পঞ্চম মেয়াদেরও আট মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু শেষ হয়নি খাগড়াছড়িবাসীর স্বপ্নের পাওয়ার গ্রিড সাব-স্টেশনের নির্মাণ কাজ। হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের মেয়াদ দফায় দফায় বেড়েছে চার বার। এখন চলছে পঞ্চম মেয়াদকাল।
খাগড়াছড়িতে বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ১১ নভেম্বর গ্রীড সাব স্টেশন স্থাপনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। চলতি বছরের ১৭ আগস্ট এ প্রকল্পের কাজ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু বিগত প্রায় দেড় মাস ধরে কাজ বন্ধ থাকায় এ মেয়াদেও আদৌ শেষ হওয়া নিয়ে শংকা দেখা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে। এই সাব স্টেশন থেকে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির ১২টি উপজেলা বিদ্যুৎ সরবরাহ করার কথা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশির দশকে হাটহাজারী থেকে অস্থায়ী পিলারের মাধ্যমে খাগড়াছড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়। স্থলপথে যেটির দূরত্ব প্রায় সোয়া ১’শ কিলোমিটার। দীর্ঘ সঞ্চালন লাইনের কারণে সৃষ্ট সিস্টেম লসে প্রতি বছর ২’শ কোটি টাকার বিদ্যুৎ অপচয় হয় বলে বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞদের দাবি।
শুরু থেকেই জেলাবাসী লো-ভোল্টেজ, ভোল্টেজ আপ-ডাউন, লাইন ফল্ট, লোডশেডিংসহ নানা ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছেন গ্রাহকরা। তাছাড়া পুরো বর্ষাকাল জুড়েই সঞ্চালন লাইনের ত্রুটির কারণে মাসের পর মাস থাকতে হয় বিদ্যুৎবিহীন। এসব সংকট কাটিয়ে জেলাবাসীকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, নতুন সংযোগ প্রদান, বিদ্যুৎনির্ভর শিল্পায়নের মাধ্যমে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুত এই সাব-স্টেশনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
সূত্র জানায়, রাঙামাটির চন্দ্রঘোনা থেকে ৩০১টি টাওয়ারের মাধ্যমে খাগড়াছড়ি গ্রিড সাব-স্টেশনে বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে। নির্ধারিত চতুর্থ বর্ধিত মেয়াদ অনুযায়ী গত বছরের আগস্ট মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৩০১টি টাওয়ারের মধ্যে ৩১টি টাওয়ারের কাজ এখনো বাকি পড়ে আছে। খাগড়াছড়িস্থ সাব স্টেশনের অধিকাংশ কাজ শেষ হলেও মূল যন্ত্রাংশ স্থাপনের কাজ এখনো শেষ হয়নি।
অভিযোগ উঠেছে, রহস্যজনক কারণে তিন মাসের অধিক সময় গ্রিড সাব-স্টেশনের নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নির্মাণকাজে নিযুক্ত প্রকৌশল কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের ঠিকমতো বেতন প্রদান না করায় এই স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছিল।
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি ১৩২ পাওয়ার গ্রিড সাব-স্টেশনের প্রকল্প পরিচালক মোঃ শফি উল্লাহ জানান, প্রকল্পের কাজ চলছে এবং আগামী মার্চের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
খাগড়াছড়িতে বিদ্যুতের চাহিদা মাত্র ১৭/১৯ মেগাওয়াট। খাগড়াছড়ি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের আওতাধীন ৫৪ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক।
খাগড়াছড়ি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আবু জাফর জানান, হাটহাজারী উপ-কেন্দ্র থেকেই খাগড়াছড়ি জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়ে থাকে। প্রায় সোয়া ১শ’ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রায় সময় লাইন ফল্ট হয়ে থাকে। আর তা খুঁজে বের করতে কয়েক দিন সময় পার হয়ে যায়। তাছাড়া দীর্ঘ লাইনের কারণে প্রতি মাসে প্রায় দুই কোটি টাকার বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। ফলে শেয়ারিং করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হচ্ছে।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, গ্রিড সাব-স্টেশনের কাজ ঠিকমতো এগোলে আগামী এক-দুই মাসেই নতুন নির্মিত সঞ্চালন লাইন থেকে বিদ্যুৎ পাবে খাগড়াছড়ি জেলা এবং রাঙামাটির বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলার মানুষ।