং উচ্চশিক্ষায় পিছিয়ে রয়েছে। এর মধ্যে লেলুং খুমী দেশ এবং বিদেশ থেকে প্রথম ডিগ্রি অর্জনকারী হিসেবে সমাজে ভালো কিছু অবদান রাখবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সবচেয়ে কম ভাষিক ও বিপন্ন জনগোষ্ঠী হলো খুমী। বান্দরবানের কয়েকটি উপজেলায় তাদের বসবাস। ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী খুমী জনসংখ্যা ১ হাজার ৭২৯ জন। তবে খুমীদের সামাজিক সংগঠন খুমী সোস্যাল কাউন্সিলের হিসাবে বর্তমানে সাড়ে তিন হাজারের মত জনসংখ্যা রয়েছে তাদের।