থাইল্যান্ডের থাম লুয়াং গুহায় আটকে থাকা ১২ কিশোর ও তাদের কোচকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে। তিন দিনের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের মধ্য দিয়ে তাদেরকে তিনটি দলে ভাগ করে উদ্ধার করা হয়। এদিকে এখনো গুহার ভেতরে চারজন ডুবুরি অবস্থান করছে বলে সিএনএন এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মত অভিযান শুরু হলে স্থানীয় সময় বিকেল ৪ টা ৫ মিনিটে গুহায় থাকা নবম কিশোরকে উদ্ধার করে আনা হয়। এর ১৫ মিনিট পর ১০ম কিশোর গুহা থেকে বের হন। এরপর ধারাবাহিকভাবেই সবগুলো কিশোরকে বের করে আনা হয়। সবশেষে বের হন কিশোর ফুটবল দলটির সহকারী কোচ এক্কাপল (২৫)।
এর আগে সোম ও মঙ্গলবারের অভিযানে গুহা থেকে ৮ জনকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছিল। তখন গুহায় থাকা বাকী ৪ কিশোর ও কোচকে সঙ্গ দিতে ভেতরে থেকে গিয়েছিলেন এক চিকিৎসক ও থাই নেভি সিলের তিন সদস্য।
অভিযানের প্রধান সমন্বয়ক ও চিয়াং রাই প্রদেশের গভর্নর নারংসাক অসোট্টানাকর্ন জানান, মঙ্গলবার সকাল ১০ টা ৮ মিনিটে তৃতীয় দিনের মত অভিযানে যান উদ্ধারকর্মীরা। ১৯ সদস্যের একটি ডুবুরি দল এই উদ্ধার কার্যক্রমে সরাসরি অংশ নিচ্ছেন।
আগের দুই দিনের মত আজকেও উদ্ধার হওয়াদের গুহার প্রবেশমুখ থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে পাশের ফিল্ড হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন চিকিৎসকরা। তারপর তাকে হেলিকপ্টারে করে চিয়াং রাই শহরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে। আগের দুই দিনে উদ্ধার হওয়া ৮ কিশোরও ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া ৮ কিশোর আপাতদৃষ্টিতে শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ আছেন। তাদেরকে জাউ ভাত খেতে দেওয়া হচ্ছে। উদ্ধার হওয়াদের বেশকিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে যার সবগুলো রিপোর্ট পেলে তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে চূড়ান্ত মূল্যায়ন করা যাবে। উদ্ধার হওয়া শিশুদের সঙ্গে এখনো দেখা করতে পারেনি তাদের স্বজনেরা। তবে জানালা দিয়ে স্বজনরা তাদের দেখতে পেয়েছে। চিঠির মধ্যদিয়ে যোগাযোগ করতে পেরেছে।
এদিকে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্যারয়ুথ চান ওচা গুহায় আটকে থাকা স্বজনদের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর গুহা এলাকা পরিদর্শনের কথা ছিল। কিন্তু এতে করে উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে বলে তিনি চিয়াং রাই শহরে অবস্থান করেন। এখানেই তিনি স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
প্রসঙ্গত, ২৩ জুন বেড়াতে গিয়ে উত্তরাঞ্চলীয় চিয়াং রাই এলাকার থাম লুয়াং নং নন গুহায় আটকা পড়ে ওয়াইল্ড বোয়ার ফুটবল ক্লাবের ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচ। তাদের বয়স ১১ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ গুহাটি থাইল্যান্ডের অন্যতম দীর্ঘ গুহা। এখানে যাত্রাপথের দিক খুঁজে পাওয়া কঠিন। ভারী বর্ষণ আর কাদায় থাম লুয়াংয়ের প্রবেশ মুখ বন্ধ হয়ে গেলে তারা সেখানে আটকা পড়ে। নিখোঁজের পর গুহার পাশে তাদের সাইকেল এবং খেলার সামগ্রী পড়ে থাকতে দেখা যায়। নিখোঁজের নয় দিন পর সোমবার (২ জুলাই) দুইজন বৃটিশ ডুবুরি চিয়াং রাই এলাকার থাম লুয়াং গুহায় তাদের জীবিত সন্ধান পান। ১৭ দিন ধরে তারা সেখানে অবস্থান করছেন।
সৌজন্যে ঃ দৈনিক ইত্তেফাক অনলাইন