জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তার আত্মপক্ষ সমর্থনের জবানবন্দি শেষ করেছেন। এখন চলতি মাসের শেষের দিকে তার প্রদত্ত বক্তব্য ৩৪২ ধারায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যুক্তিতর্ক সম্পন্ন করার দিনক্ষণ চূড়ান্ত করেছেন আদালত। আগামী মাসের জানুয়ারিতে এই মামলার রায় ঘোষণা হবে বলে আশঙ্কা করছেন বেগম জিয়ার আইনজীবীরা। তারা মামলার গতি ‘অস্বাভাবিক’ বলে অভিযোগ করছেন।
খালেদা জিয়া নিজেও বলেছেন, ‘আমার মামলাগুলোয় যেন রকেটের গতি; পেছন থেকে কেউ যেন তাড়া করছে।’খুব দ্রুত রায় দেওয়ার জন্য ‘অদৃশ্য ইশারা’ কাজ করছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ের পরে কাছাকাছি সময়ে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার রায় হবে। দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা বলছেন, ‘সাজা’ দিয়ে খালেদা জিয়াকে আগামী নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই রায়ে বেগম জিয়ার সাজা দেওয়া হলে আগামী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ প্রশ্নে নতুন করে ভাববে বিএনপি। সরকার চাচ্ছে বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে একটা সাজার রায়, যাতে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন।
তবে বেগম জিয়াকে ছাড়া আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বিএনপি। খালেদা জিয়া নিজেও আশঙ্কা ব্যক্ত করে আদালতে দেওয়া বক্তব্যে বলেছেন,’ অসত্ উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সরিয়ে দেওয়া এবং নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে ক্ষমতাসীনরা একটি নীলনকশা প্রণয়ন করছে। আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি এও বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোতে ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে না।
দলের নেতারা বলেছেন,নির্বাচনে বিএনপি যাবে কি যাবে না তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দলের কোনো ফোরামে হয়নি। এই সিদ্ধান্ত নিবেন বেগম খালেদা জিয়া। তার মামলার রায় দেখে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নেতারা মনে করছেন, খালেদা জিয়াকে আইনের মাধ্যমে সাজা দিয়ে ক্ষমতা দখলে রাখতে চায় সরকার। কিন্তু খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে তাকে নির্বাচনে অযোগ্য করলে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, মামলায় ম্যাডামের সাজা হলে আইনগতভাবে মোকাবিলা করা এবং রাজপথের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এর সমাধান খোঁজা হবে। তবে তাড়াহুড়া করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নির্বাচনে যাওয়ারই চেষ্টা করা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, সরকার সম্পূর্ণভাবে নিম্ন আদালতকে নিয়ন্ত্রণ করছে এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণে এই বিচারকরা কাজ করে বলেই তাদের কোনো স্বাধীনতা নেই। মুক্ত মনে বিচার করার কোনো পরিবেশ নেই। এ জন্য রায় নিয়ে একটা ধারণা জনগণের মধ্যে তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, তিনি বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। প্রতি সপ্তাহে তাকে আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। প্রায় ৫০ বছর ধরে সুপ্রিম কোর্টে কাজ করছি। আমি কোনো দিন শুনিনি যে, সাপ্তাহিক জামিন হয়। এর থেকে অপমানজনক আর কী হতে পারে! এ থেকে তাদের উদ্দেশ্য অনুমিত হয়।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বেগম জিয়ার অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, আমি নিশ্চিত -যে পরিমাণ সাক্ষ্য-প্রমাণ হয়েছে, তাতে খালেদা জিয়া খালাস পাবেন। ন্যায় বিচার পাবেন। তবে মামলা নিয়ে সরকারের তাড়াহুড়া এবং সরকারের মন্ত্রী-নেতাদের বক্তব্যে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে সন্দেহ-শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকারের ভাবনা-চিন্তায় একটি পথই উন্মুক্ত রয়েছে। সেটি হলো-খালেদা জিয়াকে আইনের মাধ্যমে সাজা দিয়ে ক্ষমতা দখলে রাখা।
এদিকে আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমদ তালুকদার জানান, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে ছয়টি এবং হত্যা, বিস্ফোরক ও নাশকতার অভিযোগে চারটি এবং মানহানি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ মিলিয়ে মোট ৩৬ টি মামলা রয়েছে।
এদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গতকাল বেগম জিয়ার জবানবন্দি শেষ হওয়ার পর আগামী ১৯, ২০ ও ২১ ডিসেম্বর যুক্তিতর্কের দিন ধার্য করেছেন আদালত। এ সময় পর্যন্ত তিনি জামিনে থাকবেন। আগামী ৬ ও ৭ ডিসেম্বরের পরিবর্তে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য নতুন এ দিন ধার্য করা হয়।