করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই বন্ধের সময়টাতে দেশের বিভিন্ন পর্যটনপ্রধান জেলাগুলোতে পর্যটক সমাগম বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তাতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও বেড়েছে।
দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে গেলে পার্বত্য জেলাগুলোতেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ভীতি তৈরি হয়েছে অনেকের মধ্যে।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা। এই পরিস্থিতেতে প্রশাসন, সুশীল সমাজ এবং এলাকার নাগরিকরা কে কী ভাবছেন তা জানতে আমরা কথা বলেছিলাম বেশ কয়েকজনের সাথে।
বান্দরবান প্রেস ক্লাবের সভাপতি মনিরুল ইসলাম মনু বলেন, ‘সরকার জনসমাগম এড়াতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। এই সময়ে অনেক পর্যটক যদি অবাধে বান্দরবান ভ্রমণে চলে আসেন, তাহলে সরকারের সেই পদক্ষেপ বাধাগ্রস্থ হবে। পার্বত্য জেলাগুলোতেও করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যাবে। এবং এখানকার জনগণের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।’
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দাউদুল ইসলাম জানান, ‘বাংলাদেশে বসবাস করেন এমন কোনো ব্যক্তি এখনো করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হননি। ফলে পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখার এখনো কোনো চিন্তাভাবনা নেই। তবে আমরা ইতোমধ্যে বিদেশি পর্যটকদের বান্দরবানে আসাকে নিরুৎসাহিত করছি।’
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক এ.কে.এম. মামুনুর রশিদ বলেন, ‘পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ ঘোষণা করার জন্যে সরকারের উচ্চ মহল থেকে লিখিত কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি। তবে জনসমাগম এড়াতে পর্যটকদেরকে রাঙামাটি ভ্রমণে আসতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।’
রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা বলেন, ‘রাঙামাটি যেহেতু পর্যটন এলাকা, সেহেতু পর্যটকদের মাধ্যমে এখানেও করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়। সাংবাদিকদের মাধ্যমে আমরা সারা দেশের পর্যটকদের অনুরোধ করতে চাই, এই সময়টাতে অন্ততঃ তারা যেন রাঙামাটিতে বেড়াতে না আসেন।’
রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল মনে করেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব না কমা পর্যন্ত অন্য জেলার পর্যটকদের রাঙামাটিতে না আসা উচিত। আবার রাঙামাটির লোকজনও খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া যেন অন্য কোথাও ভ্রমণ না করেন। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী এবং সংশ্লিষ্ট সবাই মিলে পর্যটনকে আপাততঃ নিরুৎসাহিত করা দরকার আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সেক্রেটারি ও গণমাধ্যমকর্মী মুহাম্মদ আবু দাউদ বলেন, ‘স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক পরিবার পার্বত্য জেলাগুলোর বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ভ্রমণের পরিকল্পনা করে থাকতে পারেন। বহু লোকের সমাগম হতে থাকলে পাহাড়ি এলাকায়ও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়বে। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় সাজেকসহ অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলো আপাততঃ বন্ধ রাখা উচিত।’
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস গণমাধ্যমকর্মীদেরকে জানান, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে পর্যটনসংশ্লিষ্টদের সতর্ক করা হবে।’
তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখা কিংবা অন্য কোনো পদক্ষেপ এখনো চোখে পড়েনি বলে জানিয়েছেন সাংবাদিক আবু দাউদ।
বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে সপ্তাহের বৃহষ্পতি, শুক্র ও শনিবার বিপুল সংখ্যক পর্যটক বেড়াতে যান। এছাড়া সরকারি ছুটি ও স্কুল-কলেজের টানা ছুটি থাকলে জেলাগুলোতে পর্যটক সমাগম আরো বেড়ে যায়।