জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে নিম্ন আদালতের দেওয়া অর্থদণ্ড স্থগিত করেছে হাই কোর্ট।
আপিলের গ্রহণযোগ্যতার শুনানি করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়।
আদালত বলেছে, আপিল শুনানির জন্য ১৫ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালত থেকে মামলা নথি হাই কোর্টে পাঠাতে হবে।
এদিন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হলেও দুদকের সময়ের আবেদনে রোববার বেলা ২টায় শুনানির নতুন সময় ঠিক করে দিয়েছে আদালত।
ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান গত ৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলার রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন।
খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ অপর পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছরের জেল এবং আসামিদের প্রত্যেককে ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার করে জরিমানা করা হয় রায়ে।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, সরকারি এতিম তহবিলের টাকা এতিমদের কল্যাণে ব্যয় না করে পরস্পর যোগসাজশে আত্মসাৎ করে খালেদা জিয়াসহ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামিরা রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অপরাধ করেছেন।
১১৬৮ পৃষ্ঠার ওই রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর গত ২০ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্টে আপিল করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা। হাই কোর্ট ওইদিন আবেদনটির গ্রহণযোগ্যতার শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন রাখে।
আদালত খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের মঙ্গলবারই রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদককে আপিল ও জামিন আবেদনের কপি সরবরাহ করতে বললেও আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল অনুলিপি হস্তান্তর করেন বৃহস্পতিবার সকালে।
মূল রায়সহ ১২২৩ পৃষ্ঠার আপিল আবেদনে ৪৪টি যুক্তি দেখিয়ে খালেদা জিয়ার খালাস চাওয়া হয়। আর ৮৮০ পৃষ্ঠার জামিন আবেদনের মধ্যে ৪৮ পৃষ্ঠাজুড়ে ৩১টি যুক্তিতে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাওয়া হয়।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের মধ্যে জয়নুল আবেদীন, এ জে মোহাম্মদ আলী, কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী ও সগীর হোসেন লিওন সকালে আদালতে উপস্থিতি ছিলেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন বিএনপি নেতাকেও আদালতে দেখা যায়।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহম্মেদ।
সকাল সাড়ে ১০টায় কোর্ট বসলে রাষ্ট্রপক্ষে ফরহাদ আহম্মেদ বলেন, তারা খুব অল্প সময় আগে আসামিপক্ষের কাছ থেকে কপি পেয়েছেন। শুনানির আগে তাদের সময় প্রয়োজন।
রাষ্ট্রপক্ষ বেলা ২টা পর্যন্ত সময় চাইলেও বিচারক শুনানির জন্য বেলা ১২টায় সময় ঠিক করে দেন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দুই পক্ষের আইনজীবীদের আদালতে উপস্থিত দেখে জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, যেহেতু দুই পক্ষই উপস্থিত আছে, সেহেতু আগেই শুনানি শুরু হতে পারে।
কিন্তু আসামিপক্ষ এ সময় একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার কথা বলে।
এই অপেক্ষার মধ্যেই বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের ব্যাপক ভিড়ের কারণে আদালতে হট্টগোল তৈরি হয়। খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদেরও ওই ভিড় পেরিয়ে এজলাসে পৌঁছাতে বেগ পেতে হয়।
এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল দাঁড়িয়ে আদালতকে বলেন, এভাবে শুনানি করা সম্ভব না। তিনি দুই পক্ষেই আইনজীবীর সংখ্যা সীমিত করে দিতে অনুরোধ করেন।
বিচারক এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনিও সহমত প্রকাশ করেন।
আদালত এরপর ১৫ মিনিট সময় দিয়ে এর মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলেন। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে বেলা ১২টায় আপিলের গ্রহণযোগ্যতার শুনানি শুরু হয়।