মাঠের খেলায় সফল হবেন কি না, অতীত তাঁকে সেই ভরসা দেয় না। কিন্তু মেক্সিকোর দ্বিতীয় বিভাগের ক্লাব দোরাদোসের দায়িত্ব নিয়ে একটা জায়গায় এখনই বেশ সফল ডিয়েগো ম্যারাডোনা। দারুণ সাড়া জাগিয়েছেন। অবশ্য নামটাও এখানে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
দেড় কোটি টাকা বেতন। সঙ্গে চান প্রতিপক্ষের মাঠে তাঁকে ও খেলোয়াড়দের নিতে ব্যক্তিগত জেট সঙ্গে বিলাসবহুল বাড়ি
একে ক্লাবটা মেক্সিকোর দ্বিতীয় বিভাগের, তার ওপর ১৫ দলের লিগে ১৩ তম। ম্যারাডোনা সেই দলেরই দায়িত্ব কেন নিলেন, সেটির নেপথ্য কারণ শোনা গেছে অনেক। আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির নিজে বলেছেন মাদক-স্থূলতায় অনেক বছর পেরিয়ে যাওয়া জীবনে একটা নতুন শুরু চান। তবে এখন যা শোনা যাচ্ছে, তাতে আর্থিক সুবিধাও বড় একটা কারণ। নতুন ক্লাবে ম্যারাডোনার দাবিদাওয়ার যে ফিরিস্তি, সেটি অনেক ব্যয়বহুল!
১১ মাসের চুক্তি তাঁর, দোরাদোসকে প্রথম বিভাগে ওঠাতে পারলে যেটি নবায়ন হবে। এবারের লিগে প্রথম ছয় ম্যাচে একটাও জয় না পাওয়া দোরাদোসের প্রথম বিভাগে ওঠার সম্ভাবনা এই মুহূর্তে যেমন ক্ষীণতম, ম্যারাডোনার চুক্তি নবায়নের সম্ভাবনাও তেমনই। তা চুক্তি নবায়ন হোক বা না হোক, ম্যারাডোনার পকেট এই ১১ মাসে গরম হবে অনেক। তাঁর বেতন প্রতি মাসে ১ লাখ ৩৮ হাজার পাউন্ড। বাংলাদেশি টাকায় ১ কোটি ৫০ লাখেরও বেশি।
এ তো গেল বেতন, এর বাইরে আর্জেন্টাইন ‘ফুটবল ঈশ্বর’কে তুষ্ট করতে আরও অনেক খরচ হচ্ছে দোরাদোসের। আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম ইনফোবে জানাচ্ছে, প্রতিপক্ষের মাঠে প্রতিটি ম্যাচে তাঁর ও দলের আনা-নেওয়ার জন্য একটা ব্যক্তিগত বিমান চেয়েছেন ম্যারাডোনা। বাসে ভ্রমণ গ্রহণযোগ্য নয়, নয় সাধারণ বিমানে ইকোনমি-বিজনেস আসনও। দলের বাইরে নিজের জন্য চাওয়া, ক্লাবটা যে অঞ্চলে, সেই সিনালোয়া রাজ্যের কুলিয়াচানের অভিজাত এলাকা লা প্রিমাভেরায় একটা বিলাসবহুল বাড়ি, যাতে থাকবে সুইমিংপুল।
সেখানে গৃহপ্রবেশে একটু ঝামেলা অবশ্য হয়েছে। ওই এলাকার মানুষ নাকি ম্যারাডোনাকে প্রতিবেশী হিসেবে চাইছেন না! সংবাদমাধ্যমের খবর, গত সপ্তাহে ম্যারাডোনার বাড়ির জন্য যেসব আসবাব নেওয়া হচ্ছিল, সেগুলোও নিজেদের এলাকায় ঢুকতে দেননি লা প্রিমাভেরার মানুষ। আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির আপাতনিবাস তাই লুসেরনা নামের চার তারকা হোটেল, যেখানে তাঁর সার্বক্ষণিক সঙ্গী একজন দেহরক্ষী।
তবে মাঠের বাইরে তাঁর জীবনযাপন যেমন, মাঠে ততটাই আকর্ষণীয় ফুটবল দলকে খেলানোর ইচ্ছা পোষণ করেন ম্যারাডোনা। আর্জেন্টিনা জাতীয় দল বা মেক্সিকো আসার আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আল-ফুজাইরা ও আল-ওয়াসল ক্লাবে তাঁর রেকর্ড যা-ই হোক, ম্যারাডোনার চোখ এবার জয়ে, ‘আমরা প্রতিটি ম্যাচে জয়ের লক্ষ্যেই খেলব। কারণ রক্ষণাত্মক ফুটবল আমার পছন্দ নয়।’ পয়েন্ট তালিকার নিচের দিকে থাকা দোরাদোসের দায়িত্ব নেওয়াটাও ম্যারাডোনার চোখে, ‘কাঁধে হাতি বয়ে বেড়ানোর মতো।’
যে কাজে শুরুর দিন থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। এখানে এসে মাদকে ভরা জীবনের স্মৃতিগুলোকে ঝেঁটিয়ে যে বিদায় করতে চান, সেটি তো দায়িত্ব নেওয়ার দিনই জানিয়েছিলেন, ‘জীবনে অনেক ভুল করেছি আমি। এই দায়িত্বটা আমার কাছে ছোট্ট একটা বাচ্চাকে বাহুতে বয়ে নিয়ে বেড়ানোর মতো। যখন মাদক নিতাম…সেটা আমাকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। ফুটবল এখন সামনে এগোনোর মন্ত্র।’ যদিও তাঁর এই ‘প্রতিজ্ঞা’ নিয়ে হাসাহাসি হচ্ছে অনেক। সিনালোয়া যে বলতে গেলে মাদকের আখড়া! সিনালোয়ার মাদক ব্যবসায়ীরাই মেক্সিকোর ভয়ংকরতম মানুষ। আর দোরাদোসের মালিক সেখানকার শক্তিশালী সংগঠন ‘হ্যাঙ্ক ক্ল্যান’, মাদক পাচারকারীদের সঙ্গে যাদের সখ্য।
এসব ‘মানুষ যা ইচ্ছা তা-ই বলতে পারে’ জানিয়ে এক পাশে ফেলে রাখছেন ছিয়াশির বিশ্বকাপজয়ী নায়ক। তাঁর মুখে বরং কঠোর পরিশ্রমের গান। সেটি কতটা? ছিয়াশির বিশ্বকাপের আয়োজক মেক্সিকোতে এসেও ম্যারাডোনা জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি মোটেও অতীত আঁকড়ে থাকতে রাজি নন, ‘আমরা এখানে ঘুরে বেড়াতে আসিনি। ছুটিতেও আসিনি। কাজ করতে এসেছি। সবাই মিলে একসঙ্গে জিততে অনেক ভালো লাগবে।’