কোমর তাঁতে বস্ত্র উৎপাদনকারী পাহাড়ি তাঁতশিল্পীদের সাথে বিক্রেতা এবং কাঁচামাল সরবরাহকারীদের যোগাযাগ ঘটিয়ে দেবার লক্ষ্যে বান্দরবানে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩০ মার্চ শনিবার সকালে উন্নয়ন সংস্থা হেলেন কেলার-এর স্যাপলিং প্রকল্পের আওতায় এ কর্মশালায় জেলার বিভিন্ন উপজেলার কোমর তাঁতশিল্পী এবং বিক্রেতারা অংশ নেন।
কর্মশালায় অংশ নেয়া পাইকারি তাঁতবস্ত্র বিক্রেতা তৌহিদুল ইসলাম ও মোঃ আক্তার হোসেন জানান, তাঁরা বমদের তৈরি শাল, মাফলার, থামি, ফতুয়া, ওড়না এসব কিনে নিয়ে পাইকারিতে বিক্রি করেন। বাজারে যে ধরনের পণ্যের চাহিদা রয়েছে, সে ব্যাপারে স্থানীয় উৎপাদনকারীদের ধারনা কম। তাছাড়া অনেক পণ্যের ফিনিশিং দুর্বল থাকে। সাইজেও হেরফের হয়। এসব বিষয় ঠিক করা গেলে এখানকার পণ্যগুলো বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই ভালো বাজার পাবে।
রোয়াংছড়ি হস্তশিল্প সমবায় সমিতি লিমিটেডের কর্মকর্তা লিটন পাল জানান, সারা দেশে এখানকার পণ্যের ভালো চাহিদা আছে। তবে কালার ম্যাচিং এবং ফিনিশিংয়ের দিকে আরো মনোযোগ দেয়া গেলে পণ্যগুলো বেশ মানসম্পন্ন হয়ে উঠবে।
আড়ং-এ পাহাড়ি এলাকার পণ্য সরবরাহ করেন রিটন চাকমা। তিনি জানান, গত বছর স্থানীয় উৎপাদনকারীদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সেই প্রশিক্ষণের পর স্থানীয়ভাবে তৈরি ১৪৪টি হস্তশিল্পজাত পণ্যের একটি সংগ্রহ তৈরি করা হয়েছে। এসব পণ্য ঢাকায় বড় আকারে প্রদর্শণীর ব্যবস্থা করা গেলে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষন করা সম্ভব হবে।
বান্দরবানের ফারুক পাড়ার পাইকারি ব্যবসায়ী ফুংখাল বম বলেন, বান্দরবানের বাজারে মানসম্মত সুতা পাওয়া যায়না। ভালো সুতা পাওয়া গেলে ভালো কাপড় বানানো সম্ভব। তাছাড়া পুঁজির সমস্যা রয়েছে। ব্যাংকগুলো কিছু কিছু ঋণ দিলে সেই টাকায় সুতা কিনে স্বচ্ছন্দে কাপড় বানানো যেতো।
হেব্রন পাড়া থেকে আসা তাঁতশিল্পী জিংপারময় বম এবং তোয়ারতিøং বম জানান, তাঁরা কাপড় তৈরি করে আড়ংয়ের জন্যে সরবরাহ করেন। চাদর, মাফলার, কম্বল এসব জিনিস গরমের মৌসুমে চলেনা। তাই শীতের মৌসুমে তিন-চার মাস ছাড়া বাকি সময় তাঁদের হাতে কাজ থাকেনা। ওড়না, থামি, ফতুয়া এসবের বাজার ধরা গেলে পুরো বছরই হাতে কাজ থাকবে।
বান্দরবান ওমেন চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট লালছানি লুসাই বলেন, বাজারে কোন ধরনের পণ্যের চাহিদা রয়েছে সে কথা মাথায় রেখে উৎপাদকদের কাজ করতে হবে। এখানে যে কাপড়গুলো তৈরি হয় সেগুলো এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন একই কাপড় দিয়ে নারী-পুরুষ সবার পোশাক তৈরি করা সম্ভব হয়।
স্যাপলিং প্রকল্পের টেকনিক্যাল অফিসার (মার্কেটিং) রুবিপ্রু জানান, বান্দরবানের তাঁতশিল্পীদের সাথে বাজারের সংযোগ ঘটিয়ে দেয়া, ন্যায্য মূল্য পাবার ব্যবস্থা, বাজার সম্পর্কে উৎপাদনকারীদের ধারনা দেয়া এবং সর্বোপরি পাহাড়ি পণ্যকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করে তুলতে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে।
বান্দরবান প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এ কর্মশালায় বিসিক বান্দরবান এর ডেপুটি ম্যানেজার রবীন্দ্র কুমার নাথ, স্যাপলিং এর হেলথ ও নিউট্রিশন অংশের টিম লিডার ডা. অংসাজাই মারমাসহ বিভিন্ন উপজেলার ৩২ জন বস্ত্র উৎপাদনকারী, বিক্রেতা এবং কাঁচামাল সরবরাহকারী অংশ নেন।