কেন ঘনঘন বিদেশিদের শরণাপন্ন হচ্ছে বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপি

যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতসহ ১৯টি দেশের দূতাবাস বা হাইকমিশন থেকে প্রতিনিধিরা বিএনপি নেতাদের আমন্ত্রণে এই বৈঠকে অংশ নেন।


দলের নেত্রী খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ার পর গত সাত মাসের প্রায় প্রতি মাসেই বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে বসেছেন বিএনপি নেতারা।

বিএনপি বলছে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বিদেশি কূটনীতিকদের অবহিত করছেন।

কিন্তু এতে কী উদ্দেশ্য হাসিল হচ্ছে বিএনপির?

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবিসিকে বলেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তারা তাদের অবস্থান সম্পর্কে বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেন।

“লক্ষ্য একটাই – আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জানা উচিত, দেশে কী ঘটছে। এবং এখানে গণতন্ত্রের অবস্থা কী? গণতান্ত্রিক স্পেস কতটুকু আছে। কীভাবে সরকার সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে । এই বিষয়গুলোই আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করি।”

সর্বশেষ বৈঠকে বিএনপি নেতারা তাদের নেত্রীর জেলে থাকা এবং নির্বাচন নিয়েই মূলত: কথা বলেছেন।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, আগামী নির্বাচনের আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে প্রভাবশালী দেশগুলো যাতে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে, সেই প্রত্যাশা থেকে বিএনপি এখন ঘন ঘন কূটনীতিকদের নিয়ে বৈঠক করছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী মনে করেন। এর মাধ্যমে সরকারের উপর যাতে একটা চাপ সৃষ্ট হয়, সেটাই বিএনপির প্রত্যাশা।

“বিএনপি চায় একটা অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ, অবাধ নির্বাচন করতে বিদেশিরা সরকারকে পরামর্শ দেবে। এটা বিএনপি আশা করে।”

বাংলাদেশের রাজনীতিতে যখন যারাই বিরোধী দলে থাকে, তারাই দেশে কোনো বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হলে বিদেশি কূটনীতিকদের শরণাপন্ন হয়।

এমনকী অনেক সময় সরকারের পক্ষ থেকেও বিদেশিদের কাছে বিশেষ কোনো পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। যেমন নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর সরকারের পক্ষ থেকেও বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ করতে দেখা গেছে।

অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশের রাজনীতিতে বাইরের শক্তির প্রভাব এখনও যে আছে, সে বিষয়ে সন্দেহের তেমন কোনো অবকাশ নাই।”

তবে বিএনপি যে কয়েকমাস ধরে নিয়মিত বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে বৈঠক করছে তা নিয়ে সরকারের সিনিয়র মন্ত্রীদেরও অনেকে বলেছেন, বিদেশীদের কাছে দেশের রাজনীতি নিয়ে নালিশ করা হচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব মি: আলমগীর এমন কথা খারিজ করে দিলেন।

“কোনো নালিশের ব্যাপার এটার মধ্যে থাকে না। আমরা শুধু অবহিত করি যে কি ঘটছে এদেশে। এখনতো কোনো দেশই বিচ্ছিন্ন না। একটা টোটাল ভিলেজের মত। সেক্ষেত্রে যারা ডেভেলপমেন্ট পার্টনার আছে, যারা গণতান্ত্রিক দেশ আছে, বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতিশীল দেশ যেগুলো আছে, তাদের আমরা বিষয়গুলো অবহিত করি।”

অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে বিএনপির এই নিয়মিত গণসংযোগ সরকারের উপর কিছুটা হলেও এক ধরণের মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করছে।

বিবিসি বাংলা অনলাইন

শেয়ার করুন