বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত দুর্নীতির মামলার বিচার চলবে কারাগারে। নাজিমুদ্দিন রোডে অবিস্থিত পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের একটি কক্ষকে বুধবার আদালত হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই ওই ভবনের ৭ নম্বর কক্ষটিকে অস্থায়ী আদালত হিসেবে ঘোষণা করে মঙ্গলবার আইন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এ বিচারাধীন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচার কার্যক্রম এখন থেকে এই অস্থায়ী আদালতে অনুষ্ঠিত হবে। প্রসঙ্গত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে খালেদা জিয়া পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডে কেয়ার সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় করাবন্দি রয়েছেন। সেখান থেকে এই অস্থায়ী আদালতে যাতে সহজেই তাকে হাজির করা যায় সেজন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচার কাজ এখানে অনুষ্ঠিত হবে। ইতোপূর্বে বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচার কার্যক্রম বকশিবাজারের কারা অধিদফতরের মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল।
এদিকে আজ বুধবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। একইসঙ্গে খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করার জন্য হাজিরা পরোয়ানাও জারি করা রয়েছে। সেই হিসাবে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের এই অস্থায়ী আদালতে আজ খালেদা জিয়াকে হাজির করা হবে বলে ইত্তেফাককে জানিয়েছেন দুদক কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল।
তবে আদালত স্থানান্তরের বিষয়টিকে সংবিধান পরিপন্থী হিসেবে দাবি করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। তিনি বলেন, যে কোন নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার হচ্ছে তার মামলার বিচার কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে প্রকাশ্য আদালতে। যেখানে আইনজীবী ও সাধারণ জনগণের প্রবেশাধিকার রয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে এটা না করে ‘ক্যামেরা ট্রায়াল’ করা হচ্ছে। যা বিচারের নামে প্রহসন হতে চলেছে। ব্যারিস্টার কায়সার বলেন, পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি কক্ষকে অস্থায়ী আদালত ঘোষণা করায় এতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে। ইতোপূর্বে আর কোন নাগরিকের বিচারের জন্য কারাগারে আদালত বসানো হয়নি। আমরা মনে করি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে বিচারের নামে প্রহসনের মাধ্যমে নির্বাচন থেকে খালেদা জিয়াকে দূরে রাখতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
দুদক কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী আইন মন্ত্রণালয় ন্যায় বিচারের স্বার্থে যে কোন অবস্থায় যে কোন স্থানে আদালত বসাতে পারে। এ কারণে বকশিবাজারের আদালত বসানো হয়েছিল। আর ওটা কারা অধিদফতরের জায়গা। সেখান থেকে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে যেখানে খালেদা জিয়া অবস্থান করছেন সেখানে আদালত বসানোয় সাংবিধধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয়নি। আর এই আদালতে সকলের প্রবেশাধিকার রয়েছে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে হাজিরার সুবিধার্থে এখানে আদালত স্থানান্তর করা হয়েছে। অতএব খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা না জেনে না শুনে যে মন্তব্য করছেন তা দুঃখজনক।
আদালত স্থানান্তরের প্রজ্ঞাপনে যা বলা হয়েছে
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এ বিচারাধীন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল বকশিবাজারের সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালত ভবনে। এই মামলার বিচার কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে এলাকাটি জনাকীর্ণ থাকে বিধায় নিরাপত্তাজনিত কারণে ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৯ এর উপ-ধারা ২ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার উক্ত মামলার বিচার কাজ পরিচালনার জন্য পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের কক্ষ নং-৭-কে অস্থায়ী আদালত হিসাবে ঘোষণা করা হলো। আর এখন থেকে সেখানেই এই মামলার বিচার কার্যক্রম চলবে।